সার্বিয়ার বিরুদ্ধে
ব্রাজিল যখন খেলতে নামল তখন সবার চোখ ছিল দলের ১০ নম্বর জার্সিধারীর দিকে। নেইমার জুনিয়র।
তিনি কেমন খেলেন, সে দিকেই তাকিয়ে ছিলেন ব্রাজিলের সমর্থকরা। হতাশ করলেন না নেইমার।
গোল হয়তো করতে পারলেন না। কিন্তু যত ক্ষণ থাকলেন, ব্রাজিল দলকে তিনিই চালালেন। তাঁর
পা থেকেই তৈরি হল একের পর এক আক্রমণ। গোল দু’টির ক্ষেত্রেও
মূল কাণ্ডারি নেইমার। ব্রাজিলের ‘রিংমাস্টার’-এর ভূমিকায় দেখা গেল তাঁকে।
নেইমার সার্বিয়ার
বিরুদ্ধে খেলছেন তা একটা পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। ৮০ মিনিট পর্যন্ত মাঠে ছিলেন তিনি।
সেই সময়ের মধ্যে দলের রক্ষণ ও আক্রমণের মধ্যে যোগসূত্রের কাজ করেছেন নেইমার। ডিফেন্ডাররা
তাঁকে বল দিচ্ছিলেন। সেই বল তিনি বাড়াচ্ছিলেন স্ট্রাইকারদের উদ্দেশে। কখনও আবার ছড়িয়ে
দিচ্ছিলেন দুই প্রান্তে। ৮০ মিনিটে মোট ১২ বার এই কাজ করেছেন তিনি। এটা থেকেই পরিষ্কার,
তিতের এই দলে নেইমারের ভূমিকা ঠিক তেমন, যেমনটা আর্জেন্টিনার হয়ে করে থাকেন মেসি। অর্থাৎ,
খেলা পরিচালনা করা। তিনি যেমনটা চালাবেন, তেমনটা খেলবে দল। সেখানে গোল করা প্রধান নয়,
লক্ষ্য থাকবে গোলের সুযোগ তৈরি করা। প্রয়োজন পড়লে আবার গোল করতেও উঠবেন তিনি। সার্বিয়ার
বিরুদ্ধে ঠিক সেই কাজটাই করলেন নেইমার।
চার বছর আগে রাশিয়া
বিশ্বকাপে নেইমারের ‘প্লে-অ্যাক্টিং’-এর প্রবল সমালোচনা হয়েছিল। এ বারও সার্বিয়ার
ডিফেন্ডাররা তাঁকে কড়া ট্যাকল করলেন। নেইমার পড়লেন। আবার উঠলেন। কিন্তু কোনও অভিনয়
করলেন না। এই চার বছরে অনেক বেশি পরিণত তিনি। বুঝেছেন এই দলে তাঁর দায়িত্ব ঠিক কী!
তিনি জানেন, ব্রাজিলের সমর্থকরা তাকিয়ে আছেন তাঁর দিকেই।
ম্যাচের ৬২ মিনিটে
প্রথম গোল আসে ব্রাজিলের। বক্সের বাইরে বল পেয়ে গোলের দিকে এগিয়ে যান নেইমার। ঘাড়ের
কাছে তিন জন ডিফেন্ডার। কিন্তু বল নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। বক্সের মধ্যে ঢুকে ভিনিসিয়াস
জুনিয়রের দিকে বাড়ান। তাঁর শট সার্বিয়ার গোলরক্ষক আটকে দিলেও ফিরতি বলে গোল করেন রিচার্লিসন।
৭৩ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের দ্বিতীয় গোলের আক্রমণও শুরু হয় নেইমারের পা থেকেই। তিনিই
সেই ভিনিসিয়াসকে বল দেন। ভিনিসিয়াসের ক্রস ধরে দুরন্ত ভলিতে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন
রিচার্লিসন।
জয় প্রায় নিশ্চিত
জেনে নেইমারকে মাঠে রাখার ঝুঁকি নেননি কোচ তিতে। কারণ, তার পরেও বার বার সার্বিয়ার
ডিফেন্ডারদের কড়া ট্যাকলের মুখে পড়ছিলেন তিনি। তিতে চাননি তাঁর দলের সেরা ফুটবলার
চোট পান। তাই ৮০ মিনিটে নেইমারকে তুলে নেন ব্রাজিল। কিন্তু উঠে যাওয়ার আগে পর্যন্ত
নেইমার বুঝিয়ে দিলেন, এ বারের বিশ্বকাপে তৈরি হয়ে নেমেছেন তিনি। নেইমারের খেলায় মুখের
হাসি অনেকটা চওড়া হল ব্রাজিল সমর্থকদের।