Logo
শিরোনাম

নদী দখল করে মাছ চাষ, জানে না পাউবো

প্রকাশিত:শুক্রবার ০১ জুলাই ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ১১৭৫জন দেখেছেন
Image

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নের হোজির নদী দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের ২০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে।

হোজির নদীর অন্তত তিনটি স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন ডেমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের এসব নেতা-কর্মী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দখল করে রাখার ফলে কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্খনন করা এই নদীর কোনো সুফল পাচ্ছেন না তারা।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদী দখলের বিষয়টি তাদের জানা নেই। তবে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

যেখানে নদী দখল করা হয়েছে, সেখানে গিয়ে দেখা যায় ডেমা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের খেগরাঘাট ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিমপুর গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া হোজির নদীর ওপর নির্মিত সেতুর নিচ থেকে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের সুবিধার জন্য পানির প্রবাহ সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই বাঁধের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে মাছ চাষের খাবারসহ বিভিন্ন মালামাল রাখার খুপরি ঘর।

সেখানে যাওয়ার পর মৎস্য ঘের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োজিত কয়েকজন এগিয়ে এলে কথা হয় তাদের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করে তারা জানান, এখানে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়।

নদীটির মাঝখানের এই সেতুটির নিচের এই বাঁধ দিয়ে ঘেরের দুটি অংশ ভাগ করা হয়েছে। নদীর দুই পাশের দুই গ্রামের লোকজনই এখানে মাছ চাষ করেন বলে জানান তারা।

নদীপাড়ের বাসিন্দা বৃদ্ধ কালাম শেখ বলেন, হোজির নদীতে একসময় বড় বড় নৌকা চলতে দেখেছি। একটা সময় পলি মাটিতে গভীরতা কমে গিয়ে ছোট হয়ে যায় নদীটি। মূলত সেই থেকেই নদীটি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যায়।

এরপর যে দল যখন ক্ষমতায় থেকেছে, সেই দলের লোকজনই প্রভাব খাটিয়ে নদীটি দখলে রেখেছে। এখন আওয়ামী লীগের লোকজন দখল করে মাছের ঘের করছে।

কাশিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে নদীটি খনন করা হয়েছে। কিন্তু এতে আমাদের কী লাভ হলো? আওয়ামী লীগ নেতা রবিউল ইসলামসহ কয়েকজন প্রভাব খাটিয়ে নদীটি বছরের পর বছর ধরে দখল করে রাখলেও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডেমা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম নদী দখল করে মাছ চাষের কথা স্বীকার করে বলেন, শুধু আমি একা না, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও ডেমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরিদ মোল্লা, ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নকিব হাই, ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরাদ শেখ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল ফকিরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ থেকে ২২ জন রয়েছেন। এরা সবাই এই ঘেরের অংশীদার।’

নদীতে বাঁধ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বাঁধ আমরা দেইনি। নদী খননের সময় এটি দেয়া হয়েছিল। আমরা শুধু খুপরি ঘর ও নদীর পানি প্রবাহের জন্য একটি পকেট গেট নির্মাণ করেছি। এ বছর এখন পর্যন্ত আমাদের প্রায় ৭ লাখ টাকার গলদা, বাগদা, রুই ও কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছেড়েছি।’

নদী দখল করে মাছের চাষ বৈধ কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, এটা অবৈধ আমরা সবাই জানি। প্রায় ৩০/৩৫ বছর ধরে এই নদীতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। কেউ কখনও বাধা দেয়নি। প্রশাসন না চাইলে আমরা মাছ চাষ করব না।’

বাগেরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, বাঁধ অপসারণ করে মাছ চাষ না করার জন্য ওই এলাকায় মাইকিং করতে ডেমা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেব।’

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনি মল্লিক বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে ওই এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে সর্তক করা হয়েছে। নদীটি দখলমুক্ত করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’

যোগাযোগ করা হলে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ বলেন, নদী দখল করে মাছ চাষের বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

হোজির নদী খননে কত টাকা ব্যয় হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাড়ে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদীটি খননের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়েছে।’

নিউজ ট্যাগ: পাউবো বাগেরহাট

আরও খবর