বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান দাম প্রভাব ফেলছে
ভোক্তার ওপর। মূল্যস্ফীতির চাপে বিপর্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ। বেশির ভাগ দেশে এ হার
রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছলেও ব্যতিক্রম ছিল জাপানে। মহামারীর বিপর্যয় কাটিয়ে ধীর পুনরুদ্ধার
এ চাপের বাইরে রেখেছিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে। তবে কয়েক মাস ধরে দেশটিতে
ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে দাম। এরই মধ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আদান-প্রদান করা
পণ্যের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এক্ষেত্রে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন এবং ডলারের বিপরীতে
ইয়েনের অবমূল্যায়নকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা। খবর কিয়োদো নিউজ।
ব্যাংক অব জাপানের তথ্য অনুসারে, এপ্রিলে
পাইকারি মূল্য গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। এ হার ১৯৮১ সালে তুলনামূলক
তথ্য উপলব্ধ হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি। ইউক্রেন সংকট এবং ইয়েনের মানে উল্লম্ব পতনের
পরে ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ও কাঁচামালের ব্যয় এ রেকর্ড তৈরিতে অবদান রেখেছে। দেশটির
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লেনদেন করা পণ্যের দাম টানা ১৪তম মাসের মতো ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
এ প্রবণতা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভোক্তা মূল্যস্ফীতিতে দেখা যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ক্রমবর্ধমান জ্বালানি ও কাঁচামালের ব্যয়
ভোক্তাদের ওপর না চাপালে এটি করপোরেট মুনাফা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়ার হুমকি তৈরি
করেছে। এ অবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠান উচ্চ এ ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য করে দাম বাড়াচ্ছে।
এরই মধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে এটির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন জ্বালানি সরবরাহ
নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় পেট্রোলিয়াম ও কয়লা পণ্যের দাম ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। কাঁচামালের
দাম বৃদ্ধি পাওয়া পণ্যগুলোর মধ্যে থাকা লোহা ও ইস্পাত ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং কাঠ ও কাঠজাত
পণ্যের দাম বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া লোহা ও ইস্পাতের বাইরের ধাতুগুলোর দাম বেড়েছে
২৫ শতাংশ।
ইউক্রেনে চলমান এ যুদ্ধ পানীয় ও খাদ্যের
দামকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়
দেশই প্রধান উৎপাদক হওয়ায় গমের মতো শস্যের দাম দ্রুত বেড়ে গেছে। ডাই-ইচি লাইফ রিসার্চ
ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ হিদেও কুমানো বলেন, পাইকারি দাম বৃদ্ধির হার আশ্চর্যজনক
উচ্চ ছিল। মার্চ থেকে ইয়েনের তীব্র অবমূল্যায়নের কারণে এটি বেড়ে গেছে। তবে দুর্বল ইয়েনের
নেতিবাচক দিকগুলো অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাবও ফেলছে। ফলে ভোক্তা মূল্যসূচক কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে,
চলতি অর্থবছরে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হবে। পাশাপাশি উচ্চ ব্যয়ের
ধাক্কা ক্ষণস্থায়ী হবে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে ব্যাংকটি। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করছেন,
আগামী মাসে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে। কারণ উচ্চ কাঁচামালের
খরচ আরো বেশি প্রতিষ্ঠানকে দাম বাড়াতে প্ররোচিত করবে। এ পরিস্থিতি জাপানের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক
পুনরুদ্ধারে ঝুঁকি তৈরি করেছে।
এদিকে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ইয়েনের
হিসাবে এপ্রিলে আমদানি মূল্য এক বছর আগের তুলনায় ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে
জাপানি এ মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে কয়েক মাস ধরেই দেশটির আমদানি ব্যয় ঊর্ধ্বমুখী
রয়েছে। যদিও রফতানি মূল্য বাড়ার হার ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ।