রাজধানীর পলাশী সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের
একটি ভবনের বাথরুম থেকে ইসরাত জাহান তুষ্টি (২১) নামে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীর
মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। গতকাল রবিবার সকালে তাকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।
পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন
চিকিৎসকরা। পরে মরদেহটি মর্গে পাঠানো হয়।
ইশরাত জাহান তুষ্টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি
বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার
নীলকণ্ঠপুরে। বাবার নাম আলতাফ হোসেন। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের হল
বন্ধ থাকায় আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারের ১৮ নম্বর ভবনের নিচতলায় বান্ধবীদের সঙ্গে থাকতেন
তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের পলাশী ব্যারাক ফায়ার স্টেশনের
স্টেশন অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সকাল সোয়া ৭টার দিকে ৯৯৯-এর মাধ্যমে খবর পেয়ে
পলাশী সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের ১৮ নম্বর ভবনের নিচতলায় একটি রুমের বাথরুমের দরজা ভেঙে
অচেতন অবস্থায় ইশরাত জাহানকে উদ্ধার করা হয়। এরপর দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে
চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি বাথরুমের ভেতরে পড়ে মারা গেছেন বলে
আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।
লালবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন
বলেন, ‘নিচতলার ওই কক্ষে
তুষ্টি তার বান্ধবীর সঙ্গে থাকতেন। রাতে তারা একসঙ্গেই ঘুমিয়েছিলেন। সকালে বাথরুমে
তুষ্টির কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে তার বান্ধবী ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। তুষ্টির মৃত্যুর
বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
তুষ্টির রুমমেট ঢাবির ইসলামের ইতিহাস বিভাগের
দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহনুম তাবাসসুম রাফি জানান, তারা চারজন ঢাবি শিক্ষার্থী
মিলে স্টাফ কোয়ার্টারের নিচতলায় একটি বাসায় সাবলেট ভাড়া থাকতেন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে
ওই বাসার আন্টি তাদের রুমে এসে জানতে চান এতক্ষণ ধরে বাথরুমে কে আছে, কলের পানি পড়ছে।
পরে তারা ঘুম থেকে উঠে দেখেন বিছানায় ইশরাত নেই, তা ছাড়া বাকি সবাই রুমে আছেন। পরে
তারা বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে লাগানো দেখতে পেয়ে ইশরাতকে ডাকাডাকি করতে থাকেন। ভেতর
থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পরে ৯৯৯-এ কল দেন।
তিনি আরও জানান, ইশরাতের অ্যাজমার সমস্যা
ছিল। এ ছাড়া শনিবার দুপুরে তিনি বৃষ্টিতে ভিজেছিলেন। তখনই তিনি বলেছিলেন রাতে তার জ্বর
আসতে পারে। পরে তার বাবা টাকা পাঠালে তিনি ঠান্ডার জন্য কিছু ওষুধও কিনে খান। শনিবার
বিকেলের পর থেকে তিনি বাসায়ই ছিলেন।
এদিকে তুষ্টির আরেক রুমমেট সুমাইয়া পারভিন
ও লুৎফুর নাহার ইতি জানান, ইশরাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের
শিক্ষার্থী। থাকতেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের ৪২২ নম্বর কক্ষে। তবে করোনার জন্য
হল বন্ধ থাকায় তিনি আজিমপুর সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে সাবলেট থাকতেন। তার বাড়ি নেত্রকোনা
আটপাড়া উপজেলার নীলকণ্ঠপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আলতাফ হোসেন।
সেই সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করেছে, বাথরুম থেকে উদ্ধার করে যখন তুষ্টির দেহ মর্গে আনা হয় তখন তার পরনে ছিল লাল হাফ হাতা গেঞ্জি এবং নেভি ব্লু রঙের ট্রাউজার। চোখ-মুখ ছিল অর্ধ খোলা অবস্থায়, জিহ্বা দাঁত দিয়ে সামান্য কামড়ানো। বুক, পেট, পিঠ, কোমর হতে পা পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। হাত দুটি ছিল অর্ধমুষ্টি অবস্থায়। বাম হাতের কনুই এবং পিঠের বাম পাশে পুরাতন দাগ ছিল।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমও এ বিষয়ে কাজ শুরু করছে জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমরা তার মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করছি।