আলোচিত জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া প্রথম পূর্ণাঙ্গ রঙিন ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে প্রথম তোলা ছবিগুলোর একটি প্রকাশ করেন। এবং বলা হচ্ছে—ছবিটি মহাবিশ্বের এযাবৎকালের পাওয়া গভীরতম দৃশ্য।
বিবিসি জানিয়েছে, জেমস ওয়েবে তোলা আরও
কয়েকটি ছবি আজ মঙ্গলবার প্রকাশ করবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
জেমস ওয়েবের তোলা ছবি প্রকাশ করতে গিয়ে
বাইডেন বলেন, ‘এ ছবিগুলো বিশ্বকে মনে করিয়ে দেবে—যুক্তরাষ্ট্র
বড় বড় কাজ করতে পারে। এবং মার্কিন জনগণকে, বিশেষ করে আমাদের শিশুদের মনে করিয়ে দেবে
যে, আমরা পারি না এমন কিছুই নেই।’
নাসার ফ্ল্যাগশিপ মিশনখ্যাত জেমস ওয়েব
স্পেস টেলিস্কোপটি হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরি। প্রথম প্রকাশ পাওয়া জেমস ওয়েবের তোলা
ঐতিহাসিক ছবিটির বিশেষত্ব হলো—এটি ৪৬০ কোটি বছর আগের সুদূর মহাবিশ্বের
ছায়াপথগুচ্ছের ছবি। এটি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের প্রথম ‘ফুল-কালার ডিপ
ফিল্ড ইমেজ’, এবং সেইসঙ্গে মানবজাতির ইতিহাসে দূর মহাবিশ্বের ‘ডিপেস্ট’ (গভীরতম) ও ‘শার্পেস্ট’ (সুস্পষ্ট) অবলোহিত
(ইনফ্রারেড) ছবি।
‘ডিপেস্ট’ বলতে কী বোঝানো
হচ্ছে?
‘ডিপ ফিল্ড ইমেজ’ হলো—যখন মহাবিশ্বের
কোনো অংশের ছবি দীর্ঘ সময় নিয়ে তোলা হয়। জেমস ওয়েবের তোলা ছবিটির ক্ষেত্রে সে সময়টি
ছিল সাড়ে বারো ঘণ্টা। নাসার আগের হাবল টেলিস্কোপ যেসব জ্যোতিষ্ক দেখতে পেত না, সেগুলোও
অনায়াসে দেখতে পাচ্ছে জেমস ওয়েবের ক্যামেরা। জেমস ওয়েবের তোলা ছবিটি মহাবিশ্বের বিশালত্বের
তুলনায় ধূলিকণার সমান।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের লক্ষ্য কী?
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মিশন হলো—মহাবিশ্বের আদিম ছায়াপথগুলোর ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যগুলো উন্মোচন করা। জেমস ওয়েবের ১০ বছরের পরিকল্পিত মিশনের ছয় মাস চলছে।
ছবিতে কী দেখা যাচ্ছে?
ছবিতে বেশি উজ্জ্বল ও লম্বাটে যেসব দাগ
দেখা যাচ্ছে—সেগুলো পৃথিবীর আবাসস্থল আকাশগঙ্গা ছায়াপথ বা মিল্কিওয়ে
গ্যালাক্সির প্রতিবেশী তারকা। এ ছাড়া অন্য আলোকবিন্দুগুলো একেকটি ছায়াপথ, তারকা নয়।
৪৬০ কোটি বছর আগের ছবি?
আমরা যখন যখন সূর্যের দিকে তাকাই, তখন
আট মিনিট ১৮ সেকেন্ড আগের সূর্য দেখি। আমরা কখনও বর্তমান সূর্য দেখতে পাই না। কারণ,
আলো চোখে এসে পৌঁছাতে আট মিনিট ১৮ সেকেন্ড লাগে। তাই, খুব সহজ করে বললে—জেমস ওয়েবে তোলা
ছবিটির ছায়াপথগুচ্ছ থেকে আলো এসে পৌঁছাতে ৪৬০ কোটি বছর লেগেছে। এত দূরের বস্তু ঝাপসা
বা দেখার অযোগ্য থাকার কথা, কিন্তু এখানেই জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের বিশেষত্ব।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে—অনেকগুলো ছায়াপথের
ছবি কিছুটা বেঁকে আছে। এটি হলো স্থান-কাল বক্রতা। জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি অনুযায়ী,
ছবির কেন্দ্রে থাকা ছায়াপথগুচ্ছের মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে স্থান-কাল বক্রতা সৃষ্টি
হয়েছে।
এ ছাড়া জেমস ওয়েবের ছবিতে দেখা যাওয়া ছায়াপথগুচ্ছের
মোট ভর এত বেশি যে, সেটি মহাকর্ষিক লেন্স হিসেবে কাজ করছে। আর, সে লেন্স দিয়ে পেছনের
আরও দূরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোকবিন্দু বড় হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। সেসব আলোকবিন্দুও একেকটি
অদেখা ছায়াপথ, সেখানেও রয়েছে অগণিত গ্রহ-উপগ্রহ।