এক সময়ের রেলওয়ে
কর্মকর্তা-কর্মচারী আর যাত্রীদের চিকিৎসা সেবার ভরসা নীলফামারী সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতাল
এখন জনমানবহীন ভুতুড়ে বাড়ি! পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, সারি সারি শয্যা থাকলেও, নেই চিকিৎসক
আর রোগী! প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া কোন ব্যবস্থা নেই এই রেলওয়ে হাসপাতালটিতে। ব্যবহার
না হওয়ায় বিকলের পথে পরীক্ষা নিরীক্ষার সব যন্ত্রপাতি।
প্রয়োজনীয় লোকবলের
অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা। ৮২ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন
রোগী থাকে মাত্র ১ থেকে ২ জন। অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে যখন ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি
রোগীর চাপ, তখন এই হাসপাতাল পুরোটাই ফাঁকা ।
খোঁজ নিয়ে জানা
গেছে, এই হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ৭ জন কিন্তু আছে মাত্র একজন । তিনিই আবার হাসপাতালের
প্রশাসনিক কর্মকর্তা।অফিস ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি তিনিই দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। রেলওয়ের
এই হাসপাতালটিতে নেই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, রয়েছে ওষুধের সল্পতাও। নার্স, ফার্মাসিস্টসহ
অন্য পদগুলোর অধিকাংশই খালি। মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো পরে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। এতে
পুরোপুরি বন্ধ পরীক্ষা নিরীক্ষাও। ফলে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। এতে চিকিৎসা সেবা থেকে
বঞ্চিত দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫ হাজার পরিবার।
সৈয়দপুর রেলওয়ের
অফিস স্টাফ মমিনুল ইসলাম জানায়, রেলওয়েতে যোগ দেওয়ার পর দেখেছি সেখানে প্রতিদিন নিন্মে
২০০ থেকে ৩০০ রোগী আসত চিকিৎসা নিতে, ডাক্তার ছিল ৫ জন, অন্তঃবিভাগে প্রায় ৪০-৬০ জন
রোগী থাকত। নিউরো ডাক্তার ছিল ৩ জন। ডাক্তার না থাকায় করোনার পর থেকে রোগীর সংখ্যা
কমে গেছে।
সেবা প্রার্থী
শরিফুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের সব থেকে বড় হাসপাতাল এটি। এখানে সেবার মান নাই কারল রেলে
প্রায় ৫ হাজার পরিবারের সেবা তো একটি ডাক্তার দিয়ে দেওয়া সম্ভব না। এছাড়াও বাইরে থেকেও
মানুষ সেবা নিতে আসে।
রেলওয়ে স্টাফ
মোতাহারা বেগম বলেন, আমরা রেলে চাকরি করি। কিন্তু এখানে কোনও মহিলা ডাক্তার নাই। শুধু
একজন ডাক্তার আছে, তাও পুরুষ। মহিলা ডাক্তার না থাকায় আমাদের বাইরে থেকে চিকিৎসা নিতে
হয়।
এদিকে লালমনিরহাট
রেলওয়ে হাসপাতাল ও সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্ব আছেন একজন ডাক্তারই।
দুই হাসপাতালে
এক সঙ্গে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকায় আশানুরূপ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে বাংলাদেশ
রেলওয়ে সৈয়দপুরের বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার ডা. আনিছুল হক বলেন, সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালটি
৮২ শয্যার। এখানে আমাদের মোট ডাক্তারের থাকার কথা ৭ জন। মাস দুয়েক আগে আমাকে একজন ডাক্তার
দিয়েছিলো সেও ট্রেনিংয়ে গেছে। এখন একাই ৭ জনের দায়িত্ব দেখতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন,
মজার বিষয় হলো আমি লালমনিরহাটের রেলওয়ে হাসপাতালেরও অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। সেখানেও
কোনও ডাক্তার নাই। ১০ জন ডাক্তার থাকার কথা ১০ জনের মধ্যে আমি একা। সব মিলিয়ে ১৭ জন
ডাক্তারের কাজ আমি একা করছি। একদিকে আমাকে প্রশাসনিক কাজ করতে হয়, অন্যদিকে রোগীদের
সেবা দিতে হয়।
এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল
রেলওয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সুজিত কুমার রায় মোবাইল ফোনে জানান, চিকিৎসক
নিয়োগে বিধি তৈরির কাজ করছে মন্ত্রণালয়। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।