জনপ্রিয় নির্মাতা ফিরোজ আব্বাস খানের মাথায়ই পরিকল্পনাটা আসে প্রথম। ১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘মুঘল-ই-আজম’-এর মিউজিক্যাল হাজির করার পরিকল্পনা। ২০১৬ সালে সাপুরজি পালোনজি গ্রুপের প্রযোজনায় সফলভাবেই সামনে আসে ‘মুঘল-ই-আজম’-এর নতুন রূপ। বলিউড দ্বিতীয় দফায় মুগ্ধ হয় মুঘল-ই-আজম নিয়ে। ২০১৭ সালে সাতটি পদক ঝুলিতে ওঠায় মিউজিক্যালটি।
সর্বশেষ শো অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে থমকে দাঁড়ায়। সম্প্রতি আবার ফিরছে মিউজিক্যাল। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মুম্বাইয়ে কয়েকটি শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মাসেও নতুন শোয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নাট্যরূপে এমন সময়ে সামনে আসছে, যখন ভারতে কট্টর ডানপন্থী প্রচারণায় বেশ জোরেশোরে প্রকাশ পাচ্ছে ইসলামোফোবিয়া। অস্বীকার করা হচ্ছে ভারতের ইতিহাসে মোগলদের অবদান।
কে আসিফ পরিচালিত মহাকাব্যিক সিনেমা মুঘল-ই-আজম। অভিনয়, সংগীত, সংলাপের বাক্যবিন্যাসের জন্য বিপুলভাবে সমাদৃত হয় সিনেমাটি। প্রবেশ করে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্রের তালিকায়। তবে এবারের উপস্থাপনও নজরকাড়া। ডেভিড ল্যান্ডারের আলোকসজ্জা, মনীশ মলহোত্রার কস্টিউম ও উর্দু ডায়ালগের অভূতপূর্ব সমন্বয়। নওশাদের স্কোর আর শাকিল বাদাউনির লিরিক জীবিত হয়ে উঠেছে পুনরায়। মধুবালার পরিবর্তে আনারকলির চরিত্রে রয়েছেন নেহা সারগাম ও প্রিয়াংকা বার্ব। ময়ুরি উপাধ্যায়ের কোরিওগ্রাফিতে নায়িকাদের নৃত্যে তাল মিলিয়েছে লতা মুঙ্গেশকারের ‘ পেয়ারে কিয়া তো ডরনা কিয়া’।
১৯২২ সালে ইমতিয়াজ আলি তাজের লেখেন ‘আনারকলি’ নাটক। গল্প মূলত আনারকলির কিংবদন্তিকে ঘিরে। মোগল সম্রাট আকবরের ছেলে সেলিম আনারকলির প্রেমে পড়েন। সম্রাট আকবরের অস্বীকৃতি, আনারকলির অবাধ্যতা আর পুত্র সেলিমের বিদ্রোহ প্রকাশিত হয়েছে শক্তিশালী বাক্য আর গানের মাধ্যমে। সেই নাটককেই চলচ্চিত্রে রূপান্তরের কাজ হাতে নেন কে আসিফ। ১৯৪০-এর পুরো দশক নিয়ে তৈরি করেন মুঘল-ই-আজমের ভিত্তি। ডায়ালগগুলোকে সাজানো হয়েছিল পার্সি নাটকের ধাঁচে। কে আসিফের সেই সিনেমাকে আরো ব্যঞ্জনাময় করে তুলতে চেয়েছেন ফিরোজ আব্বাস খান। নিজের প্রচেষ্টাকে গণ্য করতে চান শেকড় স্পর্শ করার সুযোগ হিসেবে। ফিরোজ আব্বাস খান তুমহারি অমৃতা, সালগিরাহ ও সেলসম্যান রামলাল নাটক উপহার দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন। মুঘল-ই-আজম সম্পর্কে তিনি বলেন, এমন কাজের চিন্তা আসার সময়েই মুঘল-ই-আজমের কথা আমার মনে আসে। গল্পটা দুর্দান্ত। লেখার দিক থেকেও উঁচু মানের সাহিত্য। তার চেয়ে বড় কথা সিনেমাটির শেকড় থিয়েটার। আনারকলি নাটক আগেও কয়েকবার সিনেমায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। সিনেমার গঠন আর পরিবেশনও পার্সি নাটকের ধাঁচে। ফলে একে নাটকে রূপান্তর করাটা তুলনামূলক সহজ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এর গানগুলো। কথা আর সুর উভয়ই এক কথায় অসাধারণ। যেন একটা যথার্থ অ্যালবাম। প্রতিটা গানই স্মরণীয়। গল্পের বক্তব্যে মুনশিয়ানার সঙ্গে গেঁথে দেয়া হয়েছে যেন।
মুঘল-ই-আজম যা দেখায়, তাকে ইতিহাস বলা যায় না। তবে সাহিত্যিক নিদর্শন হিসেবে সবার আগে স্মরণীয়। আকবর দায়িত্বের কথা বলে। সেলিম বলে ভালোবাসার কথা। অন্যদিকে আনারকলি যেন একটা সাম্রাজ্যের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার পেছনে এটাও একটা কারণ। চলচ্চিত্রটির সৌন্দর্যের বড় একটা অংশ হলো তার ভাষার বিশুদ্ধতা। সিনেমাজুড়ে মনোমুগ্ধকর উর্দু ডায়ালগ। নাটকে তা অক্ষুণ্ন রাখা হয়েছে। তবে দর্শকের সুবিধার জন্য স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে অনুবাদ।