ধর্মপরায়ণ ইরানে
কঠোর হিজাব বিধি প্রয়োগকরার অংশ হিসেবে এক তরুণীকে আটক করে পুলিশ। এরপর ওই তরুণী কোমায়
চলে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এর ২৪ ঘণ্টা না পেরতেই মৃত্যু হয় ওই তরুণীর।
যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে ইরানে।
গত কয়েক মাস
যাবত, ইরানী অধিকার কর্মীরা নারীদের প্রকাশ্যে পর্দা অপসারণ করার জন্য আহ্বান জানিয়ে
আসছিল। বিপরীতে অঙ্গভঙ্গি বা ইসলামিক পোষাক কোড মেনে নারীদের বাইরে বেও হওয়ার কথা বলে
আসছিল দেশটির কট্টরপন্থী শাসকরা। যার ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার হিজাব না পরায় এক
তরুণীকে আটক করে পুলিশ।
ইরানের স্থানীয়
একাধিক সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই তরুণীর নাম মাশা
আমিনি, বয়স ২২ বছর। পড়াশোনা সূত্রে ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশে থাকতেন তিনি, গত সপ্তাহে
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে রাজধানী তেহরান এসেছিলেন।
হিজাব ও বোরকা
না পড়ে বাড়ির বাইরে বের হওয়ায় বৃহস্পতিবার মাশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে থানা হেফাজতে
নিয়ে যায় ইরানের মর্যালিটি পুলিশ। হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার দু’ঘণ্টা পরই গুরুতর আহত অবস্থায়
অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তির ২৪ ঘণ্টা
না পেরতেই মৃত্যু হয় ওই তরুণীর।
হাসপাতালের একটি
সূত্র জানিয়েছে, ‘গুরুতর শারীরিক
নির্যাতনের জেরেই মৃত্যু হয়েছে মাশার। ’
গ্রেপ্তারের ঘটনার
সাক্ষী তরুণীর ভাই কিয়ারেশ জানায়, ‘আমি থানায় গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের আমার বোনকে ছেড়ে দেওয়ার
জন্য মিনতি জানিয়েছিলাম। পুলিশ আমাকে জানান, হিজাব না পরা আওতায় আটক করা হয়েছে মাশাকে।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হবে মাশাকে। এরপর পুলিশ আমাকে থানার
বাইরে অপেক্ষা করতে বলে। ’
‘আমি থানার বাইরে
অপেক্ষা করছিলাম, কিছুক্ষণ পরই একটি অ্যাম্বুলেন্সকে থানার সামনে এসে থামতে দেখলাম।
তারপর দেখলাম থানার ভেতর থেকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য কাউকে পাঁজাকোলা করে অ্যাম্বুলেন্সে
তুলছে। সঙ্গে সঙ্গে থানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, যাকে এইমাত্র অ্যাম্বুলেন্সে তোলা
হলো, সে আমার বোন মাশা। ’
তিনি আরও বলেন,
‘থানার কর্মকর্তারা বললেন, হেফাজতে থাকার
সময় তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। আমি সময় হিসেব করে দেখলাম, থানায় নিয়ে আসার মাত্র দু’ঘণ্টার
মধ্যে মাশাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়েছে। আমার এখন হারানোর কিছু নেই। আমি তাদের কাউকে
ছাড়ব না আমি। মামলা লড়ব আমি। ’
মাশা আমিনির মৃত্যুর
ঘটনায় বিবৃতি দিয়ে তেহরান পুলিশ জানিয়েছে, ‘ইরানে নারীদের পোষাকবিধি সম্পর্কে ‘ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা’ দিতে মাশাকে হেফাজতে
নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু থানা হেফাজতে আসার পর আকস্মিকভাবে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা শুরু
হয়, সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের উদ্যোগে তাকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
’
মাশা আমিনির মৃত্যুর
ঘটনায় দেশটির বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ শুরু হয়েছে।
এই ঘটনাটি যথাযথভাবে তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
ইব্রাহিম রাইসি।