তিন বছর হলো পাঠানের কোনো খোঁজ নেই-এভাবেই শুরু হয় শাহরুখ খানের নতুন সিনেমা পাঠানের টিজার। পাঠান তিন বছর ধরে নিখোঁজ, তবে শাহরুখকে থিয়েটারে পাওয়া যাচ্ছে না প্রায় পাঁচ বছর। ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া জিরোর পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আসছে পাঠান। মাঝখানে দীর্ঘ বিরতি। একাধিক সিনেমায় ক্যামিও করেছেন, হয়েছেন প্রশংসিত কিন্তু পুরনো শাহরুখ তো সেখানে নেই। লাভার বয় হোক বা ডন-কিং খানকে বলিউডে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে শাহরুখ তো শাহরুখ। রীতিমতো একটা ব্র্যান্ড। তাই জওয়ান বা পাঠানের পোস্টার, টিজার এমনকি লুক আসতে না আসতে শুরু হয় তোলপাড়। সে ধারাবাহিকতায়ই ৫৭তম জন্মদিনে মুক্তি পেল পাঠানের টিজার। পাইপলাইনে আছে জওয়ান ও ডাঙ্কি।
‘শাহরুখের ক্যারিয়ার শেষ’-এমন একটা কথা কয়েক বছর ধরে মিডিয়ায় খুব প্রচারিত। কেননা ১২ বছরে তার কোনো সিনেমা শাহরুখের ক্যালিবার অনুসারে না হয়েছে ‘ভালো সিনেমা’, না ‘ব্যবসাসফল’। পুরো ভারত যখন দক্ষিণী সিনেমার প্রশংসা করে মুখে ফেনা তুলে বলিউডের সৎকার করে ফেলছে, সে সময় শাহরুখের আসন্ন দুটো সিনেমা নিয়ে সেই দর্শকরাও আগ্রহী। এটা শাহরুখের স্টারডম নয়, তার প্রতি দর্শকের আশাবাদ। কেননা ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে শাহরুখ খান বলিউড ও ভারতীয় সিনেমাকে যা দিয়েছেন, এমনকি বহির্বিশ্বে ভারতীয় সিনেমাকে যেভাবে প্রমোট করেছেন, তা বলিউড বা ভারতের অন্য কোনো সিনেমা স্টারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ভক্তদের কাছে তার আবেদন তো অন্য মাত্রার।
১২ বছর শাহরুখের কোনো ভালো সিনেমা আসেনি বলাটা ভুল। ডন টু সে হিসেবে খারাপ সিনেমা নয়। ব্যবসাও তুলনামূলক কম করেনি। রইসের প্রতি দর্শকের এক ধরনের আগ্রহ ছিল। সিনেমা হিসেবে ডিয়ার জিন্দেগি সময়োপযোগী। এর মধ্যেই শাহরুখ করেছিলেন ফ্যানের মতো নিরীক্ষাধর্মী সিনেমা, যা ওটিটি যুগের আগে এবং ওটিটি যুগেও পড়তি ক্যারিয়ার বাদে কোনো স্টার ধরার সাহস করতেন না। প্রশংসা পেলেও অবশ্য বক্স অফিসে সিনেমাটি খুব ভালো করেনি। জাব হ্যারি মেট সেজাল বা দিলওয়ালের মতো সিনেমা শাহরুখ কেন করলেন, তা অবশ্য অনেকেরই প্রশ্ন। বিগত দিনগুলোয় তার স্ক্রিপ্ট বাছাই ভুল ছিল বলে এক বাক্যে মন্তব্য করে থাকেন সবাই।
কিন্তু শাহরুখ নতুন কী করবেন? করার হয়তো অনেক কিছুই ছিল। কিন্তু শাহরুখ খান মূলত সময় থেকে এগিয়ে। অনেক কিছু তিনি আগেই করে ফেলেছেন। ২০১১ সালে তার করা রা. ওয়ান বক্স অফিস বা দর্শকের কাছে পাত্তা পায়নি। ২০২২ সালে এসে বিগ বাজেট সিনেমা আদিপুরুষের ভিএফএক্স দেখে দর্শকরা বলছেন রা. ওয়ান থেকে তাদের শেখা উচিত ছিল। বলিউডে যখন দক্ষিণী সিনেমার রিমেক চলছে, শাহরুখ তখন দক্ষিণ ভারতের যুক্ত গল্পে নির্মিত চেন্নাই এক্সপ্রেসে অভিনয় করেছিলেন। ফ্যানের মতো সিনেমা করেছেন তিনি। একজন সুপারস্টারের জন্য এ রকম আউট অব দ্য বক্স সিনেমায় (ফ্যানডম নিয়ে নির্মিত) অভিনয় করাতে ‘রিস্ক’ থাকে। কিন্তু রিস্ক কবে নেননি শাহরুখ? নব্বইয়ের দশকে শাহরুখ যখন লাভার বয় হিসেবে স্বীকৃত, সে সময় তিনি ডর, আনজামের মতো সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সুপারস্টার হয়েছেন বহু আগে, তার পরও ক্যামিওতে তাকে দেখা গিয়েছে বারবার।
সিনেমাকে বর্তমানে ব্যবসার মানদণ্ডে মাপা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গল্প বা স্ক্রিপ্টের আলোচনা আনেন অনেকে কিন্তু আদতে হলিউড বা বলিউডে আয়টাই মূল। সেদিক থেকে হিসাব করলে বহু ব্যবসাসফল সিনেমা আছে শাহরুখের। কিন্তু তার চেয়ে বেশি যা আছে, তা হলো অভিনয়গুণ। অবশ্য বলিউডে নিজের শতভাগ গুণ তিনি দেখাতে পেরেছেন এমন নয়, কিন্তু যা দিয়েছেন, তাও কম নয়। বেশ কয়েকটা প্রজন্মকে রোম্যান্স শিখিয়েছেন শাহরুখ। অ্যাকশনেও কম যাননি। ভেবেছেন ভিন্ন ধারায়। এমনকি তৈরি করেছেন অভিনেতা, পরিচালক। মন্দিরা বেদী থেকে দীপিকা পাড়ুকোন, আনুশকা শর্মা; আজকের জিশান আইয়ুব, জয়দীপ আহেলওয়াতরা শাহরুখের কথা বলেন এবং তারাই বলেন, আরো বহুদিন শাহরুখ খান বাদশার মতোই রাজত্ব করবেন। তিনি ফ্লপ কিংবা হিটের বাইরের এক তারকা।