মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে সব শ্রমিক
কাজে যোগ দিয়েছেন। সোমবার (২৯ আগস্ট) সকাল ৮টা থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুসকুঁড়ি, কালিঘাট,
ফুলছড়া ও সাতগাঁওসহ জেলার সব চা বাগানের শ্রমিক দলে দলে কাজে যোগ দেন।
ফুলছড়া চা বাগানের শ্রমিক সর্দার নায়ারণ
বাকতি বলেন, ‘রবিবার (২৮ আগস্ট) সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এই বাগানের
শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেননি। আজ থেকে সবাই পুরোদমে কাজে যোগ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মজুরি
বাড়িয়ে দিয়েছেন। ১৭০ টাকা মজুরি সবাই খুশি। তবে দাবি একটাই, ক্যাজুয়াল শ্রমিকরা যেন
সমান মজুরি পায়।’
ফুলছড়া বাগানের সেকশনের ভেতরে ঢুকতেই কথা
হয় চা শ্রমিক জোৎস্না বাকতি, মিরা কুর্মী, পূর্ণিমা ভূমিজ, জয়া ভূমিজ, অর্চনা গোয়ালারসহ
অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘১৯ দিন ঘরে বসে ছিলাম। দুই বেলা আটা-রুটি,
আর এক বেলা ভাত খেয়েছি। কোনও কোনও দিন কিছুই খেতে পারিনি। বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম।
আজকে কাজে আসছি, মজুরি পাবো, তারপর ডাল-ভাত খাইতে পারবো। আন্দোলনের সময় দোকানদার বাকিতে
কিছু দিতো না। কত কষ্টে কাটাইছি। আমরা সবাই ক্যাজুয়াল শ্রমিক। যারা পার্মানেন্ট তারা
১৭০ টাকা পাবে। আর ক্যাজুয়াল শ্রমিক তাদের চেয়ে একটু কম পাবে। আমাদের দাবি, সবাইকে
সমান মজুরি দিতে হবে।’
চা শ্রমিক পলি কুর্মী বলেন, ‘অফিসে বাবু সাহেবরা
কাজে যাইতে অনুমতি দিসে। আজকে প্রথম কাজে যোগ দিছি। পাতা শক্ত, তুলতে খুব কষ্ট হয়।
খারাপ লাগছে, এত সুন্দর পাতাগুলো নষ্ট হইছে।’
কালিঘাট চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি
অভান তাঁতি বলেন, ‘আজ ক্যাজুয়াল ও পার্মানেন্ট শ্রমিকেরা
কাজে যোগ দিয়েছেন। কেউ ঘরে বসে নেই। সবাই খুশিতে নাচ-গান করেছে।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত
সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘আজকে শতভাগ শ্রমিকরা কাজে গেছেন।
তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘স্থায়ী শ্রমিক
যে মজুরি পায় এবং একজন ক্যাজুয়াল শ্রমিক যাতে সমান মজুরি পায়, সেটা চুক্তিতে উল্লেখ
আছে। কিছু কিছু বাগানে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দিয়ে থাকে। এখন মজুরি বাড়ছে, বাগান মালিকরা
ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের কত দেবে, সেটা পরে জানতে পারবো।’
প্রসঙ্গত, ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরির দাবিতে
গত ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও ১৩ আগস্ট থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের
জন্য ধর্মঘট পালন করে আসছিলেন চা শ্রমিকরা। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা
শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানছিলেন না অনেকে।
চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি নির্ধারণে শনিবার
(২৭ আগস্ট) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৩ জন চা শিল্প মালিকের বৈঠক হয়। বৈঠকে চা
শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পরদিন থেকে কাজে যোগ দিচ্ছেন চা
শ্রমিকরা।