চীন নতুন মহাকাশ স্টেশনে ১৭ জুন তিনজন
মহাকাশচারী পাঠায়। মহাকাশচারীদের ২৪ ঘণ্টার কাজকর্ম তুলে ধরে আজ বুধবার মহাকাশ স্টেশন
থেকে ভিডিও পাঠানো হয়েছে। ভিডিওতে মহাকাশচারীদের দুপুরে খাওয়াদাওয়া, ঘুম থেকে শুরু
করে বিভিন্ন কাজের চিত্র উঠে এসেছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে, মহাকাশ স্টেশনে মহাকাশচারী নি হাইশেং, লিউ বোমিং ও তাং হংবো যে ভালো আছেন,
তা ভিডিওতে প্রকাশ পেয়েছে। এতে দেখা গেছে, ভাসমান খাবারের বক্সগুলো থেকে খাবার খাচ্ছেন
মহাকাশচারীরা। তাঁরা সিলিন্ডারের মতো আকৃতির তিয়ানহে মডিউলে অবস্থান করছেন। এক বা দুদিনের
জন্য নয়, সেখানে তিন মাস থাকবেন তাঁরা।
চীন নিজেদের মতো করে মহাকাশে ‘তিয়ানগং মহাকাশস্টেশন’ নির্মাণ করছে।
এর নির্মাণকাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে আলাদা।
১৭ জুন চীন শেনঝু-১২ নামের মহাকাশ যানটি নতুন মহাকাশ স্টেশনে পাঠায়। সাড়ে ছয় ঘণ্টা
পর স্টেশনে পৌঁছায় যানটি। গত পাঁচ বছরের মধ্যে মহাকাশ স্টেশনে মানুষ পাঠানো চীনের প্রথম
পদক্ষেপ এটি।
মহাকাশ স্টেশনে চীনের মহাকাশচারীদের দৈনন্দিন
কাজকর্ম নিয়ে চীনের জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম সেন্ট্রাল চায়না টেলিভিশন (সিসিটিভি) একটি
সংবাদ প্রচার করেছে। সেই খবরে বলা হয়েছে, মহাকাশচারীরা সকাল আটটায়
পৃথিবীর কন্ট্রোল কার্যালয়ে যোগাযোগের
মাধ্যমে দিনের কাজ শুরু করেন। রাত ১১টা পর্যন্ত টানা কাজের পর তাঁদের কাজের অগ্রগতির
তথ্য দেন।
সিসিটিভির খবরে বলা হয়েছে, মনোবল চাঙা
রাখতে চীনের ওই মহাকাশচারীরা সপ্তাহে এক দিন করে ডে–অফ নেবেন। চীনের
প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আজ মহাকাশচারীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। পাঁচ মিনিট ধরে তাঁদের
কথা হয়। সাহসী এই কাজের জন্য মহাকাশচারীদের ধন্যবাদ জানান প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।
হংকংভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং
পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহাকাশচারীদের উদ্দেশে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন,
‘আপনাদের মহাকাশে
তিন মাস থাকতে হবে। এ সময় আপনাদের কাজ ও আপনাদের জীবনযাপন চীনের জনগণের হৃদয়জুড়ে থাকবে।’
চীনের এ মহাকাশ মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন
লি বোমিং। তাঁর দলের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে, ২২ দশমিক ৫ টন ওজনের তিয়ানহে মডিউলকে মহাকাশে
উপযোগী করে তোলা। একই সঙ্গে মহাকাশে চীনের সক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তোলা।
গত ছয় মাসে মহাকাশ গবেষণায় বেশ সাফল্যের
খবর পেয়েছে চীন। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে পাথর ও মাটি পৃথিবীতে এনেছে চীনের মহাকাশযান। এ ছাড়া
চীনের ছয় চাকার একটি রোবট লালগ্রহ মঙ্গলে সফলভাবে অবতরণে সক্ষম হয়েছে। এ দুটি অভিযানের
উভয়ই বেশ জটিল ও চ্যালেঞ্জিং।
মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পাশাপাশি
চীনও আধিপত্য বিস্তারেরর চেষ্টা করছে কয়েক বছর ধরে। মহাকাশ নিয়ে চীনের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা
রয়েছে, তা আর কারোর কাছে গোপন নয়। মহাকাশে চীনের আধিপত্য ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রও উঠেপড়ে
লেগেছে। তারাও মহাকাশ নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
মহাকাশ গবেষণা ত্বরান্বিত করতে চীন এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়েছে অনেক। এ জন্য সফলতাও পাচ্ছে দেশটি। ২০১৯ সালে চাঁদের বিপরীত পৃষ্ঠে সফলভাবে অবতরণ করে চীনের ক্রুবিহীন একটি রোভার। এর মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম কোনো দেশ চাঁদের বিপরীত পৃষ্ঠে যান পাঠাতে সক্ষম হলো।