নন-ব্যাংকিং আর্থিক
প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক লেনদেন সহযোগী
প্রতিষ্ঠান- নগদ। নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি নামে একটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের
সম্মতিপত্র (এলওআই) দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
মঙ্গলবার পর্ষদের
বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক
ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কতিপয় শর্তসাপেক্ষে নগদকে এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে।’
বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব
করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আরও উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর,
নির্বাহী পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালকরা।
সূত্র জানায়,
দেশে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের
অঙ্গ প্রতিষ্ঠান (সাবসিডিয়ারি) হতে হয়। কিন্তু নগদ এতদিন কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের
সাবসিডিয়ারি ছিল না। তাই তারা এতদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স পায়নি।
নগদ মোবাইলে সেবা
কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠান হিসেবে। এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান
হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। সে সুবাদে প্রতিষ্ঠানটি সারাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পরিচালনা
করবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি
মাসে ব্যাংকের পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানও
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবার (এমএফএস) জন্য সাবসিডিয়ারি বা সহযোগী কোম্পানি খুলতে
পারবে মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) রেগুলেশন্স-২০২২
এ নতুন বিধান সংযুক্ত করা হয়।
নতুন রেগুলেশন্সে
আগের মতোই এ ধরনের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হবে ৪৫ কোটি টাকা।
আগের মতোই মূল প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম শেয়ার থাকতে হবে ৫১ শতাংশ।
নেতৃত্বে থাকার
সুযোগ না থাকলেও এ ধরনের সাবসিডিয়ারিতে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমআরএ অনুমোদিত
ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠান যুক্ত হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে এতে।
এ নীতিমালার আগ
পর্যন্ত ২০১৮ সালের রেগুলেশন্স বা প্রবিধানমালার আলোকে শুধু ব্যাংকের নেতৃত্বে এমএফএসের
সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খোলার সুযোগ ছিল, যা ‘ব্যাংক লেড মডেল’ হিসেবে বিবেচিত।
জানা গেছে, ‘নগদ’ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে তার
সাবসিডিয়ারি হিসেবে এমএফএস সেবা দিতে চায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন সংশোধন না করে সাধারণভাবে
কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এমএফএস সেবা দেয়ার সুয়োগ ছিল না। নতুন বিধান যোগ করার ফলে
সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে।
২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৮ সালে নীতিমালার আগ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয়
ব্যাংকের অনাপত্তি নিয়ে সেবা দিত। বর্তমানে ১৮টি ব্যাংকের এমএফএস সেবা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের
মধ্যে ‘বিকাশ’, 'উপায়' ও ‘ট্যাপ’ পরিচালিত হচ্ছে সাবসিডিয়ারি হিসেবে।
বাকিরা ব্যাংকের নিজস্ব সেবা হিসেবে পরিচালনা করছে।
নগদ লিমিটেডের
প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি বাংলাদেশ ব্যাংকের
বোর্ডে অনুমোদন পেয়েছে বলে সাংবাদিকদের মাধ্যমেই আমরা খবর পেলাম। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে
এখনও কিছুই জানি না।
‘আমাদের পরিকল্পনা
অনুসারে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি স্বতন্ত্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে
পরিচালিত হবে। তবে ডাক বিভাগের সঙ্গে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদ লিমিটেডের
বিদ্যমান সম্পর্ক অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থাৎ নগদ লিমিটেড ডাক বিভাগের সেবা হিসেবেই পরিচালিত
হবে। সেক্ষেত্রে নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি অন্য আর দশটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান
হিসেবে পরিচালিত হবে।’
তানভীর এ মিশুক
বলেন, ‘একটি মোবাইল আর্থিক সেবা হিসেবে নগদ লিমিটেড
এখন অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করে। এক্ষেত্রে নগদ ফাইন্যান্স
পিএলসি এবং নগদ লিমিটেডের সম্পর্কও একই রকম হবে। তখন নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি বিভিন্ন
প্রডাক্ট নগদ লিমিটেডের মাধ্যমে বিপণন করা হবে।
‘ডিজিটাল আর্থিক
অন্তর্ভুক্তির বাইরে থাকা প্রান্তিক মানুষকে সেবার কলেবরের মধ্যে আনতে ফাইন্যান্স পিএলসি
ও নগদ যৌথভাবে কাজ করতে পারবে। তাতে সেবার খরচ কমবে। সেবার গুণগত মানও আগের চেয়ে ভালো
হবে।’