মহাকাশ ঘিরে মানুষের আগ্রহ ও পদচারণা ক্রমে বাড়ছে। পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন। প্রতিনিয়ত নতুন সব প্রযুক্তি এতে যুক্ত হচ্ছে। পৃথিবীর বাইরে ব্যবসা বিস্তারের সুযোগ লুফে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের অনেকেই। সময়ের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান মহাকাশ শিল্পের বাজার। মহাকাশচারী সেন কেলি তাই মহাকাশকেন্দ্রিক ব্যবসা বৃদ্ধির দিকে জোর দিচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন রকেট প্রতিযোগিতা বৃদ্ধিরও।
একজন মহাকাশচারী হিসেবে অ্যারিজোনা সেন মার্ক কেলি তার ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে চারবার মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন। সংগত কারণেই মহাকাশকেন্দ্রিক ব্যবসা ঘিরে আশাবাদ ব্যক্ত করার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার বিষয়কে ইতিবাচক আখ্যা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে বাণিজ্যিক মহাকাশ পরিবহনবিষয়ক সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেন, ‘কিছু অগ্রগতির বিষয় সত্যিই আশ্চর্যজনক, যা দুর্দান্তভাবে সফলও।’
কেলি জানান, তিনি যখন নাসার মহাকাশযানে চড়ে ভ্রমণ করেন সে তুলনায় কক্ষপথে স্যাটেলাইট, মানুষ ও কার্গো পাঠানোর খরচ বর্তমানে ভগ্নাংশ পরিমাণে নেমে এসেছে। বর্তমান সময়টি উৎসাহিত ও ত্বরান্বিত করছে মহাকাশ শিল্পের বৃদ্ধিকে। তাই রকেট নির্মাণকারী সংস্থাগুলোকে সুযোগটির যথাযথ ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজারে দ্রুত নতুন যান আনতে হবে ও নতুন প্রতিযোগিতাকে আলিঙ্গন করতে হবে, বিষয়গুলোকে মোটেও দমিয়ে রাখা যাবে না।
মহাকাশে ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক ভ্রমণ পরিষেবা চালুর বিষয়ে একে অন্যকে টেক্কা দিচ্ছেন টেসলা ও টুইটার প্রধান ইলোন মাস্ক, জেফ বেজোস, রিচার্ড ব্র্যানসনের মতো ধনকুবের। এজন্য প্রতিনিয়ত নতুন কৌশলও আবিষ্কার করছেন তারা। গবেষণার তথ্যানুযায়ী, ২০৪০ সাল নাগাদ মহাকাশ শিল্পের বার্ষিক আয় ১ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছবে। এরই ধারাবাহিকতায় কেলি বলেন, ‘পৃথিবীর কক্ষপথে বেশিসংখ্যক যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন মহাকাশযান উৎক্ষেপণের খরচ কমাতে আমাদের বেশিসংখ্যক যানের প্রয়োজন।’
মহাকাশে বাণিজ্যিকভাবে রকেট উৎক্ষেপণের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে ৮৭টি রকেট পাঠিয়ে নতুন বার্ষিক রেকর্ড তৈরি করেছে। যার বেশির ভাগই টেসলা ও স্পেসএক্স সিইও ইলোন মাস্কের। বর্তমানে গড়ে প্রতি চারদিনে মহাকাশে রকেট পাঠানোর ব্যবস্থা চালু করছে তার প্রতিষ্ঠান। এদিকে অন্য কোম্পানিগুলোও বসে নেই। তারা মহাকাশযান উৎক্ষেপণের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে। সামনের বছরগুলোয় আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে রকেট ল্যাব, ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স, ব্লু অরিজিন, অ্যাস্ট্রা, ভার্জিন অরবিট, নর্থরপ গ্রুম্যান, ফায়ারফ্লাই ও এবিএলসহ রকেট পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান।
মহাকাশ যাত্রা বেশ খরচের। তবে মহাকাশ ভ্রমণের স্টার্টআপ উদ্যোগে কয়েক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছেন বেজোস, ব্র্যানসন ও মাস্ক। প্রত্যেকেই গ্রাহককে মহাকাশ ভ্রমণের দারুণ অভিজ্ঞতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ সম্পর্কে কেলি বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে মহাকাশ খাত সম্ভাবনাময়, যা আমেরিকার অর্থনীতির ভবিষ্যতের জন্য এবং বিদেশে আমাদের নেতৃত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্যিক মহাকাশ খাত ছাড়া, আমরা আমাদের কক্ষপথে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হব না। এটি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সামগ্রিক খাত; প্রযুক্তি থেকে টেলিকম, বৈশ্বিক রফতানি বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক হবে না।’