ইউরোপের বিস্তীর্ণ
অঞ্চল জুড়ে হঠাৎ থমকে গিয়েছে নেট পরিষেবা! যার জেরে ব্যাপক ভাবে ব্যহত জনজীবন।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের
আবহে ঘটনাটি আতঙ্ক আরও বহু গুণ বাড়িয়ে তুলেছে ওই মহাদেশে। কিন্তু প্রশ্ন হল এই বিপত্তি
ঘটল কী করে? বিভিন্ন সূত্রের দাবি, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আগ্রাসী পদক্ষেপ যুদ্ধের
চেহারা নেওয়ার পরপরই চালানো হয় একটি সাইবার হামলা। যার জেরেই এই বিপত্তি।
এর সবচেয়ে বেশি
প্রভাব পড়েছে ফ্রান্সে। তালিকায় রয়েছে জার্মানি, হাঙ্গেরি, গ্রিস, ইটালি এবং পোল্যান্ডের
মতো ইউরোপীয় দেশগুলিও। ফ্রান্সের অন্যতম প্রধান ইন্টারনেট সরবরাহকারী সংস্থা ‘নর্ডনেট’-এর দাবি, দেশের প্রায় ন’হাজার গ্রাহক পরিষেবা থেকে বিচ্যুত হয়েছেন।
ফ্রান্সের পাশাপাশি একাধিক ইউরোপীয় দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করে ‘বিগব্লু স্যাটালাইট
ইন্টারনেট সার্ভিস’। তাদের মূল সংস্থা
‘ইউটেলসেট’ জানিয়েছে, মহাদেশ জুড়ে তাদের কমপক্ষে
৪০ হাজার গ্রাহকের পরিষেবা আটকে গিয়েছে!
সাইবার বিশেষজ্ঞদের
মতে এর নেপথ্যে রয়েছে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আমেরিকান ‘স্যাটালাইট অপারেটর’ ‘ভিয়াসেটের’ উপর হওয়া একটি সাইবার হানা। যেটিকে ‘সাইবার ইভেন্ট’ নামেই অভিহিত করা হচ্ছে। কথাটি স্বীকার
করে নিয়েছেন কেএ-স্যাট উপগ্রহ নির্ভর ভিয়াসেট কর্তৃপক্ষ। বুধবার তাঁরা জানান, ইউক্রেন
এবং আশপাশের ইউরোপীয় দেশগুলিতে আংশিক ভাবে নেট পরিষেবা ব্যহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।
যদিও এর চেয়ে এই বিষয়ে আর একটিও শব্দ খরচ করতে চাননি তাঁরা। সাফ জানিয়েছেন, বিভিন্ন
দেশের অংশীদারেরা বিষয়টি জানে। জানানো হয়েছে পুলিশকেও। তাদের সাহায্য নিয়ে তদন্ত সঠিক
পথেই এগোচ্ছে।
ইন্টারনেট পরিষেবা
ব্যহত হওয়ার জেরে জার্মানি এবং মধ্য ইউরোপে প্রায় ৫৮০০টি বায়ুচালিত টারবাইন চালু করা
যাচ্ছে না। কারণ এগুলি মূলত ‘রিমোট’ পদ্ধতিতে চালানো হত। যা থেকে প্রায় ১১টি
গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধ আবহে ইন্টারনেট পরিষেবার উপর এই কোপের ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে মিলিটারি এবং
সাইবার বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, বিষয়টি আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে বলেই
ইঙ্গিত দিচ্ছে। তেমনটা হলে ইউক্রেন এবং রাশিয়া তো বটেই গোটা বিশ্বের উপরেই এর গুরুতর
প্রভাব পড়তে চলেছে। এমনকি ‘সাইবার রণক্ষেত্র’ তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না
কোনও তাঁরা।
এ দিকে জাতীয়
চ্যানেলগুলির উপর ‘সীমাবদ্ধতা’ চাপানোর অভিযোগ তুলে দেশ জুড়ে সোশ্যাল
মিডিয়া অ্যাপ ফেসবুক ব্লক করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করল রাশিয়া। এই প্রসঙ্গে ফেসবুকের মূল
সংস্থা মেটার ‘গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স’ দফতরের প্রধান নিক ক্লেগের টুইট, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি
হাজার হাজার সাধারণ রুশ নাগরিক সঠিক তথ্য থেকে বঞ্চিত হবেন, নিয়মিত পরিবার-বন্ধুদের
সঙ্গে যোগাযোগে দাড়ি পড়বে তাঁদের এবং নিজেদের মতামত ব্যক্ত করার রাস্তা বন্ধ হবে।’’ যদিও একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, ‘‘আমাদের পক্ষে
যেটুকু সম্ভব আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। যাতে পরিষেবা ফেরানো যায়, যাতে মানুষ নিরাপদ
এবং সুরক্ষিত ভাবে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারে এবং যথাযথ পদক্ষেপ সংগঠিত করতে পারে।’’
সমাজ মাধ্যমের
পাশাপাশি প্রচার মাধ্যমগুলির উপরেও পাঞ্জা শক্ত করছে ক্রেমলিন। সম্প্রতি ইচ্ছাকৃত ভাবে
‘ভুয়ো খবর’ ছড়ানোর দায় প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের
প্রায় ১৫ বছর পর্যন্ত জেলের বিধান এনেছে মস্কো। যদিও মস্কোর চোখে কোন খবরটি ভুয়ো আর
কোনটি নয় তা নির্ধারণ করার মাপকাঠি স্পষ্ট নয় সংবাদমাধ্যমগুলির কাছে। এই প্রেক্ষিতে
রাশিয়ায় তাদের সম্প্রচার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’। আগেই এই পথে হেঁটেছে ‘বিবিসি’ এবং ‘কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং
কর্প’-এর মতো সংবাদমাধ্যমগুলি।
অন্য দিকে, ইউক্রেনের
উপর তাদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ায় নিজেদের পরিষেবা এবং পণ্য বিক্রি দুই-ই আপাতত
বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রযুক্তি সংস্থা ‘মাইক্রোসফ্ট’। রুশ আগ্রাসনের বিরোধিতা করেই যে এই পদক্ষেপ
তা স্পষ্ট করতে ভোলেনি সংস্থাটি।