সংসারের অভাব অনটন আর পারিপার্শ্বিকতা বাধা হতে পারেনি। অদম্য ইচ্ছাশক্তির জোরে ডিঙিয়েছেন সব বাধা। ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদের সঙ্গে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেছেন মা শেফালী আক্তার। মা-ছেলের একসঙ্গে এমন সাফল্যে পরিবারে চলছে বাধভাঙ্গা আনন্দ।
গত সোমবার চলতি বছরের এসএসসির প্রকাশিত ফলাফলে মা শেফালী আক্তার পেয়েছেন জিপিএ ৪.৭৫ এবং ছেলে মেহেদী হাসান পেয়েছে জিপিএ ৪.৩৯। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় উপজেলার শিবরামপুর গ্রামে। শেফালী আক্তারের স্বামী নূরুল ইসলাম একই উপজেলার শুশুতি বাজারের বই বিক্রেতা।
ময়মনসিংহ বোর্ডের আওতাধীন মা শেফালী আক্তার আছিম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ শুশুতি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। বয়সের বাধাকে উপেক্ষা করে ৩৬ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন মা শেফালী আক্তার।
শেফালী আক্তার জানান, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা কৃষক লোকমান আলী পাশের গ্রামের নূরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দেন। এরপর পড়ালেখার সুযোগ হয়নি তার। এরই মধ্যে তিন সন্তানের জন্ম দেন। বড় ছেলে শাকিল হাসান মৃদুল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (বিইউপি) থেকে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা দিয়েছেন, ছোট ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ তার সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, মেয়ে নূপুর ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। সংসারে স্বচ্ছলতার জন্য ৭ বছর একটি এনজিওতে চাকরি করেন। যোগ্যতা না থাকায় সেই চাকরিও ছাড়তে হয় তার। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন পড়াশোনা চালিয়ে যাবার।
তিনি আরও জানান, তার কষ্ট স্বার্থক হয়েছে। ভবিষ্যতেও তিনি পড়ালেখা অব্যাহত রাখবেন।
শেফালী আক্তারের স্বামী নূরুল ইসলাম বলেন, ‘সংসারের যাবতীয় কাজ সামলিয়ে স্ত্রী যে সফলতার পরিচয় দিয়েছে তাতে আমরা অনেক খুশি।’
ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ বলেন, ‘আম্মা পাস করায় আমি বেশি খুশি হয়েছি। শত কষ্ট হলেও পড়ালেখা চালিয়ে যাব।’
শেফালীর প্রতিবেশী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক হারুন আল মাকসুদ বলেন, ‘শেফালী আক্তার ও তার ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদের ফলাফলে আমরা প্রতিবেশীরা অনেক খুশি। মা-ছেলের জন্য শুভ কামনা।’