আল সাদি, গাজীপুর সংবাদদাতা:
গাজীপুরে পুলিশ পরিচয়ে এটিএম বুথ থেকে
অর্থ হাতিয়ে নেওয়া চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে জিএমপি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের পাঁচ
দিনের রিমান্ড আবেদনসহ মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল
থানার ফটিয়ামারী গ্রামের মৃত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মো: রুবেল রানা (২৬), ঝিনাইদহ জেলার
হরিনাকুন্ডু থানার শোড়াতলা গ্রামের মো: জব্বার মালিথার ছেলে মো: তুষার ইসলাম (৩৭),
বরিশাল জেলার আগৈলঝরা থানার অশোকসেন গ্রামের মো: জাহাঙ্গীর মোল্লার ছেলে মো: সবুজ মোল্লা
(৩৪) ও পঞ্চগড় জেলার ভোদা থানার দিগলগ্রাম গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে মো: খাইরুল ইসলাম
(৩১)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রুবেল রানা পুলিশের এসআই হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণার
নেতৃত্ব দেয়।
মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের
(জিএমপি) সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন উপ-কমিশনার (ট্রাফিক ও মিডিয়া)
মো: আলমগীর হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনের আরো উপস্থিত ছিলেন, জিএমপির
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, জিএমপির সহকারী কমিশনার (ডিবি-উত্তর) আবু
সায়েম নয়ন, জিএমপির সদর থানার ওসি জিয়াউল ইসলাম।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি)
উপ-কমিশনার (ট্রাফিক ও মিডিয়া) মো: আলমগীর হোসেন জানান, সোমবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে
জানা যায়, একজন ভুয়া পুলিশ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সালনা বাজারের ওভারব্রিজের নিচে
অবস্থান করছে। ওই সময় সেখানে অভিযান চালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আন্ডারপাসের পাশ
থেকে চক্রের মূলহোতা মো: রুবেল রানাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেহ তল্লাশি করে ‘পুলিশ’ লেখা আইডি কার্ড,
একটি কালো রঙের ওয়াকিটকি, দুটি কালো অ্যান্টেনা, ছয়টি বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড,
সাতটি বিভিন্ন অপারেটরের সিমকার্ড, একটি আইফোন থার্টিন, পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত পাসপোর্ট
সাইজের ছবি ও বাংলাদেশ পুলিশ লেখা নীল রঙের নোটবুক জব্দ করা হয়। পরে তার ভাড়া বাসায়
অভিযান চালিয়ে একটি পুলিশের বেল্ট, একটি খেলনা পিস্তল ও একটি পিস্তলের কভার, একটি কম্পিউটার,
দু’টি জাল সার্টিফিকেট
জব্দ করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যে ঢাকার আশুলিয়ার পশ্চিম জিরাবো হারিজ মেম্বারের মার্কেটের
ফাইজা স্টুডিওতে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন ভুয়া আইডিসংক্রান্ত ফাইল সংবলিত দুটি
হার্ডডিস্ক এবং সংযুক্ত সিপিইউসহ মো: তুষার ইসলাম, মো: সবুজ মোল্লা ও খাইরুল ইসলামকে
গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় জিএমপির সদর থানায় মামলা করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানান, যেসব
এলাকায় মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকদের বেতন হয়,
সেসব এলাকায় এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ পরিচয় দিয়ে নকল আইডি কার্ড ও ওয়াকিটকি দেখিয়ে
বিভিন্ন এটিএম বুথের সামনে অবস্থান করতেন। এর মধ্যে শ্রমিকরা বেতনের অর্থ তুলতে এটিএম
বুথের সামনে গেলে প্রতারণাকারীরা নিজ থেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে অর্থ উত্তোলনে সহায়তার
জন্য এগিয়ে যেত। চক্রটি শ্রমিকদের কাছ থেকে তাদের এটিএম কার্ড নিয়ে কার্ড ব্যবহার না
করেই পাসওয়ার্ড জেনে নিত। এরপর কৌশলে একই ব্যাংকের অচল কার্ড ব্যবহার করত। কার্ডটি
এটিএম বুথে আটকে যাওয়ার পর শ্রমিকের এটিএম কার্ডটি কৌশলে পকেটে রেখে দ্রুত অন্য বুথে
গিয়ে সব টাকা উঠিয়ে নিত। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে ভয়ভীতি দেখানো হতো।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, আসামী
রুবেল রানা পুলিশ পরিচয় দিয়ে ৪টি বিয়ে করেছে। এছাড়াও চক্রটি পুলিশের পোশাক পরিহিত ছবি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রদর্শন করে পুলিশ অফিসার সেজে বিভিন্ন মেয়েদের সাথে শারীরিক
সম্পর্ক করে গোপনে ভিডিও ধারণ করে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণের অর্থ হাতিয়ে
নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে জিএমপির সদর থানার ওসি জিয়াউল
ইসলাম জানান, এ সংক্রান্তে জিএমপির সদর থানার এসআই আল-আমিন বাদী হয়ে উল্লেখিত আসামিসহ
মোট সাত জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা দায়ের করেছেন।
পরে আসামীদের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি
আরো জানান পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।