অডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনায় বেকায়দায় পড়ে ক্ষমা চাওয়ার পরও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভার। সেই অডিও ফাঁসের ঘটনায় ফের নতুন বিতর্কে জড়ালেন এ নেত্রী। এবার দুই ছাত্রীকে ৭ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন এবং নগ্ন করে ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করার হুমকির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের এই নেত্রীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ছাত্রীরা এ গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে রিভা দাবি করেছেন, তিনি উল্লিখিত সময়ে হলে ছিলেন না।
ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিযোগ, সেই অডিও
ফাঁস হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে রিভা মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজিয়া হলের ২০২ নাম্বার কক্ষ
থেকে বঙ্গমাতা হলের ১১০৭ নাম্বার রুমে নিয়ে যান দুই ছাত্রীকে। বিকেল ৫.৩০টা পর্যন্ত
সেখানে দুজনকে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য ও রাজিয়া
হলের প্রাধ্যক্ষ প্রাধ্যক্ষ নারগিস রুমা গিয়ে
দুজনকে করে হল অফিসে নিয়ে আসেন। মঙ্গলবার রাত ১১টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও ওই দুই
ছাত্রী হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষে অবস্থান করছিলেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, সেই
অডিও কে রেকর্ড করল আর ফাঁস করল - তা জানতে তাদের সকাল ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত
রিভার কক্ষে আটকে রাখা হয়।
দুই ছাত্রীকে রিভার কক্ষে আটকে রাখার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রাজিয়া বেগম হলের প্রাধ্যক্ষ নার্গিস রুমা গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা এসেছি। ঘটনার তদন্ত করব। এ ঘটনায় ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে অডিও ফাঁসের ঘটনায় তিনি জানিয়েছিলেন, হলের বিষয়টি হল কর্তৃপক্ষ দেখবে।
এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী তামান্না
জেসমিন রিভা বলেন, একটা মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সংবাদ করাতে চাইছে। আমি কাকে
নাকি নির্যাতন করেছি এমন বর্ণনা নিয়ে তারা এটা করাতে চাইছে। আমি সকাল থেকে ক্যাম্পাসের
নিচে আমাদের প্রোগ্রাম নিয়ে সবাইর সঙ্গে ছিলাম। সন্ধ্যার পরে পার্টি অফিসে গেছি। তারা
যে সময়ের কথা বলছে আমি সে সময়ে ছিলামই না।
এর আগে তামান্না জেসমিন রিভার একটি অডিও
ক্লিপ ফাঁস হয়। যেখানে ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ার কারণে কক্ষে রাজিয়া বেগম ছাত্রীনিবাসের
২০২ নম্বর রুমের কয়েকজন ছাত্রীকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিতে শোনা যায় তামান্নাকে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সেই অডিওতে তামান্নাকে
বলতে শোনা যায়, ‘বেশি চ্যাটাং চ্যাটাং করতেছিস। এক পায়ে
পাড়া দিমু, আরেক পা টাইনা ধইরা ছিঁড়া ফেলমু। চার মাস হয়ে গেছে ফাইজলামি শুরু করছিস৷
তোরা লিগ্যাল তাতে আমার...। কোন হ্যাডাম দেখাইতেছিস তোরা? আমার পলিটিক্যাল রুমে তোরা
লিগ্যাল থাকবি কি না, সেটা তোদের বিষয়। কে কে টাকা জমা দিছিস? আমারে দিছিস? বুঝিস না,
পলিটিক্যাল রুমে থাকিস! তোদের লিগ্যাল করাইছে, তাতে আমার...? আমি যদি একটা সিট না দেই,
২০২ থেকে তোদের কোন বাপ সিট দেবে? ম্যাডামরা দেবে? ক্ষমতা আছে ম্যাডামদের?’
একপর্যায়ে এক ছাত্রীকে বলতে শোনা যায়,
‘ও তো অসুস্থ,
বাসায় গেছে।’
উত্তরে তামান্না বলেন, ‘২০২-এ আর লিগ্যাল
কে? তোরা লিগ্যাল, তাতে আমার কি…? আমি কি...তোদের? ম্যাডামদের ক্ষমতা
আছে, আমাদের রুম থেকে একটা মেয়েকে বের করার? ইডেন কলেজের প্রিন্সিপালেরও ক্ষমতা নেই
এই রুম থেকে একটা মেয়েকে বের করার। রুমটা যেহেতু ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্ট নিয়ে নিছে,
ইডেন কলেজের প্রেসিডেন্টের ওপরে আর কেউ নাই। একদম গলায় পাড়া দিয়ে ধরতে ইচ্ছা করতেছে।’
ভাইরাল হওয়ার পরই শুক্রবার রাতে তামান্না
নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষমা চান।