হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক নারীর পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ইরানে চলমান বিক্ষোভের সামনের সারিতে রয়েছেন দেশটির নারীরা। মঙ্গলবার সারি এলাকায় বিক্ষোভকারীদের জ্বালানো আগুনে নারীরা যখন হিজাব পুড়াচ্ছিলেন তখন সমবেতরা উল্লাসধ্বনি করেন। বিক্ষোভ টানা পঞ্চম রাতেও চলমান এবং বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে।
অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উর্মিয়া ও পিরানশাহর এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দুই পুরুষ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। দক্ষিণে শিরাজ এলাকায় পুলিশের এক সহকারী নিহতের খবর পাওয়া গেছে। হিজাব আইনবিরোধী চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ছয়জন নিহত হয়েছে ধারণা করা হচ্ছে।
হিজাব আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ ২২ বছর বয়সী কুর্দি নারী মাশা আমিনিকে আটক করে। তিন দিন কোমায় শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। নৈতিকতা পুলিশ যখন তাকে তেহরানে গ্রেপ্তার করে তখন সঙ্গে ছিলেন তার ভাই। আমিনির বিরুদ্ধে হিজাব আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে নৈতিকতা পুলিশ। কারাগারে লুটিয়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি কোমায় চলে যান।
জাতিংঘের ভারপ্রাপ্ত মানবাধিকার কমিশনার নাদা আল-নাশিফ বলেছেন, আমিনির মাথায় পুলিশ ব্যাটন দিয়ে আঘাত করা ও গাড়িতে মাথা চেপে ধরার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের দাবি, হঠাৎ করে আমিনির হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যায়। যদিও তার পরিবারের দাবি, তিনি সুস্থ ও সবল ছিলেন।
ইরানের কুর্দি এলাকায় সক্রিয় নরওয়েভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, পিরানশাহর ও উর্মিয়া এলাকায় মঙ্গলবার বিক্ষোভে গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর ও ২৩ বছর বয়সী এক যুবক নিহত হয়েছে। এর আগে সোমবার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তিন পুরুষ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আমিনির শহর সাকেজে একজন, অপর দুইজন দিভানদারেহ ও দেহগোলান এলাকায়। এর আগে আরেক ব্যক্তি নিহতের কথা জানিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু ওই ব্যক্তির পরিবার জানিয়েছে, আহত ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক, এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শিরাজে পুলিশের আহত এক সহকারীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে হিজাব আইনবিরোধী চলমান বিক্ষোভ হয়েছে ১৫টি শহরে। এর মধ্যে রয়েছে রাজধানী তেহরান, মাশহাদ, রাশত, কেরমান, ইসফাহান। বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করে, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। বিক্ষোভ দমনে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে।
বিক্ষোভের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, রাজধানী তেহরানে নারীরা নিজেদের হিজাব খুলে ফেলছেন এবং স্বৈরাচার নিপাত যাক বলে স্লোগান দিচ্ছেন। অন্যরা ন্যায়বিচার, মুক্তি ও হিজাব পরার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহারের স্লোগান দিয়েছেন। সোমবার রাশত শহরে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অল্প আহত এক নারী বিবিসিকে বলেছেন, পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেই যাচ্ছিল। আমাদের চোখে জ্বালা করছিল। আমরা পালাচ্ছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের ঘিরে ফেলে এবং মারধর করে। তারা আমাকে একজন পতিতাও বরেছে।
ইসফাহানে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অপর এক নারী বিবিসিকে বলেন, আমরা যখন হিজাব হাতে নিয়ে ওড়াচ্ছিলাম তখন আমি আপ্লুত হয়ে পড়ি। আমাদের চারপাশে তখন পুরুষরা ছিলেন, তারা আমাদের রক্ষা করছিলেন। এটি বড় ধরনের ঐক্যের অনুভূতি। আমার আশা বিশ্ব আমাদের সমর্থন করবে। তেহরানের গভর্নর মোহসেন মনসৌরি মঙ্গলবার টুইটারে বলেছেন, অস্থিতিশীলতা তৈরির এজেন্ডা নিয়ে বিক্ষোভ পরিচালনা করা হচ্ছে।