গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, অনেকেই আমাকে বলছে ডা. জাফরুল্লাহ এই নির্বাচন কমিশনকে অনেক ভালো বলেছেন, আপনারাও মেনে নেন। আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই ডা. জাফরুল্লাহর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। এটা তার নিজস্ব মন্তব্য। তিনি সবার শ্রদ্ধার মানুষ, জ্ঞানী মানুষ। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি বিএনপির পক্ষে কথা বলার কেউ নন। তার বক্তব্য বিএনপির বক্তব্য নয়।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজারস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং টিসিবির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে সর্বত্র পণ্য সরবরাহের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপি।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন যেটাই হোক আমরা তাতে বিশ্বাস করি না। কারণ আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনের সময় সরকারে থাকে তাহলে কোনো নির্বাচন কমিশনই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ একটি প্রতারক দল, মিথ্যাবাদী ও অত্যাচারী দল। নির্বাচন কমিশনের তালবাহানা আর মুলা দেখিয়ে কোনো লাভ হবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিল, তখন আমাদের ছেলেরা জন্ম নেয়নি, আমরাও যুদ্ধ করেছিলাম। তখন আওয়মী লীগ বলেছিল, এই দেশে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই দেশে কেউ অত্যাচার নির্যাতন করতে পারবে না। আজ ৫০ বছর পর আমার মায়েদের মুখে হাসি নেই কেন? আমার কৃষক ভাই কেন ধান-পাটের মূল্য পায় না? কেন আজ ৭০ টাকা কেজি চাল খেতে হয়? সয়াবিন তেল কেন ২০০ টাকা কেজি হয়েছে?
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য পুরো জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সত্যিকার অর্থে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র তৈরি করার জন্য। সবার চাওয়া ছিল এমন একটা রাষ্ট্র হবে যেখানে মানুষে মানুষে বিভেদ থাকবে না। মানুষ তার কথা বলতে পারবে, একটা মুক্ত সমাজ তৈরি হবে। কিন্তু আজকের এই সরকার পরিকল্পিতভাবে সেই বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিয়ে শুধুমাত্র বড় লোক হওয়ার জন্য দুর্নীতির মহোৎসব চালাচ্ছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি হচ্ছে। নিজেদের পকেট ভারি করছে, লুট করছে। লুটের টাকা বিদেশে পাচার করছে। আর দুদক পুঁটি মাছ ধরে কিন্তু বোয়াল মাছ ধরতে পারে না।
মির্জা ফখরুল আলমগীর বলেন, বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থাটা আওয়ামী লীগ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এরা নির্বাচন করবে কিন্তু মানুষ যাতে ভোট দিতে না পারে তাও নিশ্চিত করবে। তারা তাদের মতো করে সিল মেরে কিংবা ইভিএম দিয়ে ভোট নিয়ে তাদের সরকার তৈরি করবে। অর্থাৎ তারা ক্ষমতায় থাকবে ঠিকই, শুধু তারা দেখাবে যে নির্বাচন করেছি।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনো সময় আছে চাল-ডাল-তেল, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কমান। জনগণের আশা আকাঙক্ষা অনুযায়ী পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের হাতে ক্ষমতা দিন। এই দেশের মানুষের আশা আকাঙক্ষা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। সরকারে থেকে একটি ইলেকশন দিয়ে ভোট নিয়ে চলে যাবেন সেই কাজ এবার আর হবে না।
ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, শরীফুল আলম প্রমুখ।
সমাবেশে সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী।