দেশে ছড়িয়ে পড়া
ক্ষতিকর সাকার মাছ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সম্প্রতি সাকার মাছ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন
জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে কোনো
আপত্তি বা পরামর্শ না পাওয়ায় সাকার মাছ নিষিদ্ধ হবে। এখন চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর
মাছটি নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কেউ সাকার মাছ আমদানি, প্রজনন, চাষ,
পরিবহন, বিক্রি, গ্রহণ বা প্রদান, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও মালিক হতে পারবেন
না।
এতে এও বলা হয়েছে,
এ বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে, তা লিখিতভাবে প্রজ্ঞাপন জারির দিন থেকে
অনধিক দুই মাসের মধ্যে দেওয়া যাবে। এর মধ্যে এ বিষয়ে কোনো আপত্তি বা পরামর্শ না পাওয়া
গেলে, তা চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের
কর্মকর্তারা জানান, সাকার মাছ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করায় এখন চাইলে মানুষ এখন
আর মাছটি আমদানি, অ্যাকুয়ারিয়ামে পালন বা বিক্রি কিংবা প্রজনন কিছুই করতে পারবেন না।
এ আইনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে তা গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখবে।
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের
মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, সাকার মাছ মানুষের খাদ্য হিসেবে পৃথিবীর কোথাও ব্যবহার
করা হয় না। আমরাও এটা খেতে বলতে পারি না। এটা নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। ভারী
পদার্থ না পাওয়া গেলে মাছটি মানুষ খেতে পারবে কিংবা পোলট্রি ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার
করা যেতে পারে। তবে প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে, তা লিখিতভাবে
জানানোর পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে পারে।
এখন প্রধান কাজ
হচ্ছে সাকার মাছ পেলেই তা মেরে ফেলতে হবে উল্লেখ করে ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, বদ্ধ জলাশয়ে
থাকলে জাল দিয়ে কিংবা শুকিয়ে ধরে ফেলতে হবে। আর উন্মুক্ত জলাশয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার
করে সাকার ধরে পুরুষ বানিয়ে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। তাহলে তারা প্রজনন করতে পারবে না।
সাকার মাছ ধরে দিলে মানুষকে প্রণোদনা দেওয়া যেতে পারে, তাহলেও কমবে।
মৎস্য অধিদপ্তর
বলছে, সাকার মাছ অবৈধভাবে দেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এখন সারা দেশে সাকার মাছ দ্রুত ছড়িয়ে
পড়ছে। দেশের অধিকাংশ জেলার নদ-নদীতে এ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ মাছ বুড়িগঙ্গার মতো দূষিত
পানিতেও টিকে থাকতে পারে। দ্রুত প্রজননও ঘটায় মাছটি। পাশাপাশি মানুষ এই মাছ না খাওয়ায়
এটি দ্রুত বাড়ছে ও ছড়িয়ে পড়ছে। সাকার দেশীয় প্রজাতির মাছের ডিম ও রেণু খেয়ে মাছের বংশবিস্তারে
ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এ মাছ যেকোনো পরিবেশে বাঁচতে পারে এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধির কারণে
দেশীয় প্রজাতির মাছের সঙ্গে খাদ্য ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। মাছটি খাওয়া যায়
না। সর্বোপরি সাকার মাছ জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট করে।
বিশেষজ্ঞরা মনে
করেন, অ্যাকুয়ারিয়াম ব্যবসায়ীরা দেশে মাছটি এনেছেন। এ মাছ ময়লা খেয়ে অ্যাকুয়ারিয়াম
পরিষ্কার রাখে। সেখান থেকে এটি কোনোভাবে উন্মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বদ্ধ জলাশয়ে থাকলে
জাল দিয়ে কিংবা শুকিয়ে ধরে ফেলতে হবে। আর উন্মুক্ত জলাশয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাকার
ধরে পুরুষ বানিয়ে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। সাকার মাছ ধরে দিলে মানুষকে প্রণোদনা দেওয়া
যেতে পারে, তাহলেও কমবে।
সাকার মাছ নিয়ন্ত্রণে
মৎস্য অধিদপ্তর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গত বছরের ডিসেম্বরে কিছু নির্দেশনা
দেয়।
তাতে বলা হয়,
উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে দেশের উন্মুক্ত জলাশয়ে
ও চাষের পুকুরে সাকার মাছ পাওয়া যাচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। মাছটি যাতে কোনোভাবেই উন্মুক্ত
ও বদ্ধ জলাশয়ে প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। চাষ করা ও উন্মুক্ত জলাশয়ে
পাওয়া গেলে, তা জলাশয়ে ছেড়ে না দিয়ে ধ্বংস করতে হবে। চাষ করা জলাশয় শুকিয়ে বা
পুরোপুরি পানি সেঁচের মাধ্যমে সাকার মাছ ধরে তা মাটিচাপা দেওয়া বা বিনষ্ট করতে হবে।
তাছাড়া শোভাবর্ধনকারী মাছ হিসেবে বাজারজাতকরণের জন্য হ্যাচারিতে প্রজনন বা লালন-পালন
বন্ধ করতে হবে।
এ বিষয়ে জেলা-উপজেলাসহ
সংশ্লিষ্ট স্থানে লিফলেট-পোস্টার বিতরণ ও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারের অনুরোধ করা হয়।
এছাড়া চলতি বছরের এপ্রিলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদকে চিঠি দিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর বাংলাদেশ
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দেশের জলাশয়ে সাকার মাছ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে বিস্তারিত
গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।