
১৯৭১ সালের মার্চ মাস। এই মাসেই শুরু হয় বাঙালির সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে যার যা ছিল, তাই নিয়ে পাকিস্তানি হানাদারদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার দামাল ছেলেরা। এরপর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। যুদ্ধে সেই দিনগুলো স্মরণ, শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং শত্রুর বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় ভাস্কর্য রয়েছে। যেগুলো চির জাগ্রত হয়ে যুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোকে ফুটিয়ে তোলে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এমনি একটি ভাস্কর্য ‘মুক্তবাংলা’।
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের অন্যতম এই স্মারক ভাস্কর্যটি আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের আঙ্গিকে ১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের পূর্ব পাশে স্থাপন করা হয়। খ্যাতিমান স্থপতি রশিদ আহমেদের নকশার ভিত্তিতে এটিকে অপরূপ এক সৌন্দর্যে রূপ দেওয়া হয়। যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের সঙ্গে মিশে আছে।
‘মুক্তবাংলা’র সাতটি স্তম্ভ সম্বলিত গম্বুজের ওপর রয়েছে দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার রাইফেল, যা সাত সদস্যের মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রীসভার প্রতীক। প্রতিটি স্তম্ভ বিস্তৃত প্রসারিত হাত উল্লাসিত অবয়বে স্থাপত্য ভিত্তিক আর্চ রচিত, চোখে লাল সূর্য উদয়ের প্রত্যাশা। সর্বনিম্নে বিস্তৃত সিরামিক বড় ইট লাগাতর আন্দোলনের নির্দেশক। এছাড়া উপর থেকে চতুর্থ ধাপে লাল সিরামিক ইট আন্দোলন ও যুদ্ধের প্রতীক, দ্বিতীয় ধাপে কালো পাথর শোক ও দুঃখের প্রতীক, তৃতীয় ধাপে সাদা মোজাইক সন্ধি ও যোগাযোগের প্রতীক এবং বেদির মূল মেঝে সবুজ মোজাইক নীল টাইলস শান্তির প্রতীক। সম্পূর্ণ অবকাঠামোটি সাতটি আর্চ সম্বলিত একটি অর্ধ উদিত (উদীয়মান) সূর্য।
মুক্তবাংলার এই সৌন্দর্য ও বিশেষত্ব উপভোগ করতে শিক্ষার্থীরা ছাড়াও প্রতিদিন দর্শনার্থীর পদচারণা ঘটে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ প্রিয় মানুষের আগমন ঘটে এখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভিতরে ঢুকতে ডানদিকে সবার নজর কাড়ে ব্যতিক্রমী মুক্তিযুদ্ধের এই স্থাপত্য কর্মটি।