ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের আট মাস পেরিয়েছে। মস্কো বাহিনী ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোগুলোয় ক্রমেই হামলা তীব্রতর করছে। ক্রাইমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়াকে সংযুক্তকারী ইউরোপের বৃহত্তম রেল ও সড়ক সেতুতে ভয়াবহ হামলার ঘটনায় ইউক্রেনকে অভিযুক্ত করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ হামলা বাড়িয়েছে। মূলত তার এ অভিযোগের পরই ইউক্রেনজুড়ে বেসামরিক অবকাঠামোতে বেড়ে চলেছে রাশিয়ার হামলা। কয়েক মাস ধরে রাজধানী কিয়েভসহ রাশিয়ার শেল ও ড্রোন প্রথমবারের মতো ইউক্রেনীয় শহরগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। এ হামলায় এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ক্ষয়ক্ষতি ৭৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটি।
ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্মিহাল বলেছেন, রাশিয়ার আক্রমণের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি এরই মধ্যে ৭৫ হাজার কোটি ডলার (৭৬ হাজার ২০০ কোটি ইউরো) ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত আগস্টে বিশ্বব্যাংক, ইউরোপিয়ান কমিশন ও ইউক্রেনীয় সরকার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ১ জুন পর্যন্ত ইউক্রেনের মোট ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করেছে ২৫ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি। তাছাড়া দেশটির পুনর্গঠন এবং পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন হবে ৩৪ হাজার ৮৫০ কোটি ডলার। এ হিসাব করা হয়েছিল ইউক্রেনের মূল শহর ও জ্বালানি অবকাঠামোগুলোয় রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর আগে। সপ্তাহান্তে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে অনুমান করা হয়েছে, ইউক্রেনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। ডেনিস শ্মিহাল অবশ্য যুদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবে রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জি৭-এর সদস্য ও ইউরোপিয়ান কমিশনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে জার্মানি জোর দিয়ে বলে যে, এটি বিশেষজ্ঞদের একটি শীর্ষ সম্মেলন, কোনো দাতা সম্মেলন নয়। জি৭ ও জি২০ নেতৃস্থানীয় অর্থনৈতিক শক্তির প্রতিনিধিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন। রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান হামলার কারণে ইউক্রেনের পুনর্গঠন ব্যয় ক্রমে বেড়েই চলেছে। বৈদেশিক অনুদান ও ঋণের মাধ্যমে ইউক্রেন সরকার বাজেটের এক-তৃতীয়াংশের সংস্থান করতে পারলেও দেশটির বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ৩৯৪ কোটি ডলার।
কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির সমীক্ষা অনুসারে, ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডা তাদের প্রতিশ্রুতি অনুসারে যৌথভাবে ঋণ, মানবিক সাহায্য ও যুদ্ধের সরঞ্জাম বাবদ কিয়েভকে ৯ হাজার ৩০০ কোটি ইউরো দিয়েছে। যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের জিডিপি সংকুচিত হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। চলমান যুদ্ধের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি, রয়েছে ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামোর পুনর্গঠন ব্যয়ের খরচও। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন ইউক্রেনের জন্য একটি মার্শাল তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য ওয়াশিংটন মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের একটি মার্শাল ফান্ড গঠন করেছিল।
সোমবার একটি যৌথ নিবন্ধে ওলাফ শুলজ ও উরসুলা ভন ডার লিয়েন লিখেছেন, ইউক্রেন পুনর্গঠনের জন্য অবিলম্বে আমাদের প্রজন্মগত প্রচেষ্টা শুরু করা উচিত। ধ্বংস হওয়া আবাসিক ভবন, স্কুল, রাস্তা, সেতু নির্মাণ শুরু করতে হবে—ইউক্রেন যাতে দ্রুত নিজের পায়ে ফিরে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।