হজ আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সেতুবন্ধনের মাধ্যম। প্রতিটি সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর পবিত্র হজব্রত পালন করা ফরজ। কেউ হজ ফরজ হওয়ার পরও আদায় না করলে, বড় গুনাহগার হবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে তাকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেছেন। হজের মধ্যে ওয়াজিব কাজ মোট ৬টি
এক. জিলহজের ১০ তারিখ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত যেকোনো সময়ে সামান্য সময়ের জন্য হলেও মুজদালিফায় অবস্থান করা। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৮) দুই. সাফা-মারওয়ায় সাত চক্কর লাগানো। এটিকে সায়ি বলা হয়। চক্কর লাগানো শুরু হবে সাফা থেকে আর শেষ হবে মারওয়ায়। (মুসলিম, হাদিস : ২১৩৭) তিন. যথাসময়ে রমি বা শয়তানকে পাথর মারা। (মুসলিম, হাদিস : ২২৮৬) চার. তামাত্তু ও কিরান হজকারীদের দমে শোকর তথা হজের কোরবানি করা। পাঁচ. হারাম শরিফের সীমানায় কোরবানির দিনগুলোতে মাথা মুণ্ডানো বা চুল ছোট করা। (বুখারি, হাদিস : ১৬১৩) ছয়. মক্কাবাসী ছাড়া অন্যরা তাওয়াফে সদর তথা তাওয়াফে ‘বিদা’ করা। (মুসলিম, হাদিস : ২৩৫০)
হজের তালবিয়া ও তালবিয়ার উচ্চারণ
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর তালবিয়া হলো-লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক। অর্থ : আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আাপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোন শরীক নেই, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নে‘মত এবং সাম্রাজ্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই। (বুখারি, হাদিস : ১৫৪৯; মুসলিম, হাদিস : ২৮১১)
হজের ফজিলত ও সওয়াব
হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। হজে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছে। অন্য কোনো ইবাদতে হজের মতো এই দুইটি একসঙ্গে পাওয়া না যায় না। মহান রাব্বুল আলামিন সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলিমের উপর দ্রুত হজ সম্পাদন করা ফরজ করেছেন। হজ মুসলিম উম্মাহর গর্ব। নানা জাতি ও বর্ণের মুসলিমদের ঐক্য ও সাম্যের প্রতীক। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালনে সৌদি গমন করেন। অগণিত কিংবা নির্ধারিত— যত সংখ্যক হাজি-ই সেখানে যান, তারা আল্লাহপ্রেমের পাঠ চুকিয়ে রাসূলপ্রেমের ষোলকলা পূর্ণ করেন। মহা সৌভাগ্য ও পুণ্যের মিছিলে নিজেদের নাম লেখান।
হজ ও ওমরাহ কী?
স্বাভাবিকভাবে ‘হজ’ অর্থ মহৎ কাজের ইচ্ছে করা। পারিভাষিকভাবে হজ বলে, হজের নিয়তসহ ইহরাম ধারণ করে— নির্দিষ্ট দিনে আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ও কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ৪৫৪) আর ‘ওমরাহ’ অর্থ পরিদর্শন করা। ওমরাহর নিয়তে ইহরাম ধারণ করা, এরপর তাওয়াফ ও সাঈ করে মাথা মুণ্ডন করে ইহরামমুক্ত হওয়াকে ওমরাহ বলে। (ফাতহুল বারি, খণ্ড: ০৩, পৃষ্ঠা: ৫৯৭)
হজের সওয়াব ও ফজিলত
আল্লাহর রাসুল (সা.) হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর মকবুল হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (বুখারি, খণ্ড: ০১, পৃষ্ঠা: ২০৬)