Logo
শিরোনাম

নজরুলের যত প্রেম

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৬ আগস্ট ২০২২ | হালনাগাদ:বুধবার ১৫ নভেম্বর ২০২৩ | ৯৩০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

জোবায়ের আলী জুয়েল

বিদ্রোহী কবি নজরুল বাংলা সাহিত্যাকাশে প্রেম ও রাজদ্রোহ এই দুই খ্যাতি নিয়ে সমভাবে এগিয়ে রয়েছেন। কিন্তু প্রেমের কবিতায় তার তুলনা নেই। নজরুল মূলত প্রেমের কবি, বিদ্রোহের কবি, সাম্যের কবি। জাতীয় কবি নজরুলের জীবনে প্রেম এসেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। নারীর প্রেম তাঁর কাব্যে ফেলেছে প্রভাব। হয়ে উঠেছেন একাধারে দ্রোহ ও প্রেমের কবি। তাঁর জীবনে এসব প্রেমের ছোঁয়া বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছে অনন্য মাত্রা। কবি তাঁর জীবনে আসা প্রেমিকাদের নিয়ে লিখেছেন অজস্র গান, কবিতা। তাঁর জীবনের নানা ঘটনার জন্ম হয়েছে তাঁর প্রেমিকাদের ঘিরে, এসব প্রেমে ছিল মোহমুগ্ধতা অনবদ্য সৌন্দর্য, বিরহ, যাতনা। কবি নজরুলের দুঃখ-দারিদ্র্য তাঁর নিত্যসঙ্গী হলেও তাঁর হৃদয়ে বার বার প্রেমে এসেছে। দুটোই জীবনকে দিয়েছে যন্ত্রণা।

নজরুল প্রথম মন দেয়া নেয়ার খেলা খেলেছিলেন তারই গ্রামের এক ধনীর দুলালীর সঙ্গে। সেটা ঘটেছিল তাঁর কিশোর বয়সে। এই মেয়েটিই ছিল প্রকৃত পক্ষে নজরুলের প্রথম প্রেমিকা। তার বাড়ি ছিল খোট্টাডিহির কাছে নিমসা গ্রামে। মেয়েটি সত্যি দেখতে শুনতে অত্যন্ত সুন্দরী ছিল। বাল্যকাল থেকেই এই কিশোরীর সঙ্গে নজরুলের মন দেয়া নেয়া শুরু হয়। নজরুলের এই প্রথম প্রেমিকার নাম সফুরা খাতুন। রানী গঞ্জ মহকুমার তথা রানীগঞ্জ থানার খোট্টা ডিহির সন্নিকটস্থ নিমসা গ্রামেই তাঁর বিয়ে হয়। অবশ্য বিয়ের পর তাঁর নামকরণ হয় সফুরা বিবি। নজরুল ব্যথার দান উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর কৈশরের সেই মানস প্রিয়ারই উদ্দেশ্যে এই বলে- মানসী আমার! মাথার কাঁটা দিয়েছিলুম বলে ক্ষমা করোনি, তাই বুকের কাঁটা দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত  করলুম। কবি তাঁর মানসীর মাথার কাঁটা বুকে করে রেখেছিলেন তাঁর গোটা সৈনিক জীবন। কাঁটাটি তিনি হারিয়ে ফেলেন সৈনিক জীবন শেষে কলকাতায় এসে। কবি সে কাঁটাটি দেখিয়েছিলেন তাঁর বন্ধু মুজফ্ফর আহমদকে। প্রিয়ার একটি মাত্র কাঁটাকে সম্বল করে বুকভরা বেদনা নিয়ে কতকটা অভিমান বশেই তিনি বাঙালী পল্টনে নাম লিখিয়ে যুদ্ধে চলে যান (নজরুল জীবনের অশ্রুত কাহিনী, শেখ মুহম্মদ নূরল ইসলাম)।

কুমিল্লার দৌলত পুরে আলী আকবর খানের ভাগ্নি সৈয়দা খাতুন ওরফে নার্গিসের প্রেমে মাতাল হন নজরুল। কবির জীবনে ঘনিষ্ঠ প্রেমের পরশ এনে দিয়েছে নার্গিস। নজরুল গবেষকদের কাছে তাই নার্গিসের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। সৈয়দা খানমের মামা ছিলেন আলী আকবর খান। তাঁর সঙ্গে নজরুলের পরিচয় কলকাতায় ৩২নং কলেজ স্ট্রিটে। আলী আকবর খান সম্রাট বাবরের জীবনী নিয়ে একটা নাটক লিখেছিলেন এবং টুকটাক পুস্তিকা লিখে নিজেই পুস্তকের দোকানে বিক্রি করে বেড়াতেন। নার্গিসের সঙ্গে কবির প্রথম পরিচয় হয় ১৯২১ সালের মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে। কবি নিমন্ত্রণে গিয়েছিলেন কুমিল্লার দৌলতপুরে আলী আকবর খাঁয়ের সঙ্গে। সেখানেই কবির মনের লেনদেন শুরু হয়। নার্গিসের সঙ্গে কবির আলোচনার সূত্রপাত ঘটেছিল কবির বাঁশি বাজানো নিয়ে। এক রাতে কবি খাঁ-বাড়ির দীঘির ঘাটে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। সেই বাঁশির সুরে মুগ্ধ হন নার্গিস। কবি তাঁর প্রেমে পড়েন প্রথম দেখাতেই। সৈয়দা খাতুনও কবির প্রেমে সাড়া দিয়েছিলেন।

নার্গিসের মায়ের নাম আসমাতুন্নেসা, স্বামী হারা আসমাতুন্নেসা মেয়েকে নিয়ে ভাই আলী আকবর খানের বাড়িতেই থাকতেন। সৈয়দা খাতুনকে ভালবেসে কবি তাঁর নাম রেখেছিলেন নার্গিস। কুমিল্লার দৌলতপুরে থাকা অবস্থাতেই কবি সিদ্ধান্ত নিলেন নার্গিসকে তিনি বিয়ে করবেন। ১৯২১ সালের ১৭ জুন নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের বিয়ের তারিখ ধার্য হয়। নজরুল বিয়ের রাতে মতান্তরে পরেরদিন সকালে কুমিল্লার বীরেন সেনকে (বিরজা সুন্দরীর ছেলে) সঙ্গে নিয়ে কুমিল্লার সেনগুপ্ত পরিবারে চলে আসেন। কবির জীবন নানা বিষাদে ছেয়েছিল। তাঁদের বিয়ে (বিয়েতে মতানৈক্য আছে) হলেও বাসর হয়নি। এরপর নার্গিসের সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরবর্তীতে নার্গিসকে ভালবেসে নজরুল লিখেছিলেন ১৫৭টি গান ও ১২০টি কবিতা। নার্গিসকে নিয়ে নজরুলের লেখা বিখ্যাত গানটি হলো- পথ চলিতে যদি চকিতে, কভু দেখা হয় পরান প্রিয়। নার্গিস আসার খানম পরবর্তীতে কবি আজিজুল হাকিমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাঁর সন্তানরা সবাই সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হন। ১৯২৪ সালে পশ্চিম বঙ্গের মেদিনীপুর কলেজ কবি নজরুলকে সংবর্ধনা প্রদান করে। কবি সংবর্ধনা সভায় স্বরচিত গান ও কবিতা আবৃত্তি করেন। কবির গানে আপ্লুত কমলা স্থানীয় স্কুলের এক শিক্ষকের কন্যা তাঁর গলার সোনার হারটি কবিকে উপহার দেন। হিন্দু ধর্মীয় সামাজিক গোড়ামির কারণে ধিকৃত হন সেই তরুণী। এর পরিণতি নজরুলের জন্য মেয়েটি আত্মহত্যা করেন। এ নিরপরাধ মেয়েটির করুণ মৃত্যুতে মর্মাহত হন কবি নজরুল। সেই গভীর দুঃখের দাহও তাঁকে দগ্ধ করেছে বহুকাল। ইন্দ্র বাবুর জ্যেষ্ঠ পুত্র বীরেন্দ্র কুমার সেনগুপ্ত ছিলেন আলী আকবর খানের বন্ধু। তিনি কলকাতায় থাকতেন এবং হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। আলী আকবর খান ইন্দ্র বাবুর স্ত্রী বীরজা সুন্দরী দেবীকে মা বলে ডাকতেন। সেই সুবাদে নজরুল তাঁদের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তাকে মা বলে ডাকা শুরু করেন। এই বাসাতেই নজরুল কিশোরী তাঁরকে দেখেন এবং তিনি প্রথম দেখাতেই তাঁরর সঙ্গে গভীর প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল শুক্রবার নজরুল আশলতা সেন ওরফে তাঁরর (ডাকনাম দুলি) সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

নজরুলের শাশুড়ির নাম ছিল গিরিবালা দেবী। তিনি ছিলেন বিধবা ও বাহ্মণের মেয়ে। নজরুল-তাঁরর বিয়েতে তাঁর শ্বশুরকুলের ঘোরতর আপত্তি ছিল। কিন্তু গিরিবালা দেবী বলেছিলেন আমার তাঁর (দুলি) নজরুলকে ভালবেসেছে। আমি আমার মেয়ের সুখের জন্য সেখানেই দুলির বিয়ে দেব। মুসলিম রীতি অনুসারে নজরুলের সঙ্গে তাঁরর বিয়ে পড়ানো হয়। মা ও মেয়ে উপন্যাসের লেখিকা মিসেস এম রহমান সাহেবার উদ্যোগে কলকাতার ৬নং হাজী লেনে এই বিবাহ কার্য সুসম্পন্ন হয়। বিয়ের পর আশলতা সেনগুপ্তার নতুন নামকরণ করা হয় প্রমীলা নজরুল ইসলাম। অতঃপর নব দম্পতিকে মিসেস এম রহমান হুগলিতে নিয়ে যান সেখানে ভুপতি মজুমদারের সহায়তায় হামিদুন নবী মোখতার সাহেবের একটি বাড়িভাড়া করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। কবি গভীরভাবে ভালবেসেছিলেন তাঁর প্রেয়সী প্রমীলাকে। তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল সুখের। বিয়েতে তখন তাঁর বয়স ছিল ১৪ আর নজরুলের ২৩। কবির জীবনে আসেন আরেক নারী ফজিলাতুন্নেসা। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের প্রথম স্নাাতকোত্তর মুসলমান ছাত্রী। কবি কাজী নজরুল ইসলাম ফজিলাতুন্নেসাকে মন থেকেই ভালবেসে গেছেন। কিন্তু এ প্রেমে গতিময় ছিল না। কারণ ফজিলাতুন্নেসা নজরুলের প্রেমের আহ্বানে সাড়া দেননি। অন্য ধাতুতে গড়া এই নারী তাৎক্ষণিক প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তাঁকে। প্রত্যাখ্যানের ভাষা ও আচরণ ছিল রীতিমতো কঠোর। ফজিলাতুন্নেসাকে কবি না পেয়ে লিখতে থাকেন একের পর এক চিঠি।

নিজ হাতে না দিলেও বন্ধুবর অধ্যাপক মোতাহার হোসেনকে দিয়ে পাঠাতেন প্রেমময়, যাতনায় বুক ভারি হওয়া নজরুলে প্রেম বাণী। ফজিলাতুন্নেসার প্রেম প্রত্যাখ্যান মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছিল কবিকে। ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে কবির পরিচয় ১৯২৮ সালে। কাজী মোতাহার হোসেন কবিকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফজিলাতুন্নেসার বাসায়। উদ্দেশ্য ছিল হাত গণনা। সেই নিরীহ উদ্দেশ্য নিয়ে কাছে এসে কবির চোখে প্রেম সুধা তুলে দিলেন ফজিলাতুন্নেসা। নজরুল তাঁকে বেশ কয়েকটি প্রেমপত্র পাঠিয়েছিলেন কিন্তু ফজিলাতুন্নেসা তাঁর প্রেমে সাড়া দেয়নি। নজরুল বলেছিলেন সঞ্চিতা আপনার নামে উৎসর্গ করে ধন্য হতে চাই। আমরা জানি সঞ্চিতা শেষাবধি রবীন্দ্রনাথের নামে উৎসর্গকৃত করা হয়েছিল। ১৯২৮ সালে ফজিলাতুন্নেসার বিলাত গমন উপলক্ষে কলকাতার সওগাত অফিসে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে ফজিলাতুন্নেসাকে উৎসর্গ করে নজরুল একটি স্বরচিত গান পরিবেশন করেন। জাগিলে পারুল কিগো, সাত ভাই চম্পা ডাকে উদিলে চন্দ্র লেখা বাদলের মেঘের ফাকে। চলিলে সাগর ঘুরে অলকার মায়ার পুরে, ফোটে ফুল নিত্য যেথায় জীবনের ফুল শাখে। লন্ডনে পিএইচডি করাকালীন সময়ে ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে খান বাহাদুর আহসান উল্লাহর পুত্র শামসুজ্জোহার সঙ্গে পরিচয় ঘটে এবং প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁর তত্ত্বাবধানে  ফজিলাতুন্নেসা ও শামসুজ্জোহার বিয়ে হয়। বিয়ের খবর শুনে নজরুল লিখেছিলেন- বাদল বায়ে মোর নিভিয়া গেছে বাতি। তোমার ঘরে আজ উৎসবের রাতি। ফজিলাতুন্নেসার প্রতি কবির ভালবাসা বছর দুয়েকের মতো ছিল। ফজিলাতুন্নেসার কাছ থেকে প্রেমে কোন ধরনের সাড়া না পেয়ে নজরুল একাই নীরবে ভালবেসে গেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রধান নলিনী মোহন বোসের প্রিয় ছাত্রী ছিলেন ফজিলাতুন্নেসা। তিনি অধ্যবসায়ী এই ছাত্রীকে নানাভাবে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতেন যাতে বয়স সুলভ চঞ্চলতা তাঁকে বিপথে নিতে না পারে। ফজিলাতুন্নেসাও ড. বোসকে দেবতার আসনে বসিয়েছিলেন। আলাপ-পরিচয়ের প্রথম পর্বেই এই শিক্ষকের প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ শ্রদ্ধার কথা হয়তো নজরুলকে জানিয়েছিলেন ফজিলাতুন্নেসা। এ ব্যাপারটি একেবারেই সহ্য করতে পারেননি নজরুল। তাঁর প্রেমাকাক্সক্ষা ও মিলনের ক্ষেত্রে এই লোকটিকেই বড় একটি বাধা বলে মনে হয়েছে নজরুলের। নজরুলের প্রেম জীবনে রানু সোমের কথাও উঠে এসেছে। সঙ্গীতজ্ঞ দীলিপ কুমার রায় রানুকে নজরুলের গান শেখাতেন। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে নজরুল নিজেই ঠিকানা খুঁজে ঢাকায় রানুদের বাড়িতে এসেছিলেন। ঢাকার বর্ধমান হাউজে প্রতিভা বসু ওরফে সোমকে গান শেখাতেন নজরুল। একপর্যায়ে দুজনের সম্পর্ক প্রণয়ে গড়ায়। সে সময় প্রতিভা বসুর (রানু সোম) প্রেমে পড়েছিলেন নজরুল। সেটি জানাজানি হয়ে গেলে ঢাকার স্থানীয় মাস্তান শ্রেণির কিছু ছোকরা বিষয়টি ভাল চোখে দেখেনি। একদিন মাস্তান ছোকরার দল বর্ধমান হাউজ থেকে রাত্রিতে ফেরার পথে নজরুলকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। অবশ্য নজরুল ও তাদের কাছ থেকে হাতের লাঠি কেড়ে নিয়ে গুন্ডাদের পিটিয়েছিলেন। শিল্পী কানন দেবীকেও নজরুল গান শিখিয়েছিলেন। আর তাঁকে ঘিরেও মুখরোচক ঘটনা ছড়িয়ে ছিল কলকাতায়। নিন্দুকরা এই সুযোগটিই নিয়েছিলেন। তাই অভিনেত্রী কানন বালা আর কবিকে নিয়ে কম কানা ঘুষা ছিল না। একবার কবি পনেরো-ষোলো দিন লাপাত্তা। শাশুড়ি গিরিবালা দেবী অনেক খোঁজা-খুঁজির পর কবিকে পেলেন অভিনেত্রী কানন দেবীর বাড়িতে। কাননকে গান শেখাচ্ছেন কবি। পাজি কোথাকার! তোমার জন্য আমরা জাত ছেড়েছি, ধর্ম ছেড়েছি। আমার মেয়ে মাথায় কলঙ্ক নিয়ে একদিন তোমার ঘর করতে এসেছিল আজ তাকে ভুলে তুমি এক সিনেমার অভিনেত্রীর ঘরে বসে আছো? শীঘ্রই গাড়িতে গিয়ে ওঠো। সেই যে কবি কানন বালার ঘর ছেড়েছিলেন আর কখনও সেখানে যাননি।

উমা মৈত্র ঢাকায় গান শিখেছিলেন নজরুলের কাছে। গান শেখাতে গিয়ে নজরুল নোটনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন বলে অনেকের ধারণা। কেননা কবির বিরহী প্রেমে নার্গিস-ফজিলাতুন্নেসার পাশাপাশি উমা মৈত্র ওরফে নোটনের কথাও উঠে এসেছে। তৎকালীন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রের মেয়ে নোটন। উমা মৈত্রের ডাকনাম নোটন। অধ্যক্ষ সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রের মেয়ে নোটন বাস করতেন ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে। উমা মৈত্র ওরফে নোটন দেখতে খুব সুন্দরী ছিলেন, শিক্ষিতও। তাঁদের বাবা-মায়ের ধারণা ছিল তাদের মেয়েকে বিয়ে করার মতো পাত্র জন্মায়নি। ফলে তাঁকে একাই থাকতে হতো। উমা মৈত্রকে গান শেখাতে গিয়ে নজরুল তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উমা মৈত্র ওরফে নোটন নজরুলের প্রেমে সাড়া না দিয়ে আরও অনেকের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। খুব সুন্দরী ছিলেন বলে একজন মুসলিম ছেলের সঙ্গে ও তাঁর প্রেম হয়েছিল। ছেলেটি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস (আই.সি.এস) ছিলেন। তারা দুজনে বেড়াতে এক সঙ্গে দার্জিলিংও গিয়েছিলেন। কিন্তু তার বাবা-মা সেই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেন নাই।  নোটন পরে আত্মহত্যা করেছিলেন। উমা মৈত্র ওরফে নোটনের কথা কবি নজরুল তার শিউলিমালা গল্পটিতে বর্ণনা করেছেন। শিউলি মূলত উমা মৈত্রের কাল্পনিক চরিত্র। জনৈক জাহানারা বেগম চৌধুরীকেও নজরুল ইসলাম ভাল বাসতেন। জাহানার চৌধুরী সম্পাদিত সে আমলের কাগজের নাম বর্ষ বানীরূপ রেখা। নজরুলের সঙ্গে জাহানারা চৌধুরীর দার্জিলিং এ মন দেয়া নেয়া হয়েছিল বলে অনেক গবেষকই মনে করেন। জাহানারা চৌধুরী নজরুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছিলেন। তিনি কবি নজরুলকে মনেপ্রাণে ভালবাসতেন কিন্তু পারিবারিক বাধার কারণে তাঁদের ভালবাসা স্থায়ী হয় নাই। নজরুল এসব হৃদয় ঘটিত ব্যাপারে আনন্দের চেয়ে দুঃখই পেয়েছেন বেশি। প্রেমের বিরহের বিদ্রোহের সাম্যবাদের কবি একজনই তিনি নজরুল। তাঁর শিল্প সাহিত্য যেমন প্রেম রয়েছে তেমনি রয়েছে বিরহের যাতনা। প্রেম নাকি কবি মানসের প্রধান প্রেরণা। প্রেমিক কবি নজরুলের মনতো প্রেমময় হবেই। আর তাই প্রেম নজরুলের জীবনে এসেছিল বারবার। কখনও ঝড়ের মতো কখনও নিভৃতে, নীরবে।


আরও খবর

একেক শিশুর পছন্দ একেক ধরনের বই

শনিবার ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

খুলে গেল কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার গেট

মঙ্গলবার ৩১ জানুয়ারী ২০২৩




আজ ঈদ

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | ৭৬৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

রোজা শেষে আবারও এলো ঈদ। খুশির বার্তা নিয়ে ঈদের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। বাংলাদেশের আকাশে মঙ্গলবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় এবার ৩০ রোজা পূর্ণ হলো। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আজ উৎসবের আমেজে মেতে উঠবেনে দেশবাসী।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম উম্মাহর প্রতি নিয়ামত হিসেবে ঈদ দান করেছেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন মদিনাবাসীদের দুটো দিবস ছিল যে দিবসে তারা খেলাধুলা করতো। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এ দুদিনের কী তাৎপর্য আছে? মদিনাবাসী উত্তর দিলেন, আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটো দিন দিয়েছেন। তা হলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (সুনানে আবু দাউদ: ১১৩৪)

ঈদের দিনের শুরু হয় ঈদের নামাজের মধ্য দিয়ে।ঈদের দিন সকালে পুরুষদের জন্য ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। বিশেষ পদ্ধতিতে অতিরিক্ত তাকবিরসহ জামাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা এবং তারপর ঈদের খুতবা দেওয়া ও শ্রবণ করা। ঈদের নামাজ খোলা ময়দানে আদায় করা উত্তম। 

ঈদুল ফিতরের দিন দেশের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। আবহাওয়া খারাপ হলে জাতীয় ঈদগাহে সম্ভব না হলে বায়তুল মোকাররমে জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়।

এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও পবিত্র ঈদুল ফিতরে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়।  তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়।  চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন  সর্বসাধারণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। আর নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং বাংলা নববর্ষে সরকারি কর্মচারীদের ছুটি শুরু হয়েছে ১০ এপ্রিল। অফিস খুলবে ১৫ এপ্রিল। তবে অনেকেই ৮ ও ৯ এপ্রিল দুদিনের ছুটি নিয়ে ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন টানা ১০ দিন। লম্বা ছুটির কারণে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হয়েছে কম। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সময় নিয়ে নিজের শেকড়ে ফিরতে পেরেছেন।

কর্মব্যস্ত এই নগরীর সবাই যখন ঈদ উদযাপনে ঢাকা ছেড়েছেন তখন এই ঢাকা হয়ে উঠেছে এক অন্য শহর। বদলে গেছে রাজধানীর চিত্র, নেই চিরচেনা রূপ। এখন আর ঢাকার সড়কে ঘণ্টা পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় না। মুহূর্তেই চলে যাওয়া যাচ্ছে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

এদিকে দেশের সবার জন্য সুখী, আনন্দময় ও নিরাপদ ঈদুল ফিতরের কামনা করে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একমাস সিয়াম সাধনার পর আবার আমাদের মধ্যে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এসেছে। ঈদ মানে আনন্দ। আসুন আমরা আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি।

রাজনৈতিক নেতাদের অধিকাংশই নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করবেন এবার। কেউ কেউ ঢাকায় ঈদ করবেন, আবার কেউ নামাজ শেষে যাবেন এলাকায়। সব মিলিয়ে  নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন তারা, যোগ দেবেন সামাজিক অনুষ্ঠানেও।


আরও খবর



বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | ৭৪০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৭টায় এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় নামে।

প্রথম জামায়াতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির হিসেবে ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক।

জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লিরা আসতে শুরু করেন। নামাজের সময়ে মুসল্লিদের ঢল নামে। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। নামাজের পর একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।

জাতীয় মসজিদে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ মো. আতাউর রহমান।

তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন আজিমপুর কবরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ইমরান বিন নূরউদ্দীন। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. আব্দুল হাদী।

চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. জসিম উদ্দিন।

পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল পৌনে ১১টায়। ইমামতি করবেন মিরপুর জামেয়া আরাবিয়া আশরাফিয়া ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুজ্জামান। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন।

৫টি জামাতে কোন ইমাম অনুপস্থিত থাকলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাষা শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীন বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।


আরও খবর



জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | ৭৩০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত শুরু হয়।

ঈদের প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের লাখো মুসল্লি।

ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি উপস্থিত সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

সিটি কর্পোরেশন থেকে জানানো হয়, এবার জাতীয় ঈদগাহের ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের জামাত আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। ছিল ঈদগাহে নারীদের জন্যও আলাদা নামাজের ব্যবস্থা।

এদিকে জাতীয় ঈদগাহ ছাড়াও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মোট পাঁচটি জামাত আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বায়তুল মোকাররমে সকাল ৭, ৮, ৯ ও ১০ ও ১০টা ৪৫ মিনিটে ঈদের জামাত হবে।


আরও খবর