মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ও দেশটির নেত্রী অং সান সু চির মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন হাজারো মানুষ। সেই বিক্ষোভ দমনে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। সম্প্রতি রাজধানী নেপিডোতে।
মিয়ানমারে গতকাল রোববার জান্তাবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভ ও প্রাণহানির পর আজ সোমবার আবার দেশজুড়ে বড় ধরনের বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। গত ১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের পর মাত্র এক দিন আগেই সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন দেখেছে দেশটি। খবর রয়টার্স ও এএফপির।
গতকালের ওই সহিংসতা ও রক্তপাতের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধি। মিয়ানমারে বিক্ষোভ দমনে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদিন যে পদক্ষেপ নেয়, তাকে ‘ঘৃণ্য সহিংসতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
গতকাল মিয়ানমারের বিভিন্ন শহর-নগরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এদিন তাদের সঙ্গে সড়কে নেমেছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ১৮ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অনেকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষকসহ অনেককে। বিক্ষোভকারীদের ওপর এই দমন-পীড়নের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।
রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সরকারের পতন ঘটায় সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় সু চিসহ এনএলডির শীর্ষ নেতাদের। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে সেনাবাহিনী এই অভ্যুত্থান ঘটায়। এরপর থেকেই দেশটিতে বিক্ষোভ চলে আসছিল। গত শনিবার পর্যন্ত এসব বিক্ষোভে সব মিলিয়ে তিনজন নিহত হন। আর গতকাল এক দিনে ঝরল অন্তত ১৮ জনের প্রাণ।
ইয়াঙ্গুনে একটি হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বেশ কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তাঁর বুকে গুলি লেগেছিল।
শুধু ইয়াঙ্গুন নয়, গতকাল মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই গুলি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দাওয়েইর রাজনীতিক কিয়াও মিন হতিকে বলেন, এই শহরে তিনজন নিহত হয়েছেন।
মিয়ানমারের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ জানিয়েছে, দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে বিক্ষোভে দুজন নিহত হয়েছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দা সাই তুন রয়টার্সের কাছে দাবি করেছেন, এই শহরে পুলিশ দফায় দফায় গুলি চালিয়েছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনজন।
গতকালের ওই সহিংসতা ও রক্তপাতের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধি। মিয়ানমারে বিক্ষোভ দমনে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদিন যে পদক্ষেপ নেয়, তাকে ‘ঘৃণ্য সহিংসতা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
মিয়ানমারের তরুণ বিক্ষোভকারী এসথার জে নাও রয়টার্সকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী আঘাত করে আসলে আমাদের মনে ভয় গেঁথে দিতে চাইছে। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।’ নিয়ান উইন শেইন নামের আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘তারা যদি আমাদের পেছনে ঠেলতে চায়, আমরা আরও জেগে উঠব। তারা যদি আমাদের আক্রমণ করে, আমরা আত্মরক্ষা করব। সামরিক বুটের সামনে আমরা কখনো মাথানত করব না।’
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সেনাবাহিনীকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অবিলম্বে বলপ্রয়োগ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় যাঁরা বিক্ষোভ করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাঁদের সঙ্গে সংহতি জানাচ্ছে।