ইউক্রেনে রাশিয়ার
‘বিশেষ সামরিক অভিযান’র জেরে আন্তর্জাতিক
বাজারে চরম অস্থিরতা শুরু হয়েছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বৃহস্পতিবার ব্যারেলপ্রতি
১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা গত সাত বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ।
প্রাকৃতিক গ্যাসের
দাম বাড়ছে হু হু করে। বিশ্বব্যাপী শেয়ার ও সূচকের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। সেই সঙ্গে সোনা
ও অ্যালুমিনিয়ামের দামও বাড়তে শুরু করেছে। খবর বিবিসি, ব্লুমবার্গ, সিএনবিসি ও গার্ডিয়ানের।
সৌদি আরবের পর
সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল রপ্তানি করে রাশিয়া। সেইসঙ্গে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক
গ্যাস রাশিয়াতেই উত্তোলন করা হয়। আর ওই গ্যাসের ওপর ইউরোপ অনেকটা নির্ভরশীল।
ইউরোপে আগাম কেনাবেচায়
বৃহস্পতিবার প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের (৪২ মার্কিন গ্যালন বা ১৫৯
ব্রিটিশ লিটার) দাম ৮ শতাংশ বেড়ে ১০৪ দশমিক ৫০ ডলারে উঠেছে।
এটি ২০১৪ সালের
পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ দাম। বুধবার প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড
অয়েলের দাম ৯৯ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারিমিডিয়েট
(ডব্লিউটিআই) তেল ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বুধবার প্রতি
ব্যারেল ডব্লিউটিআই তেল ৯৬ ডলার পর্যন্ত উঠে আবার কমেছিল।
এদিকে যুদ্ধের
ধামামায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও বেড়েছে। ইউরোপের বাজারে প্রাকৃতিক
গ্যাসের দাম বৃহস্পতিবার প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়।
এছাড়া নিরাপদ
বিনিয়োগ খ্যাত সোনার দামও ঊর্ধ্বমুখী। স্পট মার্কেটে পণ্যটির আউন্সপ্রতি দাম ৩ শতাংশ
বেড়ে ১ হাজার ৯৬৯ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অ্যালুমিনিয়ামের দাম রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। লন্ডনে
অ্যালুমিনিয়ামের দাম প্রতি টন রেকর্ড ৩ হাজার ৪৪৩ পাউন্ডে ঠেকেছে।
ইউক্রেনে রুশ
আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আরও বাড়বে-এমন আশঙ্কা
এখন প্রবল। সিএমসি মার্কেটসের বিশ্লেষক টিনা টেং বলেছেন, দাম আরও বাড়বে। জেপিমরগান
চেজ অ্যান্ড কো. বলছে, ইউক্রেন নিয়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকলে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে
তেলের গড় দাম ১১০ ডলারও ছাড়াতে পারে। পরবর্তী প্রান্তিক পর্যন্ত এ উচ্চ দাম অব্যাহত
থাকতে পারে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পদক্ষেপের কারণে জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি
মোকাবিলায় মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশটিতে জরুরি সরবরাহ চালু রাখার চেষ্টা করছে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন।
সামরিক হামলা
শুরু করার আগে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনের পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র,
যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান প্রভৃতি
দেশ চাপ সৃষ্টি করতে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। তাতে কোনো
কাজই হয়নি। রাশিয়া না থেমে বরং গত রাতভর পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে (দোনেস্ক ও লুহানস্ক)
হামলা চালিয়েছে। শুধু তাই নয়-যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্ব এবং জাপানা
ও অস্ট্রেলিয়ার ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা ও বিরোধিতাকে পাত্তা না দিয়ে রাশিয়া পালটা পদক্ষেপ
হিসাবে বিশ্ববাজারে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি কমিয়ে দিতে পারে। কারণ আন্তর্জাতিক
বাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম বা ১০ শতাংশ জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক হলো রাশিয়া। সবচেয়ে বেশি
পরিমাণ তেল রপ্তানি করে সৌদি আরব।
ইউক্রেন ইস্যুতে
রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্টসহ পশ্চিমা দেশগুলোর তিক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে
তৃতীয় দিনের মতো এশিয়ার শেয়ারবাজারে সূচকের পতন ঘটেছে। এর মধ্যে জাপানের টোকিও স্টক
এক্সচেঞ্জের নিক্কেই ২২৫ সূচক ১ দশমিক ৮১ শতাংশ ও হংকংয়ের হেংসেং সূচক ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ
কমেছে। ইউরোপের শেয়ারবাজারগুলোতেও এদিন বড় পতন হয়েছে। যুক্তরাজ্যের এফটিএসই-১০০ সূচক
বৃহস্পতিবার ১৮৯ পয়েন্ট বা ২.৫ শতাংশ কমে ৭ হাজার ৩০৮ পয়েন্টে ঠেকেছে। জার্মানির ড্যাক্স
সূচক ৩.৪ শতাংশ কমে ১৪ হাজার ১২৭ এ দাঁড়িয়েছে। ফ্রান্সের প্যারিসের সিএসি ৪০ সূচক ৩.৩
শতাংশ কমে ৬ হাজার ৫৫৭ পয়েন্টে ঠেকেছে ও ইতালির এফটিএসই সূচক ৩.৭ শতাংশ কমেছে। ইউরোপীয়
ব্যাংকিং শেয়ারগুলো সকালে ৪ শতাংশের বেশি কমে যায়। রাশিয়ার শেয়ারবাজারের সূচক আরটিএস
প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ডাউজোন্স সূচক ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি
৫০০ সূচক ১ শতাংশ ৮৪ শতাংশ ও নাসড্যাক ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমেছে।