শয়তান মানুষ শিকার করে। সে বনি আদমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করে। বনি আদমকে ফাঁদে ফেলে শিকার করার জন্য নানান কৌশল অবলম্বন করে। আল্লাহ তায়ালা
যখন তাকে বিতাড়িত করলেন, তখন সে বনি আদমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। সে আল্লাহ তায়ালাকে
বলল, ‘আমিও তোমার সরল পথে বনি আদমের জন্য ওঁত পেতে থাকব।
অতঃপর আমি তাদের কাছে আসব। তাদের সামনে থেকে, পেছন থেকে, ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে।
তুমি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে পাবে না।’ (সুরা আরাফ : ১৬-১৭)
কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয় এর প্রতিটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করা হবে।” (সুরা বনি
ইসরাঈল: ৩৬)
আমার সবসময় এ ভয় করা উচিত যে, আমি যদি এ চোখ দিয়ে আল্লাহ
তায়ালার নাফরমানি করি, হারাম জিনিস দেখি, আর আল্লাহ আমার এ চোখ অন্ধ করে দেন, ছিনিয়ে
নেন দৃষ্টিশক্তি!
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আমি চাইলে তাদের চোখ (দৃষ্টিশক্তি) লোপ করে দিতাম।
তখন তারা পথ চলতে চাইলে কীভাবে দেখতে পেত!’ (সুরা ইয়াসীন: ৬৬) সুতরাং বেশি বেশি দোয়া করা উচিত, হে আল্লাহ! আমাকে
রক্ষা করো চোখের যাবতীয় গুনাহ থেকে। সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গুনাহ থেকে।
আমি পথ চলি আর চোরা চোখে এদিক ওদিক তাকাই। নারীদের
দিকে খারাপ চোখে দেখি। আমি ভাবি, কেউ আমাকে দেখছে না। আল্লাহ আমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন;
না বান্দা! কেউ দেখছে না, এমন নয়। তোমার সঙ্গে চলতে থাকা মানুষ বা পৃথিবীর কোনো মানুষ
যদি না দেখে, তোমাকে যিনি এ চোখ দান করেছেন, তিনি কিন্তু দেখছেন সেটা মনে রাখা দরকার।
তিনি পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘তিনি (আল্লাহ)
জানেন চোখের চোরাচাহনি এবং সেইসব বিষয়ও, যা বক্ষদেশ লুকিয়ে রাখে।’ (সুরা মুমিন : ১৯)
কেউ কেউ মনে করে যে, একবার দেখলে সমস্যা নেই (সুতরাং
একবার তাকাই)। এটা তাদের বুঝার ভুল। প্রথম কাজ তো দৃষ্টি অবনত রাখা, যার নির্দেশ আল্লাহ
কোরআনুল কারিমে দিয়েছেন। এটি রক্ষা করার পরও যদি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যায় তাহলে করণীয় কী?
এ সম্পর্কে এক সাহাবী রাসূলে কারিম (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ‘তুমি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও’। (সুনানে আবু দাউদ: ২১৪৮)
আর আলী রা. কে নবীজি সা. বলেছেন, ‘হে আলী! (হঠাৎ) দৃষ্টি পড়ে যাওয়ার পর আবার দ্বিতীয়বার
তাকিয়ো না। কারণ, (হঠাৎ অনিচ্ছাকৃত পড়ে যাওয়া) প্রথম দৃষ্টি তোমাকে ক্ষমা করা হবে,
কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না। (তিরমিজি: ২৭৭৭)
আমার প্রিয় চোখ। আমি যদি তা আল্লাহর হুকুম মতো ব্যবহার
না করি, হারাম জিনিস দেখি, তাহলে আমার চোখই কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার দরবারে
আমার নামে নালিশ করবে। হে আল্লাহ! সে আমার দ্বারা অমুক পাপ করেছে। অমুক হারাম বস্তুর
দিকে তাকিয়েছে। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের কান, তাদের চোখ, তাদের ত্বক তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সাক্ষী দিবে তাদের বিরুদ্ধে।
(সুরা হা-মীম আস সাজদাহ : ২০)
চোখের ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গুনাহ থেকে কিভাবে
বাঁচতে পারি, সে জন্য আমাদের সবসময় সচেষ্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি কোরআন-হাদিসে বর্ণিত
কার্যকরী কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে আমরা চোখের গুনাহ সহ অন্যান্য গুনাহ থেকে বেঁচে
থাকতে পারবো।
> অসৎ সঙ্গ থেকে দূরে থাকো । (সহিহ বুখারী)
> সামর্থ্য থাকলে দ্রুত বিবাহ করা, না হয়, রোযা
রাখা। (সহিহ বুখারী)
> মনে রাখা যে, এটা এক ধরনের যেনা (ব্যাভিচার) যা
চোখ দ্বারা সম্পন্ন হয়ে থাকে ।
> পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করা । কারণ,
নামাজ মানুষকে যাবতীয় গুনাহ থেকে দূরে রাখে।
> সেসব স্থান পরিহার করা, যেখানে সর্বদা অশালীন
কথা ও কাজ হয়ে থাকে। (সহিহ বুখারী)
> কোনো কিছু দেখার সময় আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা
।
> মন্দ কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ইস্তিগফার পড়া।
> যে নিজেকে
শুদ্ধ রাখতে চাই,আল্লাহ তাকে শুদ্ধ রাখেন। (সহিহ মুসলিম)
> খারাপ কিছু প্রথমবার অসাবধানতাবশত দেখলে তাতে
কোনো গুনাহ হয় না, কিন্তু দ্বিতীয় বার দেখল তাতে গুনাহ হবে । (আবু দাউদ শরীফ)
> সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, প্রত্যেকটি দৃষ্টি সম্পর্কে
কিয়ামতের দিন আমাকে প্রশ্ন করা হবে ।