নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ইস্যুতে
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জাতীয় পার্টির সংলাপ শুরু হয়েছে। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বিকাল ৪টায়
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে দলটির সংলাপ শুরু হয়।
এরআগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম
মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিকাল চারটার কিছুক্ষণ আগে
বঙ্গভবনে প্রবেশ করে।
জাপার সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে নতুন ইসি
গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরু হলো। রাষ্ট্রপতি পর্যায়ক্রমে দেশের নিবন্ধিত সবগুলো রাজনৈতিক
দলের সঙ্গে সংলাপ করবেন। সংলাপ শেষ করে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে সুপ্রিম কোর্টের
একজন বিচারকের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করবেন।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত সদস্য যাচাই-বাছাই
করে এবং নিজেরাও কিছু ব্যক্তির নামসহ কমিটি নতুন ইসি গঠনে নাম প্রস্তাব করবে। রাষ্ট্রপতি
তাদের মধ্য থেকে নতুন ইসি গঠন করবেন।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান
জিএম কাদেরের নেতৃত্বে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কোচেয়ারম্যান রুহুল
আমীন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম, মহাসচিব মুজিবুল
হক চুন্নু ও সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সংলাপে অংশ নিয়েছেন।
জানা গেছে, দলটি রাষ্ট্রপতির কাছে ৫ দফা
প্রস্তাবনা তুলে ধরবে।
বঙ্গভবনের নির্দেশনা অনুযায়ী, সংলাপে অংশ
নিতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। করোনা সংক্রমণের কারণে
এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপের পর আগামী
২২ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ (ইনু), ২৬ ডিসেম্বর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি
ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, ২৭ ডিসেম্বর তরিকত ফেডারেশন ও খেলাফত মজলিস, ২৮
ডিসেম্বর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপ করবেন
রাষ্ট্রপতি। অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সিডিউল এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল
হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি নতুন
কমিশন নিয়োগ দেবেন।
সংবিধান অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার
ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হাতে। গেলো এক দশকে সাবেক রাষ্ট্রপতি
মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে সর্বশেষ দুটি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ
দিয়েছিলেন।
সাংবিধানিক সংস্থা ইসির সদস্যদের নিয়োগে
আইন করার কথা থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তা
হয়নি। এ নিয়োগ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিরোধী দলগুলোর সমালোচনার মুখেও
পড়তে হয়েছে সরকারকে। অবশ্য এবার সরকারও ইসি গঠনে আইন প্রণয়নে তার ইতিবাচক অবস্থানের
কথা জানিয়েছে। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, তারা
সময়ের স্বল্পতার কারণে এবার আইন করতে পারছেন না। সার্চ কমিটির মাধ্যমেই এবারও ইসি গঠন
করা হবে। চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের আগামী দুটি অধিবেশনের মধ্যে তিনি ইসি গঠন সংক্রান্ত
আইন সংসদে তুলনে পারবেন। এর খসড়া তৈরি করা হচ্ছে বলেও আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে প্রধান নির্বাচন
কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে প্রণীত কোনও আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং
অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন বলে সংবিধানে উল্লেখ রয়েঢছে।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি গঠনের
আগে ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। একমাস
ধরে ৩১টি দলের সঙ্গে চলা ওই সংলাপ ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি শেষ হয়। সার্চ কমিটি গঠন
করার পর সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই কমিটির কাজের সাচিবিক দায়িত্বও
থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হাতে।