যশোরে শতভাগ নাগরিককে
ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার লক্ষে দুইদিন ব্যাপী গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নিবন্ধন
ছাড়াই টিকা নেওয়া যাচ্ছে। যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগা ময়দানে বুধবার ও বৃহস্পতিবার এ টিকা
কার্যক্রম চলবে।
সিভিল সার্জন
ও যশোর পৌরসভার ব্যবস্থাপনায় দুই দিনে ১০ হাজার জনকে সিনোফার্মার টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ।
করোনাভাইরাসের
গণটিকাদানের কর্মসূচিতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কিছুটা ভোগান্তি
ও বিশৃঙ্খলা থাকলেও টিকা গ্রহীতার মধ্যে দেখা গেছে আগ্রহ। ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে প্রথম
ডোজের টিকা নিয়েছেন তারা।
পাঁচটি বুথে ৫
জন করে দায়িত্ব পালন করছেন। এদের মধ্যে দুইজন নার্স ও তিনজন করে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত
রয়েছেন। পুরুষ আর নারীদের আলাদা আলাদা বুথে স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনার টিকা গ্রহীতাদের
টিকা দিচ্ছেন।
এর আগে পৌরসভা
থেকে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও নিবন্ধন কার্ড পরীক্ষা-নিরীক্ষা
করছেন। যাচাই বাছাই শেষেই বুথে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন। তবে টিকা গ্রহীতা থেকে পর্যাপ্ত
পরিমাণ বুথ ও স্বাস্থ্যকর্মী না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে মানুষকে।
টিকা নিতে আসা
লোকজন গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়ানোর কারণে উল্টো বাড়ছে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি।
লাইনে অপেক্ষমাণ লোকজনের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশিরভাগই মুখের থুতনিতে নামিয়ে মাস্ক পরছেন।
শহরের বেজপাড়া
থেকে গণটিকা নিতে আসা ব্যবসায়ী স্বপন ও তার স্ত্রী মাকসুদা বেগম। তারা জানান, কোনো
রকম ভোগান্তি ছাড়াই করোনাভাইরাসের টিকা পেয়েছি।
টিকার ব্যবস্থাপনায়
সন্তুষ্টি প্রকাশ করে স্বপন বলেন, ১০টা লোক এক জায়গায় হলে কিছুটা গ্যাঞ্জাম হয়! এত
সুন্দর পরিবেশে টিকা নিতে পারব, ভাবতে পারিনি।
মেহরাজ হোসেন
নামে এক ব্যক্তি জানান, টিকার জন্য আবেদন করেছিলাম দুই মাস আগে, কিন্তু এখনো মেসেজ
আসেনি। তাই রাগ করে করোনার টিকা নেয়নি। কিন্তু টিকা নেওয়ার জন্য যশোর পৌরসভা থেকে গত
দুই দিন ধরে মাইকিং করে বেড়াচ্ছে। তাই ভোটার আইডি কার্ড দেখায়ে টিকা নিয়েছি। তবে আরও
কয়েকদিন বাড়ানো উচিত। সঙ্গে কেন্দ্রও।
সালেহা বেগম নামে
এক নারী বলেন, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। ঢাকা থেকে ছেলে ফোন দিয়েছে, জীবন
বাঁচাতে হলে করোনার টিকা নিয়ে নাও। তাই এসেছি টিকা নিতে। কিন্তু লাইন যেন শেষ হচ্ছে
না। টিকা নিয়েই বাড়ি যাবেন বলে জানান এই অর্ধশত বছর বয়সী নারী।
গণটিকা দেওয়ায়
নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী সালমান হোসেন নামে এক যুবক বলেন, সেই সকাল থেকে আইডি কার্ড পরীক্ষা
নিরীক্ষা করছি। খুব ব্যস্ত ভাই। কথা বলার সময় নেই। নির্বিঘ্নে টিকাদান চলছে। কোনো অভিযোগ
নেই। কেউ কেউ দ্বিতীয় ডোজের জন্য ভিড় করছেন। আমরা তাদের বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।
যশোর পৌরসভার
স্বাস্থ্যকর্মী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস বলেন, যশোরের বাসিন্দা যারা পূর্বে টিকা নেইনি
তাদের যে কেউ টিকা নিতে পারবে। তাদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন অবশ্যক নয়। জাতীয় পরিচয়পত্র,
চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলার কর্তৃক সনদ ও নাগরিক সনদপত্র দেখিয়ে তারা টিকা নিতে পারবেন।
গণটিকা কার্যক্রম সহজ করে দেওয়া হয়েছে। যাতে সবাই টিকা গ্রহণ করতে পারে। এই কার্যক্রম
চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
যশোরের সিভিল
সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, করোনার সংক্রমণ রুখতে সচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যবিধি
প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ এবং শতভাগ ভ্যাকসিনেশনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশেষ করে ৩১ জানুয়ারির
মধ্যে শতভাগ নাগরিককে টিকা প্রদানের (প্রথম ডোজ) আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের
লক্ষ্য যশোরে শতভাগ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা। সবাই যেন টিকা নেয়। আমাদের কাছে
পর্যাপ্ত টিকা আছে। যারা টিকা নিতে চাইবে সবাইকে টিকা দেওয়া হবে। এই দুই দিনে ১০ হাজার
লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এর বেশি যারা আসবে সবাইকে টিকা দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন,
গণটিকা ছাড়াও যশোরের নিদিষ্ট কেন্দ্রে গুলোতেও টিকা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। যশোরে ৩২
লাখ ২২ হাজার ৬১২ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ ১৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫০৯ জন,
দ্বিতীয় ডেজ ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯ জন ও তৃতীয় ডোজ নিয়েছেন ২৯ হাজার চারজন।