প্রায় সাত মাস ধরে চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়া বিরল এক পদক্ষেপ হিসেবে তিন লাখ রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো রিজার্ভ সৈন্যদের ফের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। রাশিয়ার কাছ থেকে প্রায় ছয় হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা ইউক্রেন পুনরায় দখল করে নেওয়ার দু’সপ্তাহের মধ্যে মস্কো রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। রিজার্ভ সৈন্য তলব করার পর রাশিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় এক হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করেছে। পুতিনের ওই ঘোষণার পর রাশিয়ার অনেক নাগরিক দেশের বাইরে চলে যেতে চাচ্ছে। কারণ এই নাগরিকরা ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দিতে চান না।
কেন রিজার্ভ সৈন্য তলব?
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বলেছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য তিন লাখ রিজার্ভ সৈন্যকে তলব করা হবে। এই সংখ্যা রাশিয়ার মোট আড়াই কোটি রিজার্ভ সৈন্যের মাত্র এক শতাংশ। রাশিয়ায় সামরিক প্রশিক্ষণ আছে এমন সাধারণ মানুষকে রিজার্ভ সৈন্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। এছাড়া রিজার্ভ তালিকায় সাবেক সৈন্যরাও রয়েছেন। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে রাশিয়া প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার নিয়মিত সৈন্য মোতায়েন করেছে বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে এর দ্বিগুণ রিজার্ভ সৈন্য তলব করা হয়েছে। তবে এই রিজার্ভ সৈন্যদের কীভাবে মোতায়েন করা হবে; সেটি এখনও পরিষ্কার নয়।
সমর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিজার্ভ সৈন্য ডাকার অর্থ হচ্ছে যুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তুরস্কের ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক সামরিক বিশ্লেষক মুরাত আসলান বিবিসিকে বলেন, একটি যুদ্ধে নিয়মিত সেনাবাহিনী সফল হলে রিজার্ভ সৈন্য তলব করার দরকার হয় না। রিজার্ভ সৈন্য তখনই ডাকা হয়, যখন যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিয়মিত সৈন্যদের ক্ষতি সাধন হয়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে এরই মধ্যে তারা ছয় হাজার সৈন্য হারিয়েছে। যদিও পশ্চিমা দেশগুলোর হিসেবে এই সংখ্যা বিশ হাজারের বেশি হবে। সংখ্যা যাই হোক না কেন, রাশিয়া যে ক্ষতির মুখে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতোমধ্যে বলেছেন, রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত।
সমর বিশেষজ্ঞ এবং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, রাশিয়া বুঝতে পেরেছে যে এ যুদ্ধ অতি সহজে এবং সহসা শেষ হবে না। এরই মধ্যে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে জনবলের। যুদ্ধ এখন এমন একটি অবস্থায় আছে যেখানে দুই পক্ষই পরস্পরের ক্ষতিসাধন করছে।
যুদ্ধের মোড় বদলাবে?
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি কোন ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছেন না। কিন্তু ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য তার দেশ ‘সম্ভাব্য সব উপায়’ ব্যবহার করবে। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে ৫ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কিছু অস্ত্র ইউক্রেনের কাছে এসেছে এবং আরও অস্ত্র আসবে।
সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, সব অস্ত্র যদি ইউক্রেনের হাতে আসে তাহলে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যেতে পারে। এজন্য রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশ করে আগে থেকেই রাশিয়া প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইউক্রেনের রাশিয়া যেসব অঞ্চল দখল করেছে তার বেশিরভাগ এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। এর মধ্যে চারটি অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন করেছে রাশিয়া। এসব গণভোটের ফলাফল কি হবে সেটা সহজেই অনুমান করা যায়।
ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক সমর বিশেষজ্ঞ মুরাত আসলান বলেন, গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের সেসব অঞ্চলকে রাশিয়া তাদের অংশ করে নেবে। যেমন ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছিল। গণভোটের পর রাশিয়া সেসব অঞ্চলকে তারা রাশিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচনা করবে। রাশিয়া সেসব অঞ্চল ধরে রাখতে চাইবে এবং সেখানে শক্তি বাড়াবে। এজন্য পুতিন মাতৃভূমি রক্ষার কথা বলছেন বলে উল্লেখ করেন মুরাত।