Logo
শিরোনাম

ফ্লোরিডার দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইদালিয়া’

প্রকাশিত:সোমবার ২৮ আগস্ট ২০২৩ | হালনাগাদ:শনিবার ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | ২২৭৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া গ্রীস্মমন্ডলীয় ঝড় ইদালিয়ার  প্রভাবে দক্ষিণ পূর্ব মেক্সিকোতে তীব্র বাতাস ও বৃষ্টি দেখা দিয়েছে। এদিকে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সপ্তাহের শেষ দিকে ফ্লোরিডা পৌঁছানোর আগে এটি শক্তিশালী হারিকেনে রূপ নেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) বলেছে, ফ্লোরিডার উত্তর পশ্চিমে পৌঁছানোর আগে ঝড়টি মেক্সিকো উপসাগর দিয়ে বয়ে যাবে, কিন্তু মেক্সিকোতে আঘাত হানবে না।

এনএইচসি আরো বলছে, ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূল জুড়ে ইদালিয়া শক্তিশালী হারিকেনের মতো বয়ে যাবে। এর প্রভাবে প্রাণহানিরও আশংকা রয়েছে।

ক্যারিবীয় অঞ্চলে ঘুরপাক খাওয়া ইদালিয়া রোববার ২১০০ জিমটিতে ৬৫ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাচ্ছিল। ইদালিয়ার প্রভাবে মেক্সিকোর পূর্বাঞ্চলীয় ইউকাটানের কিছু অংশে এবং কিউবার পশ্চিমাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টির আশংকা করা হচ্ছে।


আরও খবর



মানহানির ৫ মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬১৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মানহানির পাঁচ মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন আদালত। জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকীর করা ভুয়া জন্মদিন পালন ও মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করার অভিযোগে মামলাসহ মানহানির পাঁচ মামলায় খালাসের এ রায় দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পৃথক দুই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে এসব মামলায় খালাস দেন। এর মধ্যে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালত চারটি এবং অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত একটি মামলায় খালাস দেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বিষয়টি জানিয়েছেন।

জানা যায়, এদিন মামলাগুলো শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারিত ছিল। তবে মামলার বাদীরা আদালতে হাজির হননি। একাধিক মামলার বাদী এবি সিদ্দিক মারা গেছেন। এ অবস্থায় খালেদা জিয়াকে মামলা থেকে খালাসের আবেদন করেন তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ। পরে আদালত তাকে মামলাগুলো থেকে খালাস দেন।

মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করার অভিযোগে করা মামলার বিবরণীতে বলা হয়, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোট করে নির্বাচিত হয়ে সরকারের দায়িত্ব নেন খালেদা জিয়া। তিনি রাজাকার-আলবদর নেতাদের মন্ত্রী-এমপি বানিয়ে তাদের বাড়ি-গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা তুলে দেন।

২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মানহানির এ মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এবি সিদ্দিকী। আদালত ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

পরের বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও থানার পুলিশ পরিদর্শক মশিউর রহমান (তদন্ত) অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। মামলার অন্য আসামি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মৃত মর্মে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগের মামলায় বলা হয়, খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন নিয়ে ১৯৯৭ সালে দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসএসসি পরীক্ষার মার্কশিট অনুযায়ী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জন্মতারিখ ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর।

১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একটি দৈনিকে তার জীবনী নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জন্মদিন ১৯৪৫ সালের ১৯ আগস্ট লেখা হয়। আর বিয়ের কাবিননামায় জন্মদিন উল্লেখ করা হয় ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট। সর্বশেষ ২০০১ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনুযায়ী খালেদা জিয়ার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ আগস্ট।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, বিভিন্ন মাধ্যমে তার পাঁচটি জন্মদিন পাওয়া গেলেও কোথাও ১৫ আগস্ট জন্মদিনের তথ্য পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তিনি পাঁচটি জন্মদিনের একটিও পালন না করে ১৯৯৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন জাতীয় শোক দিবসে (১৫ আগস্ট) আনন্দ-উৎসব করে কেক কেটে জন্মদিন পালন করে আসছেন।

ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাজী জহিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই এ দুই মামলায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন।


আরও খবর



রেমিট্যান্স চোরাকারবারিদের পেটে, হুন্ডিতে তছনছ রিজার্ভ!

প্রকাশিত:সোমবার ০২ সেপ্টেম্বর 2০২4 | হালনাগাদ:সোমবার ০২ সেপ্টেম্বর 2০২4 | ৮৩০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বিগত ১৫ বছরে অবৈধ হুন্ডিতে তছনছ হয়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সূত্র বলছে- প্রবাসীদের রক্তে-ঘামে অর্জিত রেমিট্যান্স গেছে চোরাকারবারিদের পেটে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন ডলারের বদলে পাচার হয়ে প্রতিদিন দেশে ঢুকেছে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সেনা। এই সোনার বড় অংশ পুনরায় পাচার হয়েছে দেশের স্থল ও নৌপথে অন্য দেশে। একইভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে প্রতিবছর দেশে আসছে হাজার হাজার কোটি টাকার হীরা ও হীরাসদৃশ বস্তু। সোনা আর হীরার বৈধ আমদানি নামমাত্র হলেও, চোরাচালানের মাধ্যমে বছরে ৯১ হাজার কোটি টাকা হুন্ডিতে পাচার হওয়ার তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুস।

এ পরিস্থিতিতে অংশীজনরা বলছেন, হুন্ডিতে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে নতুন সরকারকে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের অনুসন্ধান ও বিদেশে গোয়েন্দা নজরদারির তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, অব্যাহত ডলার সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও  সংকট কাটছে না ডলার সংকট। ফলে ব্যাংকগুলো সময়মতো এলসি খুলতে পারছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ডলার সংকটের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে জ্বালানি খাতে। জ্বালানির মূল্য বাড়ার কারণে সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়েছে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে হুহু করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, আগস্ট মাসে প্রবাসীরা ২২২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুন মাসে আসে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।

 এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু  বলেন, অর্থনীতিতে হুন্ডি বড় ফ্যাক্টর। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়েও বেশি আসে হুন্ডিতে। সরকার মুদ্রা মান ম্যানুয়ালি করায় হুন্ডিতে উৎসাহিত হন প্রবাসীরা। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেমিট্যান্সের প্রকৃত প্রতিফলন নেই। রিজার্ভের অর্থ হুন্ডিতে আসার ফলে সোনা চোরাচালানসহ সব ধরনের চোরাকারবারি বেড়ে যায়। এই সংকট উত্তরণে নতুন সরকারকে মুদ্রামান যথাযথ রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। কেন ৯১ হাজার কোটি টাকার সোনা ও হীরা চোরাচালান হচ্ছে তা সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এ কাজে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে অর্থনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের পুনরাবৃত্তি হবে।

 এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ডলারের  ক্ষেত্রে ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডিতে বাড়তি দর পাওয়ায় প্রবাসীরা উৎসাহী হন। হুন্ডির সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত। এ চক্রের সঙ্গে আছে  দেশি চোরাকারবারিরা। এদের ধরতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) সক্রিয় হতে হবে। দেশি চক্রকে ধরা বিএফআইইর পক্ষে কঠিন নয়। চোরাচালানে সোনা কীভাবে আসে তা খতিয়ে দেখতে হবে। সোনা চোরাচালান বন্ধে কেন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, সেটাও বেরিয়ে আসবে দেশি চক্রের সদস্যদের ধরতে পারলে। পাচার হওয়া সোনা কীভাবে দেশে আসছে, সেই পথ বন্ধ করতে হবে। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে চোরাচালান বন্ধের বিকল্প নেই।

সর্বশেষ গত ৩ জুন সোনা ও হীরা চোরাচালানে বছরে ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা পাচার হওয়ার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে বাজুস বলেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০টি জেলার সীমান্ত অবস্থিত। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলা সোনা চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। ভারতে পাচার হওয়া সোনার বড় একটি অংশ এসব জেলার সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে থাকে। বাজুসের প্রাথমিক ধারণা- প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে প্রতিদিন সারা দেশের জল, স্থল ও আকাশ পথে কমপক্ষে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ সোনার অলংকার, সোনার বার, ব্যবহৃত পুরনো জুয়েলারি (যা ভাঙ্গারি হিসেবে বিবেচিত হয়) ও হীরার অলংকার (ডায়মন্ড জুয়েলারি) চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। যা ৩৬৫ দিন বা এক বছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বা তার অধিক। এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ২২০ কোটি টাকার সোনা ও গয়না এবং ৩০ কোটি টাকার হীরা ও হীরার অলংকার বাংলাদেশে আসছে। সে হিসাবে ৩৬৫ দিন বা এক বছরে ৮০ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সোনা ও ১০ হাজার ৯৫০ কোটি টাকার হীরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে আসছে। এই পুরো টাকাটাই হুন্ডির মাধ্যমে সোনা ও হীরা চোরাকারবারিরা বিদেশে পাচার করে থাকে। যার ফলে সরকার রেমিট্যান্স হারাচ্ছে এবং সোনা ও হীরা চোরাকারবারিরা তাদের অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে যাচ্ছে। দেশে চলমান ডলার সংকটে প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার অর্থ পাচার ও চোরাচালান বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

বাজুস চোরাকারবারিদের ধরতে সুপারিশে বলেছে, সোনা ও হীরা চোরাচালানে জড়িতদের ধরতে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার জোরালো অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। সোনা ও হীরা চোরাচালান প্রতিরোধে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠন করা জরুরি। বাজুস মনে করে, দেশে অবৈধভাবে আসা সোনা ও হীরার  সিকি ভাগও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরে আসছে না। ফলে নিরাপদে দেশে আসছে চোরাচালানের বিপুল পরিমাণ সোনা ও হীরার চালান। আবার একইভাবে পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশ সোনা চোরাচালানের বড় রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিয়মিত কড়া নজরদারি প্রয়োজন।

 দেশে চলমান ডলার সংকট ও অর্থ পাচারের সঙ্গে সোনা চোরাচালানের সিন্ডিকেটের সুসম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে সোনার বাজারের অস্থিরতার নেপথ্যে জড়িত চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কাস্টমসসহ দেশের সব আইন- প্রয়োগকারী সংস্থার জোরালো অভিযান ও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সোনার বাজারে শৃঙ্খলা আনতে কঠোর অভিযানের বিকল্প নেই। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সোনা চোরাচালানের ক্ষেত্রে আলোচিত জেলাগুলোতে চিরুনি অভিযানের দাবি করছে বাজুস। এ প্রসঙ্গে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের (পিইবি) চেয়ারম্যান এম. মাশরুর রিয়াজ বলেন, রেমিট্যান্স বৈধ চ্যানেলে বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। প্রবাসী শ্রমিকদের আয়ের বেশির ভাগ অর্থই হুন্ডিতে আসে। হুন্ডি বন্ধে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দর বাড়াতে হবে। বৈধপথে কীভাবে প্রবাসী আয় তাদের পরিবারের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। এই পদক্ষেপের ফলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সোনা আসে, সেটা অনেকাংশে কমবে।

 বাজুসের মুখপাত্র ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, হুন্ডি বন্ধ করতে চাইলে প্রথমেই সোনা চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা জরুরি। এ ছাড়া ব্যাগেজ রুলের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। দেশে বড় আকারের বিদেশি সোনা এবং হীরার অলংকার কোথা থেকে কীভাবে আসে, এই সোনার বৈধ উৎস কী, কোনো বৈধ কাগজপত্র আছে  কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে।

 বৈদেশিক মুদ্রা ও চোরাচালান বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শাহ্ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর  ও সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে প্রচুর সোনার বার, অলংকার ও হীরা খচিত অলংকার দেশে প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে বিমানে কর্মরত কর্মীরাও সম্পৃক্ত থাকার বেশ কয়েকটি ঘটনায় প্রমাণ পাওয়া যায়। সাধারণত বিমানবন্দর দিয়ে ছাড় হওয়ার পর কর্মীরা বাস ও ট্রেনযোগে ঝিনাইদহের মহেশপুর ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে থাকে। সোনা চোরাকারবারিরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদেশ থেকে সোনার বার আনছে। উদ্বেগজনক তথ্য হলো- গত কয়েক মাসে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী থেকে প্রায় ২৬ কেজি চোরাচালানের সোনা জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৬ কোটি টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির তথ্যানুযায়ী ২০২৩ সালে ১০১ দশমিক ৮৯ কোটি টাকার সোনা জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিজিবি সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ৯২৫ দশমিক ৯১৯ কেজি চোরাচালানের সোনা জব্দ করে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিজিবি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে ২৭ দশমিক ৭১৩ কেজি চোরাচালানের সোনা জব্দ করা হয়। ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিজিবির হাতে গ্রেফতার আসামির সংখ্যা ২৯০ জন এবং দায়ের করা মামলার সংখ্যা ২৮৯টি। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য থাকে যে, আসামি ও মামলার পরবর্তী কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। গত ১০ বছরে শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টম হাউস, বিজিবি, পুলিশ ও এয়ারপোর্ট এপিবিএন সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২ হাজার ৫৮৩ কেজি সোনা জব্দ করে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, এই সোনা যদি আনুষ্ঠানিক পথে আমদানি করা হতো তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ২২ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ জমা হতো, যা থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণ হতো প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এপিবিএনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এপিবিএন বিগত কয়েক বছরে ১৩১ দশমিক ১১০ কেজি সোনার বার, অলংকার জব্দ করেছে যার বর্তমান বাজারদর ১৩০ কোটি ৪৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

 ঢাকা কাস্টমস হাউসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমেই ২০২০ সালে ২ দশমিক ৭৭৫ টন, ২০২১ সালে ২৫ দশমিক ৬৮৯ টন, ২০২২ সালে ৩৫ দশমিক ৭৩৩ টন এবং ২০২৩ সালে ৩১ দশমিক ৪৬৮ টন সোনার বার ব্যাগেজ রুলের আওতায় আমদানি হয়েছে। কাস্টমসের তথ্যমতে, ২০২০ থেকে ২০২২ সালে শিল্পে ব্যবহারের জন্য ৪টি চালানে ২ কেজি ১৬০ গ্রাম ডায়মন্ড আমদানি করা হয়েছে। তবে ডায়মন্ডের অলংকার আমদানি হয়নি। গত ১৯ বছরে যত ডায়মন্ড আমদানি হয়েছে, তার ৮৭ শতাংশই আনা হয়েছে ভারত থেকে। ভারতের গুজরাটের সুরাটে বিশ্বের ৬৫ শতাংশের বেশি হীরা কাটিং ও পলিশিং করা হয়। খুব সহজে বহন করা যায় বলে দেশটি থেকে অবৈধভাবে হীরা আসছে বলে অনেকের ধারণা।

 বিজিবি জোয়ানরা ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচারের সময় বিগত কয়েক বছরে কয়েকটি চালান জব্দ করেছে। ২০২১ সালে সাতক্ষীরা সীমান্তে পৌনে ২ কোটি টাকার ১৪৪টি হীরার গয়না জব্দ করেছে বিজিবি। ২০১৮ সালে ৭০ লাখ টাকার হীরার গয়না জব্দ করা হয়। অবৈধ পথে হীরা আমদানির বড় কারণ শুল্ক ফাঁকি। হীরা আমদানিতে শুল্ককর অনেক বেশি। যেমন বন্ড সুবিধা ছাড়া অমসৃণ হীরা আমদানিতে কর ৮৯ শতাংশ। মসৃণ হীরা আমদানিতে কর প্রায় ১৫১ শতাংশ। এই শুল্ককর ফাঁকি দিতেই মূলত অবৈধ পথে বিপুল পরিমাণ হীরা আসছে। গত ১৯ বছরে এই মূল্যবান রত্ন আমদানিতে সরকার মাত্র ১২ কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- দেশের হীরার বাজার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার। এই হীরার বাজার পুরোটাই চোরাচালান নির্ভর হয়ে আছে। সোনা চোরাচালানের খবর পাওয়া গেলেও, আমরা হীরা চোরাচালানের খবর না পাওয়া রহস্যজনক। হীরা চোরাচালানের সঙ্গে কারা জড়িত, তাও দ্রুত চিহিৃত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো ভূমিকা প্রয়োজন বলে মনে করছে বাজুস।

 মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২ ধারায় সোনা চোরাচালানকে মানি লন্ডারিংয়ের সম্পৃক্ত অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। আইনে সেখানে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ২০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, অপরাধীর মূল হোতা আড়ালে থেকে যায় এবং ধরা পড়ে চুনোপুঁটিরা। কিন্তু সেক্ষেত্রেও আইনের বেড়াজালে জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে চুনোপুঁটির দল। ফলে চোরাচালান চলছে তাদের নিজস্ব গতিতেই। বিগত ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ মন্তব্য করে বলেছেন- জনগণের টাকা আত্মসাৎ, লুটপাট ও পাচারকারীদের স্যুট ডাউন করা উচিত। অর্থ পাচারকারীরা জাতির শত্রু। অর্থ লুটপাট, পাচারের মামলার সামারি ট্রায়াল (দ্রুত বিচার) হওয়া উচিত।


আরও খবর

বাড়ল এলপি গ্যাসের দাম

সোমবার ০২ সেপ্টেম্বর 2০২4

এলপিজির দাম আরও বাড়ল

বৃহস্পতিবার ০২ নভেম্বর 2০২3




১৫ বছরে ভুয়া কাগজে ব্যাংক লুট

প্রকাশিত:বুধবার ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮৪৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বিগত ১৫ বছরে ঋণের জামানত হিসেবে জমি আর ফ্ল্যাটের ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ব্যাংক খাতে মহালুটপাট হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্রমতে, ব্যাংকে বন্ধক রাখা সম্পদ বিক্রি করেও খেলাপি ঋণের অর্থ আদায় করতে পারেনি অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক।

অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংক আর ক্রেতা যোগসাজশে ঋণের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সম্পত্তি বন্ধক রেখে নেওয়া ঋণের অডিট প্রয়োজন। আর্থিক খাতের দুর্বৃত্তায়ন ঠেকাতে অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সংস্কারও নিশ্চিত করতে হবে বলে মনে করেন অংশীজনেরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, খেলাপি ঋণ ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ হওয়া ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট বা বিআইবিএম ২০২৩ সালে ক্রেডিট অপারেশনস অব ব্যাংকস শীর্ষক গবেষণায় বলছে, গত বছরের জুন শেষে জমি বন্ধক রেখে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ২০ হাজার ৯০৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিশাল অঙ্কের এ ঋণের ৬৩ দশমিক ৬৮ শতাংশই জমি-ফ্ল্যাট-বাড়িসহ রিয়েল এস্টেট সম্পত্তি বন্ধক রেখে নেওয়া হয়েছে। অতীতে এসব তথ্য একাধিকবার গণমাধ্যমে উঠে এলেও সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য মৌলিক সংস্কার দরকার। বড় বড় ব্যবসায়ীদের কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর নেই। কিন্তু তাঁদের মধ্যে অনেকেই ইচ্ছাকৃত খেলাপি। এ ধরনের খেলাপি সংস্কৃতি দূর করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যাঁরা ভুয়া জামানত, একই জামানত একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বন্ধক রেখে ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা বিরাট চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর এসব বিষয়ে কাজ হাতে নিয়েছেন। যদিও কাজটি অনেক কঠিন, তবে করা সম্ভব। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন- এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে যাঁরা ব্যাংকের অর্থ লুটপাট করেছেন, তাঁদের শক্ত হাতে দমন করতে হবে। জড়িত গ্রাহক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।

এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। একটি দেশের ব্যাংক খাত এভাবে ধ্বংস হতে পারে না। সরকারের উচিত হবে অন্যায়কারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, যা দেখে ভবিষ্যতে কোনো অসাধু ব্যক্তি জনগণের গচ্ছিত আমানত ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করতে না পারেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঋণের নামে অর্থ লুটপাটের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সংগতি রেখেই জমি বন্ধক রেখে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ বের করা অপেক্ষাকৃত সহজ। সরকারি খাসজমি, বিতর্কিত মালিকানার জমি বন্ধক রেখেও ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ বের করে নেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংক কর্মকর্তারা সহযোগীর ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবশালীদের বন্ধকি জমির মূল্য কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। এ কারণে জামানতের সম্পদ বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় সম্ভব হচ্ছে না।

বিআইবিএমের ওই গবেষণার তথ্য বলছে, জামানতের সম্পদ বিক্রি করে দেশের ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের মাত্র ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ আদায় করতে পারছে। সে অনুযায়ী, জামানত থাকার পরও অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে ৮৭ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ। জামানত বিক্রি করে অবলোপন করা ঋণ আদায়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ। জামানতের সম্পদ বিক্রি করে ঋণ আদায় সম্ভব না হলেও ব্যাংকগুলো জমি-বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে। এক যুগ আগে ২০১০ সালে জমি বন্ধকের বিপরীতে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময় বিতরণকৃত মোট ঋণের ৪৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

ওই গবেষণায় বলা হয়, দেশের ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে জামানতকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিলেও বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না। ব্যাংকের কাছে বন্ধক থাকা সম্পদ বিক্রি করে মাত্র ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ খেলাপি ঋণ আদায় সম্ভব হয়েছে। আর ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে আদায়কৃত খেলাপি ঋণের হার ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায়-অযোগ্য হয়ে যাওয়া খেলাপি ঋণ অবলোপন করছে ব্যাংকগুলো। জামানতের সম্পদ বিক্রি করে অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের হার মাত্র ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে দেওয়া অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের হার মাত্র ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বলে প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতের ঋণের স্থিতির বিপরীতে রাখা গ্রাহকের জামানতের ৬৩ দশমিক ৬৮ শতাংশই ছিল স্থাবর সম্পত্তি। যদিও এক যুগ আগে ২০১০ সালে এ হার ছিল ৪৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এক যুগ ধরেই ঋণের বিপরীতে জমি বন্ধক রাখার প্রবণতা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। দেশের ব্যাংক খাতের জামানতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ হলো ব্যাংক গ্যারান্টি। এ ছাড়া ব্যাংক জামানতের ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ ফাইন্যান্সিয়াল অবলিগেশনস, ৫ দশমিক ১২ শতাংশ রপ্তানি ডকুমেন্টস ও পণ্যদ্রব্য, ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ মেশিনারি যন্ত্রপাতি ও ফিক্সড্ অ্যাসেট, শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজসহ অন্যান্য সম্পত্তি ঋণের বিপরীতে জামানত রয়েছে। গত জুন শেষে ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত ঋণের মোট স্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭২ কোটি টাকা।

সূত্র জানান, দেশের ব্যাংক খাতের আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলোয় জামানতের স্থাবর সম্পত্তিকে অতিমূল্যায়িত করে দেখানোর বিষয়টি ধরা পড়েছে। হলমার্ক, ক্রিসেন্ট, বিসমিল্লাহ গ্রুপের জালিয়াতি ধরা পড়লেও এসব গ্রুপের জামানতের সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আদায় সম্ভব হয়নি। দফায় দফায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেও ক্রেতা মেলেনি কেলেঙ্কারিতে যুক্ত গ্রুপগুলোর জামানতের সম্পদের। ব্যাংক খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়া অন্য গ্রুপগুলোর জামানতের সম্পদের পরিস্থিতিও একই। সূত্র জানান, বিভিন্ন সময় রাজধানী ঢাকা ও পাশের বিভিন্ন এলাকার সরকারি খাসজমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ বের করে নেওয়ার অসংখ্য ঘটনা সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ সারা দেশেই বিতর্কিত ও সরকারি জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণের ঘটনাও প্রকাশ হয়েছে। এসব প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, জামানত হিসেবে ব্যাংকগুলোর কাছে যে জমি বন্ধক আছে, তার বৃহৎ অংশই বিতর্কিত। নদী, নদীর চর, শিকস্তি (নদীতে ভেঙে যাওয়া) ভূমি, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি ও বন, পাহাড়, রেলওয়েসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জমি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখেছেন প্রভাবশালী গ্রাহকরা। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের জায়গা দখল করে অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছিলেন মিরপুরের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক রাজনীতিক। দখলকৃত ওইসব জায়গা বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকে জামানত দিয়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। সুদসহ সে ঋণ এখন সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। দখলকৃত জায়গা উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। যদিও উদ্ধারকৃত জায়গার বড় অংশই আবার ব্যাংকের কাছে জামানত রয়েছে।

সূত্র আরও জানান, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সহরটোক মৌজার পাঁচটি দাগের এক একরের বেশি জমি জামানত নিয়েছে দেশের বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক। এর বিপরীতে একটি নামসর্বস্ব আবাসন কোম্পানিকে ২৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। বন্ধকি সম্পত্তির পুরোটাই ব্রহ্মপুত্র নদের চালা ও শিকস্তি ভূমি। ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ, দোহার, ডেমরা, সাভারসহ পাশের জেলাগুলোয় রয়েছে বিপুল পরিমাণ সরকারি খাসজমি। পাশাপাশি ওয়াক্ফ স্টেটেরও বিপুল পরিমাণ জমি রয়েছে এসব এলাকায়। অথচ সরকারি ও ওয়াক্ফকৃত এসব সম্পত্তির বড় অংশই বিভিন্ন ব্যাংকে জামানত দিয়েছেন প্রভাবশালী গ্রাহকরা। বিপরীতে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো। এ পরিস্থিতিতে বিতর্কিত জমি বন্ধক রেখে বিতরণকৃত ব্যাংক ঋণের কতটুকু ফিরে আসবে, তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।

সৌজন্যে বাংলাদেশ প্রতিদিন

নিউজ ট্যাগ: ব্যাংক লুট

আরও খবর



শেখ হাসিনার সঙ্গে হত্যা মামলার আসামি দিলীপ ও দোলন

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮৬৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ধানমন্ডি এলাকায় শুভ নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের এমডি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান দোলনসহ ১৩৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।

সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে ভিকটিমের মা রেনু মামলাটি করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, সাবেক সংসদ সদস্য ফেরদৌস আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হক সাচ্চু, সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন, অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল, নূর আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাবেক প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান দোলন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই ধানমন্ডি থানাধীন ৩ নম্বর রোডে গুলিবিদ্ধ হন শুভ। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।


আরও খবর



মুখোশের আড়ালে দিলীপ আগরওয়ালার মাফিয়া সাম্রাজ্য

প্রকাশিত:শনিবার ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫৭০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

মানবিকতার ফেরিওয়ালা সেজে মুখোশের আড়ালে সোনা চোরাচালানের অপ্রতিরোধ্য নায়ক হয়ে ওঠা দিলীপ আগরওয়ালার উত্থান সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে উঠে আসা সাধারণ দিলীপ আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতা, নারী আর সোনা চোরাচালানকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যান। আর এটিকেই নিজের অর্থবিত্ত আর অবৈধ সম্পদের সিঁড়ি বানিয়ে হয়ে ওঠেন অপরাধজগতের বেপরোয়া মাফিয়া। নিজেকে বড় আওয়ামী লীগার পরিচয়ে সভা-সমাবেশে, বক্তব্যে অনিয়ম-দুর্নীতি, মাদক ও চোরাচালানের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে সততার বন্দনা করেছেন অবিরাম।

অথচ আড়ালে ছিলেন অন্ধকারজগতের কারিগর। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের নাম ভাঙিয়ে গত দেড় দশকে গ্রামের সাধারণ দিলীপই হয়ে ওঠেন হাজার কোটি টাকার মালিক।

সরেজমিন চুয়াডাঙ্গা ঘুরে ও তাঁর এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্যই পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, দিলীপ আগরওয়ালার মুখোশের আড়ালের ছবিটি সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানতেন না।

সবার চোখে ধুলা দিয়ে চোরাকারবারির কালো অধ্যায় গড়ে তুলেছেন র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আওয়ামী লীগ নেতা দীলিপ কুমার আগরওয়ালা। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে বন্ধু ওয়াজ কুরুনি টিটুর সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন দিলীপ। ঠিকাদারি ব্যবসায় সুবিধা করতে না পারলেও নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে জনরোষের শিকার হয়ে পালিয়ে যান ঢাকায়। সেখানে গিয়ে তাঁর কাকা পবন আগরওয়ালার সঙ্গে সিনেমার কাজ শুরু করেন।

সেই সুবাদে তখনকার উঠতি বয়সী মডেল-নায়িকাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন দিলীপ। সিনেমা ব্যবসার পাশাপাশি রাজধানীতে সোনার দোকান ছিল পবনের। সেই ব্যবসার কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পান দিলীপ। চতুর দিলীপ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিশেই সোনা ব্যবসার গোমর জেনে যান। কৌশলে বাড়তি অর্থ আয়ের পথ খুঁজে বের করেন তিনি।

সীমান্তবর্তী এলাকায় জন্ম নেওয়া দিলীপের চোরকারবারিদের সঙ্গে কৈশোর থেকেই চেনাজানা ছিল। ফলে সহজেই সীমান্তবর্তী চৌগাছা, মহেশপুর ও জীবননগরের বিভিন্ন পয়েন্টের কারবারিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। প্রথম দিকে ব্যবসায় সুবিধা করতে পারছিলেন না দিলীপ। এরপর কৌশল হিসেবে উঠতি বয়সীদের নিয়ে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। যারা বিনিয়োগের জন্য অর্থের সংস্থান করে। সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ধীরে  ধীরে ব্যবসার সম্প্রসারণ করেন তিনি।

সূত্র বলছে, ব্যবসার শুরুতে পবনের দোকান থেকে দুবাই, সিঙ্গাপুর থেকে পাচার হওয়া সোনা সংগ্রহ করতেন ব্যবসায়ীরা। ধীরে ধীরে এই ব্যবসা প্রসার হতে থাকে। ২০০৫ সালের দিকে কৌশলে পবনের প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়ে গড়ে তোলেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন আমলা-মন্ত্রীদের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এমনকি তাঁদের মনোরঞ্জনের জন্য উঠতি বয়সী মডেল ও নায়িকাদের ব্যবহার করতে থাকেন। এরপর দিলীপকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্তে গড়ে তোলেন শক্ত সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার, যশোরের প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শাহিন চাকলাদার, ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল করিম মিন্টু, কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলমসহ কয়েক উপজেলার অন্তত ২৫ জন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ছিলেন বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। এক পর্যায়ে দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ থেকে অবৈধ পন্থায় সোনা এনে ভারতে পাচার করতে থাকেন। এভাবেই কয়েক বছরের ব্যবধানে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।

মানবসেবার গাড়িতে সোনা পাচার

মানবসেবাই ধর্ম স্লোগানে দিলীপ কুমার তাঁর মা তারা দেবীর নামে চুয়াডাঙ্গা শহরে গড়ে তোলেন তারা দেবী ফাউন্ডেশন। কথিত এই মানবিক ফাউন্ডেশন জেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে কোনো ধরনের অনুমোদন নেয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ফাউন্ডেশনের আড়ালে সোনা চোরাচালান করতেন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। এ জন্য ফাউন্ডেশনের নামে তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সও কেনেন। অ্যাম্বুল্যান্সগুলো মাঝেমধ্যে দিনের বেলায় জনসেবার জন্য ব্যবহৃত হলেও রাতে সোনা নিয়ে সীমান্তের দিকে ছুটে চলত বলে জানিয়েছে স্থানীয় অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক মানবাধিকারকর্মী জানান, এজাতীয় প্রতিষ্ঠান অনুমোদন না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কিভাবে চলছে, সেটাই বড় প্রশ্ন। এ রকম শত শত প্রতিষ্ঠান মানবিক কর্মকাণ্ডের নামে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশিদ বলেন, তারা দেবী ফাউন্ডেশনের কোনো সরকারি অনুমোদন নেই। এমনকি ওই নামের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে আবেদনও করা হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ছাত্রজীবনে অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির ছিল দিলীপ। সে সময় তার পারিবারিক সচ্ছলতা ছিল না। তার বাবা একটি সিনেমা হল পরিচালনা করতেন। হঠাৎ করেই এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে যায় সে। বছর দুয়েক আগে লোকমুখে শুনি দিলীপ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। শুনে আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিল। পরে জানতে পারলাম সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে সে। এখন এলাকায় এসে সততার মুখোশ পরে মানবিক কাজকর্ম করে দানবীর হতে চাচ্ছে।

দিলীপের স্কুলজীবনের সহপাঠী শহিদুল ইসলাম বলেন, দিলীপ পড়ালেখায় তেমন ভালো ছিল না। টেনেটুনে ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ার পর্যন্ত পড়েছিল। অভাব-অনটনে পড়ে নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে ঢাকায় চলে যায়। সে সময় এলাকায় আসত না দিলীপ। হঠাৎ ২০০৯ কিংবা ২০১০ সালের দিকে দামি গাড়িতে করে এলাকায় আসে। তখন তার মুখ থেকেই শুনলাম সে নাকি আওয়ামী লীগের বড় নেতা হয়েছে। বড় বড় মন্ত্রী-এমপির সঙ্গে মোবাইল ফোনে ছবি দেখাল।

তিনি আরো বলেন, পরে জানতে পারি, দিলীপ সোনা চোরাকারবারে জড়িয়ে এত অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে। এলাকায় তারা দেবী ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছে। শুনেছি ওই প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে অবৈধ সোনা চোরাচালান করে থাকে দিলীপ।


আরও খবর

১৫ বছরে ভুয়া কাগজে ব্যাংক লুট

বুধবার ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪