মাথায় হিজাব না
থাকায় ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে (মর্যালিটি পুলিশ) গ্রেপ্তার, হেফাজতে থাকা অবস্থায়
গুরুতর অসুস্থ হওয়া এবং পরে হাসপাতালে মারা যাওয়া তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুতে ক্ষোভে
উত্তাল হয়ে উঠেছে ইরান। বৃহস্পতিবার সেই বিক্ষোভের ষষ্ঠ দিন চলছে।
শুরুর দিকে এই
বিক্ষোভ ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ কুর্দিস্তানে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে
তা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এই বিক্ষোভ। সেই সঙ্গে বিক্ষোভ দমনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে
দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীও।
ইরানের মানবাধিকার
সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) পরিচালক মাহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম এক লিখিত বিবৃতিতে
জানিয়েছেন, দেশজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হচ্ছে
এবং চলমান বিক্ষোভে গত ছয়দিনে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ জন। বিক্ষোভ
নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা বাহিনী রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে গণগ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে
বলেও অভিযোগ করেছে আইএইচআর।
বিবৃতিতে মাহমুদ
আমিরি মোঘাদ্দাম বলেন, ‘নিজের মৌলিক অধিকার
ও সম্মান ফিরে পাওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমেছে ইরানের সাধারণ জনগণ; কিন্তু জনগণের এই
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে দমন করতে বুলেট ব্যবহার করছে সরকার।’
রাজধানী তেহরানসহ
ইরানের অন্তত ৩০টি শহরে বিক্ষোভ হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে আইএইচআরের বিবৃতিতে।
মাথায় হিজাব না
থাকায় গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রাজধানী তেহরানে ইরানের নৈতিকতা (মর্যালিটি) পুলিশের
হাতে গেপ্তার হন মাশা আমিনি নামের ২২ বছরের এক তরুণী। গ্রেপ্তার করে হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার
দুই ঘণ্টার মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
তারপর তাৎক্ষণিকভাবে
তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার মৃত্যু হয় মাশার।
মাথায় হিজাব না
থাকায় ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হাতে (মর্যালিটি পুলিশ) গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার
হয়ে গুরুতর আহত হওয়া এক তরুণী হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার তাকে
হাসপাতালে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়, তার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের
মধ্যে মারা যান তিনি।
ইরানের স্থানীয়
একাধিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী পড়াশোনা সূত্রে ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশে থাকতেন
মাশা, গত সপ্তাহে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে তেহরান এসেছিলেন।
তার মৃত্যুর খবর
প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল কুর্দিস্তানে। পরে দ্রুততার সঙ্গে
অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়ে সেই বিক্ষোভ।
ইরানে জনপরিসরে
নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দাবিধি রয়েছে। এই বিধিগুলো কার্যকর হচ্ছে
কি না, তা তদারক করে দেশটির মর্যালিটি পুলিশ।
রয়টার্সের তথ্য
অনুযায়ী, মাশা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে ইরানের অন্তত ৫০টি শহরে বিক্ষোভ চলছে। এর আগে
২০১৯ সালে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল ইরানে। রয়টার্সের
তথ্যমতে তারপর এত বড় বিক্ষোভ দেশটিতে আর হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। আর হয়নি দেশটিতে।