বিএনপির সাবেক
নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর প্রমাণ পায়নি পুলিশ। তবে এখনও তদন্ত অব্যাহত রেখেছে পুলিশের
অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পুলিশের ধারণা, হারিছ চৌধুরীর পরিবার পরিকল্পনা করে একটি
গুজব ছড়িয়েছে। যাতে তার নামে থাকা ইন্টারপোলের রেড নোটিশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ সদর দফতর ও সিআইডির কর্মকর্তারা বাংলা ট্রিবিউনকে
এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সিআইডির অর্গানাইজড
ক্রাইম বিভাগের সিরিয়াস ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘তার মৃত্যুর বিষয়ে যে খবর ছড়িয়েছে,
সে বিষয়ে তার পরিবার ভালো করে বলতে পারবেন, আমাদের কাছে কোনও মৃত্যুর তথ্য নেই।’
সিআইডি এ মাসে
হারিছ চোধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি যাচাই করতে মাঠে নামে। তবে এখনও তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত
হতে পারেনি সংস্থাটি। দেশে থাকা স্বজনদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন, কিন্তু কেউ মৃত্যুর
প্রমাণ দিতে পারেনি। সবাই অন্যের মুখে শুনেছেন বলে সিআইডিকে জানিয়েছে।
এ মাসের দ্বিতীয়
সপ্তাহে বিএনপির সাবেক নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর প্রকাশ পায় গণমাধ্যমে।
এরপর ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ সরানোর জন্য পুলিশ নিজ উদ্যোগে মৃত্যুর সত্যতা যাচাইয়ে
মাঠে নামে। সত্যিই মারা গেছেন কিনা তা জানতে চেয়ে সিআইডিকে চিঠি দেয় ইন্টারপোল। তার
বিরুদ্ধে থাকা ইন্টারপোলের রেড নোটিশ প্রত্যাহারের জন্য তার মৃত্যুর প্রমাণ জানার চেষ্টা
করে পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।
পুলিশ সদর দফতরের
ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সঙ্গে কাজ
করে। কারও বিষয়ে রেড নোটিশ জারি কিংবা প্রত্যাহারের বিষয়টিও তারাই তদারকি করে। তারা
বলছে, রেড নোটিশ প্রত্যাহারের আগে হারিছের মৃত্যুর সঠিক তথ্য প্রমাণ দরকার। তাই সিআইডিকে
এ বিষয়ে দ্রুত লিখিত তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
মহিউল ইসলাম
বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি হারিছ চৌধুরী মারা গেছেন। একজন মৃত মানুষের
তো ইন্টারপোলে রেড নোটিশ রেখে কোনও লাভ নেই। তাই আমরা পুলিশের অপারেশনাল ইউনিট সিআইডির
কাছে তার মৃত্যুর সত্যতা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সিআইডি আমাদের মৃত্যুর তথ্য দিতে
পারেনি। সিআইডি কোনোভাবেই তার মৃত্যুর খবরের সত্যতা পায়নি। আমাদের ধারণা, এই গুজবটি
তার পরিবার থেকে ছড়ানো হয়েছে, যাতে রেড নোটিশ সরিয়ে ফেলা হয়।’
তিনি বলেন,
‘যতক্ষণ
না পর্যন্ত মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ থাকবে।’
গত ১১ জানুয়ারি
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে হারিছ চৌধুরী চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরীর বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ
হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী যুক্তরাজ্যে
মারা যান। এরপর হারিছ চৌধুরীর মেয়ের বরাত দিয়ে কেউ কেউ খবর প্রকাশ করেন তিনি ঢাকার
একটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
২০০৪ সালের
২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাসহ একাধিক মামলার অভিযুক্ত আসামি ছিলেন বিএনপি-জামায়াত
জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতা সিলেটের হারিছ চৌধুরী। ওই হামলার টার্গেট ছিল বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই হামলা মামলার চার্জশিটেও অভিযুক্ত আসামি ছিলেন হারিছ
চৌধুরী। অভিযোগপত্রে তাকে লাপাত্তা দেখানো হয়।
২০০৭ সালে সেনা
সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর হারিছ চৌধুরী গা ঢাকা দেন। ২১ আগস্ট হামলা মামলায়
তিনি অভিযুক্ত হওয়ার পর ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়। ইন্টারপোলের
রেড নোটিশে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, ‘খুন এবং আওয়ামী লীগের সমাবেশে হ্যান্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ।’ রেড নোটিশে তার ছবিসহ বিভিন্ন
ব্যক্তিগত তথ্যও উল্লেখ রয়েছে।