প্রায় ১৩ ঘণ্টা
পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছে লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের
সঙ্গে বৈঠকের পর শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন শ্রমিক
নেতারা।
এর আগে শুক্রবার
সকাল ৬ টা থেকে ৫ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেন লাইটার শ্রমিকরা।
এর ফলে কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট দিয়ে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। বন্দরের বহির্নোঙরে
পণ্য খালাসের জন্য যেতে পারেনি কোনো লাইটার।
আকস্মিক এ কর্মবিরতিতে
বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস ও চট্টগ্রাম থেকে অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটে পণ্য পরিবহণ কার্যত
স্থবির হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় শ্রমিকদের
সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বন্দর ভবনে উভয়পক্ষের
মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। শেষ হয় সন্ধ্যা ৭টার দিকে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার
অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানসহ বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি
ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মবিরতি প্রত্যাহারের
বিষয়টি নিশ্চিত করে লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শেখ মো. ঈসা মিয়া বলেন, বৈঠক ফলপ্রসূ
হওয়ায় আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছি। চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিলের দাবি মেনে নেওয়ার
আশ্বাস দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এই ঘাট দিয়ে চলাচল করতে লাইটার শ্রমিকদের কোনো টাকা
পয়সা দিতে হবে না। কেউ হয়রানিও করবে না। এটাই ছিল আমাদের মূল দাবি।
চট্টগ্রাম বন্দরের
বহির্নোঙরে অবস্থানরত সমুদ্রগামী মাদার ভ্যাসেল থেকে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের অভ্যন্তরীণ
রুটের জাহাজের (লাইটার) মাধ্যমে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, চিনিসহ বিভিন্ন ধরনের
পণ্য (বাল্ক কার্গো) খালাস করা হয়। লাইটার জাহাজগুলো বড় জাহাজ থেকে পণ্য বোঝাই করে
দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। এ ধরনের প্রায় ১ হাজার ২০০ জাহাজ রয়েছে। আর এসব জাহাজে
কর্মরত আছেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক।
আন্দোলনকারীদের
দাবিগুলোর মধ্যে ছিল- লাইটারেজ শ্রমিকদের ওঠানামায় ব্যবহৃত চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল,
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে প্রত্যাহার, পতেঙ্গা থানার ওসিকে অপসারণ, সাঙ্গু নদীর
মুখ খনন করে লাইটারেজ জাহাজের জন্য নিরাপদ পোতাশ্রয় নির্মাণ।
লাইটারেজ শ্রমিক
ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্দরের নিরাপত্তা বিবেচনায় কর্ণফুলী নদীর
বদলে পণ্য খালাসের জন্য অপেক্ষমাণ লাইটারেজ জাহাজগুলো পতেঙ্গা সি বিচের কাছে সাগরে
নোঙর করা হতো। সেখানকার শ্রমিকদের যাওয়া আসার জন্য ব্যবহার করা হতো পতেঙ্গার চরপাড়া
ঘাট। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ সেটি ইজারা দেয়।
ইউনিয়নের সিনিয়র
সহ-সভাপতি নবী আলম মাস্টার বলেন, চরপাড়া ঘাট শুধুমাত্র তাদের শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার
জন্য করা হয়েছিল। কিন্তু বন্দর চেয়ারম্যান কোনোরূপ আলাপ-আলোচনা ছাড়াই সেটি ইজারা দেন।
ইজারাদাররা ওই ঘাটে আমাদের কিছু শ্রমিকে কয়েকবার মারধরও করে। গত ৩ নভেম্বর আমাদের ১০-১২
জন শ্রমিককে মারধর করার পর পারকি সংলগ্ন এলাকার চাইনিজ ঘাট ব্যবহার শুরু করলে সেটিও
বৃহস্পতিবার বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করে। এতে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ধর্মঘটের ডাক
দেয়।
লাইটার জাহাজের
চলাচল তদারককারী প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কর্মকর্তারা জানান, ধর্মঘটের
কারণে সকাল থেকে লাইটার জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্দরের বহির্নোঙরে যায়নি কোনো
জাহাজ। আগে থেকে বহির্নোঙরে যেসব লাইটার ছিল, সেগুলো সীমিত আকারে পণ্য খালাস করেছে।
জাহাজগুলো সারাদিন কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটে অলস বসে ছিল। চট্টগ্রাম থেকে অভ্যন্তরীণ
নৌ-রুটেও পণ্য পরিবহণ হয়নি।