ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
আশুগঞ্জ উপজেলায় নাপা ওষুধ খেয়ে একই পরিবারের দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগে পৃথক দুটি
তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শনিবার (১২ মার্চ)
সকালে এসব তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা
হয়েছে।
ঘটনার দুইদিনের
মাথায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের পক্ষ থেকে কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ
পর্যায়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ফেনীর সিভিল সার্জন
ডা. রফিক উস-সালেহীন, কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক সোসাইন। এ কমিটিকে আগামী
তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পক্ষ থেকে শিশু বিভাগের জুনিয়র কনসালন্টেন্ট ডা.
আকতার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের অপর
একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র
কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. মাজহারুল ইসলাম, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রানা নুরুস শামস।
এ কমিটিকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক
বরাবর প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া জেলা
সিভিল সার্জনের নির্দেশে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার
পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুপুর সাহাকে প্রধান করে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া
সিভিল সার্জন ডা. একরামউল্লাহ জানান, নাপা সিরাপ সেবন করে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় তিনটি
তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিকে নির্দিষ্ট
কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নাপা সিরাপ বাজারে
বিক্রি বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন বলেন, শুনেছি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নির্দেশনায় নাপা সিরাপ বিক্রি আপাতত বন্ধ রয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। তারা হয়তো ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের
সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকতে পারেন।
তিনি আরও বলেন,
শিশু মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই
এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে।
এদিকে দুই শিশু
মৃত্যুর ঘটনার পর জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির নির্দেশনার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
সকল ওষুধের দোকানে নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার (১১ মার্চ) রাতে সমিতির
এ সিদ্ধান্তের পর শনিবার সকাল থেকে প্রতিটি ওষুধের দোকানে নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার
(১০ মার্চ) বিকেলে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুরে ইটভাটা শ্রমিক সুজন খানের দুই সন্তান
ইয়াসিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরে সুজনের স্ত্রী লিমা বেগম
বাড়ির পাশের বাজারের মাঈন উদ্দিনের ওষুধের দোকান থেকে নাপা সিরাপ এনে খাওয়ান। ওই সিরাপ
খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পর থেকেই দুই শিশুই বমি করতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার
অবনতি হলে প্রথমে তাদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতাল পরে উন্নত চিকিৎসা জন্য জেলা সদর হাসপাতালে
নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন চিকিৎসক। বাড়িতে
নিয়ে আসার পথে প্রথমে বড় ভাই ইয়াসিন খানের মৃত্যু হয় এবং পরে বাড়িতে ফেরার পর ছোট ভাই
মোরসালিন খানের মৃত্যু হয়।