রাজধানীর শেরেবাংলা
নগর থানা এলাকার আসাদ গেটে বাসের ভেতরে ইভ টিজিং ও মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে মারামারি
ও হত্যার ঘটনায় জড়িত সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর
হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, লালবাগ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার
করা হয়।
ঘটনার সঙ্গে
জড়িত মূল অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীকে ছুরিকাঘাতকারী ফারুক (১৯), জিতু (১৮) ও জসিমকে (১৯)
গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে মোস্তফা (১৯), জোবায়ের ওরফে যুবরাজ ওরফে
জয় (১৮), মো. রাব্বি (১৯) ও মো. রোমানকে (১৫) গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার
(৩ নভেম্বর) রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে
এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন,
‘গতকাল
রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার টিকটকার শান্ত ধামরাইয়ের মোহাম্মদিয়া রিসোর্টে একটি পুল
পার্টির আয়োজন করে। এই আয়োজনে হাজারীবাগ ও আশপাশের এলাকার শতাধিক তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ
করে। তাদের এ আয়োজন ছিল এই মৌসুমের শেষ টিকটকারস পুল পার্টি। এখান থেকে ফেরার পথে
সিনিয়র-জুনিয়রদের মধ্যে গাঁজা খাওয়া নিয়ে বাসে দুই গ্রুপের মধ্যে কথা-কাটাকাটি
শুরু হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি একজন সিনিয়রের গার্লফ্রেন্ডকে ইভ টিজিংয়ের দিকে গড়ায়।
প্রাথমিকভাবে বিষয়টি নিজেদের মধ্যে কথা বলে সুরাহা করে নেওয়া হলেও উভয় পক্ষই মূলত
আরও মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।’
তিনি আরও বলেন,
‘বাসটি
হাজারীবাগ যাওয়ার পথে মোহম্মদপুরের আসাদ গেটে এসে পৌঁছালে গার্লফ্রেন্ডদের বাস থেকে
নামিয়ে দিয়ে উভয় পক্ষই একে অপরের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় সিনিয়র
গ্রুপের মো. রাব্বী ওরফে রাফা (২৪) তার কাছে থাকা সুইচ গিয়ার ছুরি দিয়ে জুনিয়র গ্রুপকে
আঘাত করতে যায়। জুনিয়র গ্রুপ এ সময় একত্র হয়ে রাফার কাছ থেকে সুইচ গিয়ার কেড়ে
নিয়ে তাকে উপর্যুপরি আঘাত করে। এ সময় শাওন (১৯) নামের অপর একজনও ধারালো অস্ত্রের
আঘাতে গুরুতর আহত হয়।’
গুরুতর আহত
অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাব্বী ওরফে রাফাকে আইসিইউতে
নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাত আনুমানিক ১টার দিকে সে মৃত্যুবরণ
করে। এ ঘটনায় নিহত রাফার বাবা বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছেন। অন্য
ভুক্তভোগীর অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল বলে জানান তিনি।
পুলিশের কাছে
গ্রেফতার ব্যক্তিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে উল্লেখ করে হাফিজ
আক্তার বলেন, ‘মূলত সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব, পুল পার্টি থেকে ফেরার পথে বাসে গার্লফ্রেন্ডদের
গাঁজা ও সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে না পেরে বয়ফ্রেন্ডের কাছে অভিযোগ ও ইভ টিজিংকে কেন্দ্র
করে সমস্যার উদ্ভব, যার নির্মম পরিণতি এই হত্যাকাণ্ড।’
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘অভিযুক্তদের মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত ফারুকের নামে হাজারীবাগ
থানায় তিনটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। অন্য অভিযুক্তরাও বয়সে তরুণ। তারা কেউ কেউ
ছাত্র, কেউ কারখানার কর্মচারী। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।’