কুমিল্লা সিটি
করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ বুধবার সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে
ভোটগ্রহণ, চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের বেশ আগে থেকে আজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে
ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এবার তৃতীয়বারের মতো কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়। সিটির দ্বিতীয় নির্বাচন হয় ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ।
রিটার্নিং কর্মকর্তার
দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সিটির ২৭টি ওয়ার্ডে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। এবার নির্বাচনে
মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন, পুরুষ
ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। আর হিজড়া ভোটার দুজন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে
ভোট গ্রহণ করা হবে। এতে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা
কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী হয়েছেন।
নির্বাচনকে
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গত সোমবার রাত
১২টা থেকে বন্ধ করা হয়েছে সব ধরনের প্রচারণা। খাবার ও চিকিৎসাসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ছাড়া
বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব প্রতিষ্ঠান।
কুমিল্লা সিটির
নির্বাচনে এবার মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচজন। নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কুমিল্লা
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক (রিফাত)। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও সিটির
সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক (সাক্কু) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন টেবিলঘড়ি নিয়ে।
এ ছাড়া মেয়র
পদে লড়াইয়ে আছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার।
তাঁর প্রতীক ঘোড়া। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. রাশেদুল ইসলাম হাতপাখা ও
কামরুল আহসান বাবুল হরিণ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গত ২৫ এপ্রিল
কুমিল্লা সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ১৭ মে,
মনোনয়ন বাছাই ১৯ মে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ২৬ মে। নির্বাচনের প্রতীক
বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৭ মে।
সিটি নির্বাচন
সুষ্ঠু করতে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে। কুমিল্লা
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন কর্তব্যরত অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো
সদস্য গাফিলতি বা অনিয়ম করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন
পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, দায়িত্বরত অবস্থায় কেউ গাফিলতি
ও অনিয়ম করলে ছাড় দেওয়া হবে না।
কাজী হাবিবুল
আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ভোট হচ্ছে কুমিল্লা সিটি
করপোরেশনে। এ জন্য এই নির্বাচনকে নতুন কমিশনের জন্য ‘পরীক্ষা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে প্রথম
পরীক্ষাতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন।
প্রশ্ন তৈরি
হয়েছে এই কারণে যে ‘কৌশলে’ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ায় কুমিল্লা-৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য
আ ক ম বাহাউদ্দিনকে এলাকা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।
তারপরও তিনি এলাকায় অবস্থান করেন। কিন্তু কমিশন কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি।
উল্টো সিইসি
কাজী হাবিবুল আউয়াল গত রোববার সংসদ সদস্যকে নিয়ে কমিশনের অসহায়ত্বের কথা বলেন। আর সোমবার
বিষয়টি নিয়ে দুই নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ও
রাশেদা সুলতানা কুমিল্লায় সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন। তাঁরা বলেছেন, একজন সম্মানিত
লোককে টেনেহিঁচড়ে নামানো কমিশনের কাজ নয়।
নির্বাচন কমিশনের
বারবার তাগাদা, প্রার্থীদের সমালোচনার মুখে নাছোড় আ ক ম বাহারউদ্দিন ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
না করেও চলে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তাঁর এই অবস্থানের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন
মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক।
এমন পরিস্থিতিতে
আজ ভোট হচ্ছে কুমিল্লায়। এ নির্বাচনে টেবিলঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো.
মনিরুল হক এর আগে দুই দফায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। তার আগে ছিলেন
কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান। ২০০৫ সালের পর কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি তিনি।
অন্যদিকে আওয়ামী
লীগের মেয়র প্রার্থী নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক এবারই প্রথম নির্বাচন করছেন। আরেক স্বতন্ত্র
মেয়র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনও প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছেন।