কক্সবাজারের
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১২’শ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ
প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না জাপান সরকার। সেখানে সরকার অন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা
নিয়েছে। এদিকে শুধু বাংলাদেশই নয়, ইন্দোনেশিয়ার একটি কয়লাভিত্তিক প্রকল্পেও অর্থায়ন
না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান। কার্বন নিঃসরণ কমাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প
থেকে বিশ্বের অনেক দেশ আর বিনিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জানা যায়, বাংলাদেশের
‘মাতারবাড়ী
আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল’ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের ১২’শ মেগাওয়াট প্রকল্পে জাপানের অর্থায়ন
করার কথা ছিল। সেখানে প্রথম পর্বের ১২’শ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। দ্বিতীয়
প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করায় এখন সেখানে আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হচ্ছে না।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ,
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে জানতে চাইলে গতকাল বুধবার তিনি বলেন, জাপান এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না সেটা আগেই আমাদের বলেছে। আমরা
সেখানে এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সোলার প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ
করেছি।
তিনি বলেন,
আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মানতে গিয়ে ইতোমধ্যে সরকার প্রায় ১০টি কয়লাভিত্তিক প্রকল্প বাতিলের
সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সঙ্গে গ্রিন এনার্জি বা সোলার
বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ
বিভাগের সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, জাপান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আর কোনো
অর্থায়ন করবে না এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে মাতারবাড়ী দ্বিতীয় পর্যায়ের
১২’শ মেগাওয়াট
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে অর্থায়ন করার কথা ছিল সেটা করছে না। আমরা সেখানে
এখন অন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করব।
বিদ্যুৎ বিভাগ
সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূরে মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী
এলাকায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। দুর্গম এই উপকূলে প্রায়
এক হাজার ৬০০ একর জমিতে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেখানে
বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে সেই সব জমি ছিল এক সময় লবন চাষের। সেখানে ইতোমধ্যে
সরকার ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন করেছে, যা ২০২৪ সালের
মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়
হবে। এর মধ্যে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা দেবে ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। বাকি
টাকা বাংলাদেশ সরকারের। প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ
লিমিটেড। এদিকে একই এলাকায় আরেকটি ১২’শ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নে কাজ চলছিল। সেই প্রকল্পে
জাপান অর্থায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে সরে আসার তোরজোড় চলছে। জলবায়ু সম্মেলনসহ বিভিন্ন
আন্তর্জাতিক ফোরামে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন থেকে সরে আসতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
হচ্ছেন বিশ্ব নেতারা। জাপানও সেই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসাবেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে
অর্থায়ন থেকে সরে আসছে।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার
পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মার্কেট ফোর্সেস’ নামে একটি সংস্থা একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে,
মাতারবাড়ী দুটি কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে বায়ুদূষণের কারণে আশপাশের এলাকার প্রায়
পৌনে ছয় হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু হবে। বায়ু দূষণের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে
এসব মানুষ মারা যাবে বলে তাদের গবেষণায় বলা হয়। এছাড়া মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অর্থায়ন
বন্ধের জন্য জাপানকে ১৮ দেশের ৪৪টি নাগরিক ও জলবায়ু সংগঠন ২০২০ সালে চিঠি দিয়েছিল।
এদিকে শুধু
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক প্রকল্পই নয় ইন্দোনেশিয়ার ‘ইন্দ্রমায়ু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও অর্থায়ন না করার ঘোষণা দিয়েছে
জাপান। জানা যায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই প্রকল্পটিতে অর্থায়ন না
করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে মাতারবাড়ী অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে জাপানের
সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানানো হয়।