Logo
শিরোনাম

গদখালিতে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা

প্রকাশিত:রবিবার ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ | হালনাগাদ:শনিবার ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১০৩০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে জমে উঠেছে ফুলের বেচাকেনা। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এ বাজারে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম।

গত দুইবছর করোনাকালীন সময়ে ফুল বিক্রি কম হলেও চলতি বছর থেকে ফুলের বেচাকেনা বেড়েছে বলে জানান তিনি। বসন্ত উৎসব, ভ্যালেনটাইন দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ফুল উৎপাদন ও বেচা-কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুল চাষি, পাইকারি ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতারা। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি ফুল ক্রেতারা গদখালিতে এসে ফুল কিনছেন।

সারা বছর ফুলচাষিরা ফুল বিক্রি করলেও তাদের মূল লক্ষ্য থাকে ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি উৎসব। এছাড়া বাংলা নববর্ষেও ফুলের জমজমাট বেচাকেনা হয়ে থাকে।

কৃষি বিভাগও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গদখালি ও পানিসারা এলাকায় সাড়ে ৬ হাজারের বেশি কৃষক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ, রডস্টিক, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, জিপসি, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৩ উপজেলায় ফুল চাষ হয়ে থাকে। এ জেলায় মোট ৬শ৫০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলায় ফুল চাষ হয়েছে ৬শ৩০ হেক্টর জমিতে। ঝিকরগাছায় ফুল চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম। এ উপজেলার গদখালি, পানিসারা, হাড়িয়া, নীলকন্ঠ নগর, চাওরা, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, চাঁদপুর, বাইশা, পাটুয়াপাড়া, নারানজালি গ্রামসহ প্রায় ৫০-৫৫টি গ্রামে ফুল চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া শার্শা উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে এবং কেশবপুর উপজেলায় ফুল চাষ হয়েছে ১ হেক্টরের সামান্য বেশি জমিতে।সদর উপজেলায় প্রায়  ৯ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ শুরু হয়েছে। দেশের ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালি থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে।

গদখালি বাজারের ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখানকার ফুল দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানী হচ্ছে।

গদখালী ফুলবাজার সূত্রে জানা গেছে, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস ঘিরে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। গোলাপ ফুল প্রতি পিস ৮-১০ টাকা, চায়না গোলাপ লংস্টিক রোজ ২৫-৩০ টাকা, রজনীগন্ধা স্টিক ৭-৮ টাকা, গ্রাাডিওলাস ফুল রং ভেদে ১০-১৫ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ১২-১৪ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ৪-৫ টাকা, গাঁদা প্রতি হাজার সাড়ে তিনশ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা, রডস্টিক প্রতি বান্ডিল ১৪০-১৫০ টাকা, জিপসি ফুল প্রতি আঁটি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি হাবিবুর রহমান জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের চাষ ও উৎপাদন ভালো হয়েছে। সামনের তিন উৎসব ঘিরে ফুলবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।প্রতিদিন ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। ফুলের বাজারমূল্য ভালো থাকায় ফুলচাষিরা খুশি।

গদখালি বাজারের ফুলের একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম থেকেই ফুলের বাজার দর বেশ ভালো। ফলে ফুল চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। এবাজার থেকে গত দুইদিনে ৬ কোটি টাকার ফুল পাইকারি বিক্রি হয়েছে।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, ঝিকরগাছায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৭০-৭২ প্রজাতির ফুল চাষ হয়ে থাকে। এ উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারন, মাগুরা, নির্বাসখোলা ও শিমুলিয়া ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। এ ছয়টি ইউনিয়নের সাড়ে ৬ হাজারের বেশি ফুল চাষি ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এ কারণে ফুল বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এ বছর বাজার পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় ৭০ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।

যশোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মঞ্জুরুল হক জানান, এ জেলায় ফুলের চাষ বাড়াতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে টিউলিপ ফুলসহ বিভিন্ন ফুলের প্রদর্শনী, উদ্যোক্তা ও ফুলচাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে।ফুলচাষিদের ভারতসহ বিদেশে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।


আরও খবর