Logo
শিরোনাম

নৌ দুর্ঘটনার অর্ধেকই সংঘর্ষ-ধাক্কায়, ৭ বছরে প্রাণহানি ৫ হাজার

প্রকাশিত:রবিবার ০৩ এপ্রিল ২০২২ | হালনাগাদ:শনিবার ০৪ নভেম্বর ২০২৩ | ৯১৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক

আব্দুল্লাহ আল জাবেরের (২৮) গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। তিন ভাইয়ের মধ্যে পরিবারের বড় সন্তান জাবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। চাকরির পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছিলেন ফ্রিল্যান্সিং পেশায়। বেড়ে ওঠা গ্রামের জল-মাটি-হাওয়ায়। তবে সাঁতারটা শেখা হয়নি কখনো। যে কারণে নৌপথে চলাচলে বরাবরই ছিল অনীহা। কিন্তু কে জানতো, একদিন এ নদীপথেই হবে জীবনের অন্তিম যাত্রা!

গত ২০ মার্চ লঞ্চে বন্ধুদের সঙ্গে মুন্সিগঞ্জে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন জাবের। নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় কার্গো জাহাজের ধাক্কায় শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে যায় তাদের লঞ্চটি। জীবন বাঁচাতে বন্ধুদের মতো জাবেরও ঝাঁপ দেন নদীতে। সাঁতার না জানা এ তরুণ হয়তো তখনো বুঝে উঠতে পারেননি জীবনপ্রদীপ তার অস্তমিত হতে চলেছে। লঞ্চডুবির ঘটনার দুদিন পর জাবেরের নিথর দেহের খোঁজ মেলে।

দেশের নৌপথে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার চিত্র নতুন নয়। প্রতি বছর নদীপথে চলাচল করতে গিয়ে অকালে ঝরে অনেক প্রাণ। গত বছরের জুন মাসে বুড়িগঙ্গা নদীতে মর্নিং বার্ড লঞ্চের ওপর এমভি ময়ূর-২ নামের জাহাজ উঠে গেলে লঞ্চটির ৩৪ যাত্রীর প্রাণহানি হয়। সবশেষ মাস তিনেক আগে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে মধ্যরাতে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৪ জনের মৃত্যুতে কেঁপে ওঠে পুরো দেশ। এতে আহত হন শতাধিক যাত্রী।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়াধীন জরুরি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত সাত বছরে দেশে চার হাজার ৭৯১টি নৌ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে চার হাজার ২৩৮ জনের। আহত হয়েছেন দুই হাজার ৭১৪ জন। বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি নৌ দুর্ঘটনা ও মৃত্যু হয় ঢাকা বিভাগে, সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় নৌপথ হতে পারতো যাতায়াতের সহজ মাধ্যম। একটা সময় ছিল সেরকমই। তবে দৃশ্যপট পাল্টেছে। বদলেছে নদী ও নৌ পরিবহনের বাস্তবতা। দখল-দূষণে এরই মধ্যে বহু নদ-নদী নাব্য হারিয়ে ধুঁকছে। নৌ ব্যবস্থাপনায়ও নেই কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি। এরপরও ব্যয়সাশ্রয়ী নদীপথই এখনো লাখ লাখ মানুষের যোগাযোগ ও চলাচলের প্রধান মাধ্যম।

তবে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অদক্ষ চালক, যান্ত্রিক ত্রুটি, নৌযান চালনায় প্রতিযোগিতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুমতি ব্যতিরেকে নতুন ইঞ্জিন লাগানো, নৌযান চালনায় নিয়মভঙ্গসহ নানাবিধ কারণে নৌপথ এখন মৃত্যুফাঁদ। যেখানে বছরের বিভিন্ন সময় ঘটছে বড়োসড়ো দুর্ঘটনা। যাত্রীদের নিরাপত্তায় লঞ্চে লাইফ জ্যাকেট বা লাইফ বয়া কম থাকা, অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম না থাকা, বাকেটে পানি বা বালি যাত্রীরা জরুরি প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে নৌ দুর্ঘটনায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।

দেশের নদীপথে স্মরণকালের বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০০৩ সালে, চাঁদপুরে। ঢাকা থেকে ভোলাগামী এমভি নাসরিন-১ নামের লঞ্চটি অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বোঝাই করায় তলা ফেটে তলিয়ে যায়। সরকারি হিসাবে, এতে ৬৪১ জনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য দেওয়া হলেও বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা প্রায় ৮০০।

নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান  বলেন, যাত্রীবাহী লঞ্চ দুর্ঘটনার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে এক লঞ্চের সঙ্গে অন্য লঞ্চের ধাক্কা, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, বৈরী আবহাওয়ায় লঞ্চ চালনা, আগুন ও বিস্ফোরণ, মানবসৃষ্ট ভুল, নৌরুট ও বন্দরের দুর্বল ব্যবস্থাপনা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তবে যাত্রীদের অসচেতনতার কারণেও কখনো কখনো নৌ দুর্ঘটনা ঘটে।

দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন নৌপথে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করে বেশি ভাড়া আদায়ের হিসাব কষতে গিয়ে লঞ্চ মালিকরা ঝুঁকি নিয়েই নৌ চলাচলে সায় দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এতেই ঘটে ভয়াবহ সব দুর্ঘটনা। অথচ একটি দুর্ঘটনার তদন্তকাজ শেষ হতে না হতেই নতুন কোনো দুর্ঘটনা সেটিকে চাপা দেয়। নৌপথের এ অব্যবস্থাপনা নিরসনে মালিকপক্ষ থেকে শুরু করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা বিভিন্ন সময় আশ্বাসের কথা শোনালেও কার্যত অবস্থার কোনো উন্নতি বা পরিবর্তন নেই।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী  বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী ও ভাড়া আদায়, ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সার্ভে সনদ ও রুট পারমিট প্রদান, অদক্ষ চালকসহ নানা কারণে নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের মতো লঞ্চেও মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ইঞ্জিন বা বডি নিয়ে অসংখ্য যাত্রীর জীবন নিয়ে খেলছেন লঞ্চ মালিক ও চালকরা। বছর বছর লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হলেও যাত্রীসেবা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা এখনো সেকেলে। এতে নৌপথে মৃত্যুঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে ২০১৬ সাল থেকে যেসব লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় ৫৪ শতাংশই অন্য নৌযানের সঙ্গে সংঘর্ষ ও ধাক্কা লেগে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২৩ শতাংশ, বাকি ২৩ শতাংশ দুর্ঘটনা অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন, লঞ্চের তলা ফেটে, যান্ত্রিক ত্রুটি, আগুন ও বিস্ফোরণের কারণে।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হলেও দেশে নৌ চলাচলে এখনো সময়োপযোগী ও কার্যকরী কোনো আইন নেই। বিষয়টিকে অত্যন্ত দুঃখজনক মনে করছেন নৌখাত সংশ্লিষ্টরা। ১৯৭৫ সালের পর দেশে সামরিক শাসন চলাকালে অভ্যন্তরীণ জলসীমায় নিরাপদ ও দুষণমুক্ত নৌ চলাচল নিশ্চিত করতে দ্য ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এরপর প্রায় ৪৭ বছর পেরিয়েছে। এরই মধ্যে সামরিক আইনকে বৈধতা দেওয়া সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীও বাতিল হয়েছে, একের পর এক লঞ্চ দুর্ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু সামরিক শাসনামলের সেই আইন দিয়েই চলছে দেশের নৌপরিবহন। একের পর এক নৌ দুর্ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করতে পারেনি নৌপথের নতুন আইন।

এ নিয়ে একাধিকবার আইনের খসড়া তৈরি করে এখনো অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল আইন, ২০২১ নামে একটি খসড়া আইন প্রণয়নের মধ্যেই তা আটকে রয়েছে। খসড়া আইনটির ৭৩ ধারায় অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনের ৮০ ধারায় কোম্পানির পরিচালকদেরও সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী করে শাস্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে মালিকপক্ষের দ্বিমত থাকায় এখনো চূড়ান্ত হয়নি আইনটি। আবার শুধু সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া গেলেও লঞ্চ বা জাহাজের সার্ভে সার্টিফিকেট দেওয়া ব্যক্তি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের অবহেলার ক্ষেত্রেও আইনটিতে কোনো শাস্তি বা সাজার বিধান রাখা হয়নি।

প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই অনেকটা দায়সারাভাবে গঠন করা হয় এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি। প্রতিটি তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ, দায়ী ব্যক্তি চিহ্নিতকরণ, ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধের উপায় বা প্রতিকার এবং কিছু সুপারিশ করলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখে না। আবার প্রতিটি কমিটি কোনো সমন্বয় ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ায় নানা বিষয়ে থাকে মতানৈক্য। এতে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েন। এই টানাপোড়েনে শেষ পর্যন্ত কোনো সুপারিশই বাস্তবায়ন করা হয় না। যে কারণে পুনরাবৃত্তি ঘটে এসব দুর্ঘটনার।

যাতায়াতের অন্য যে কোনো মাধ্যমের চেয়ে নৌপথে দুর্ঘটনা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এতে জানমালের ক্ষতিও হয় বেশি। ফলে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন, দুর্ঘটনার কারণ ও কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, সেসব বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে একটা কার্যকর ও আলাদা আইন জরুরি। সেটা হচ্ছে না বলেই নৌপথে একের পর এক দুর্ঘটনা দেখতে হচ্ছে, এমনটিই মনে করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রফেসর মাহবুব তালুকদার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, যে মানসম্মত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তদন্ত করার কথা তার আশপাশেও আমরা নেই। যে কারণে দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। প্রায় প্রতিটি দুর্ঘটনার পরই আমরা একটা গ্রুপকে দোষারোপ করি অথচ প্রকৃতপক্ষে যারা দায়ী তারা এ কমিটি বলয়েই থাকে। পরোক্ষভাবে যারা জড়িত তারাও থাকে কমিটিতে। তাই আইন এমন হতে হবে যে, তদন্ত কমিটিতে কারা থাকবে, তারা কী ভূমিকা রাখবে- সেগুলোর সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকবে।

নৌ দুর্ঘটনা রোধে করণীয় বিষয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, প্রথমত মনিটরিংটা আরও জোরদার করতে হবে। একইসঙ্গে আইনে দায়ীদের শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা, আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এবং আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচতেনতা বাড়ানোও জরুরি।

অভিজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়েই তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রমাণসাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়- এমন দাবি করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী  বলেন, যে কোনো দুর্ঘটনার পরই আমরা তদন্ত কমিটি করি। যারা ঘটনাগুলোর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত বলে মনে হয় তাদের দিয়ে আমরা তদন্ত কমিটি করি না। শিপিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, প্রকৌশলী ও বুয়েটের অধ্যাপকসহ সংশ্লিষ্টরাই তদন্ত কমিটিতে থাকেন। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ও সুপারিশের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। আলোচিত দুর্ঘটনায় সরাসরি জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। তাদের চাকরিতে পদোন্নতি যেন না হয় সেটাও নিশ্চিত করি। কাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে নৌপথে দুর্ঘটনা হ্রাসে আমরা বরাদ্দ বাড়িয়েছি। চেষ্টা করছি, জনগণের ভোগান্তিও যেন কমে।

অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল আইন, ২০২১র খসড়া আইনটি চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, খসড়া আইনটি আমরা মন্ত্রিপরিষদে পাঠিয়েছিলাম। কিছু অবজারবেশন দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়ে এ খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করতে পারবো বলে আশা করছি।


আরও খবর



আজ ঈদ

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | ৭৭০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

রোজা শেষে আবারও এলো ঈদ। খুশির বার্তা নিয়ে ঈদের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। বাংলাদেশের আকাশে মঙ্গলবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় এবার ৩০ রোজা পূর্ণ হলো। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আজ উৎসবের আমেজে মেতে উঠবেনে দেশবাসী।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুসলিম উম্মাহর প্রতি নিয়ামত হিসেবে ঈদ দান করেছেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন মদিনাবাসীদের দুটো দিবস ছিল যে দিবসে তারা খেলাধুলা করতো। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এ দুদিনের কী তাৎপর্য আছে? মদিনাবাসী উত্তর দিলেন, আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটো দিন দিয়েছেন। তা হলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (সুনানে আবু দাউদ: ১১৩৪)

ঈদের দিনের শুরু হয় ঈদের নামাজের মধ্য দিয়ে।ঈদের দিন সকালে পুরুষদের জন্য ঈদের নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। বিশেষ পদ্ধতিতে অতিরিক্ত তাকবিরসহ জামাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা এবং তারপর ঈদের খুতবা দেওয়া ও শ্রবণ করা। ঈদের নামাজ খোলা ময়দানে আদায় করা উত্তম। 

ঈদুল ফিতরের দিন দেশের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। আবহাওয়া খারাপ হলে জাতীয় ঈদগাহে সম্ভব না হলে বায়তুল মোকাররমে জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়।

এছাড়া প্রতিবারের মতো এবারও পবিত্র ঈদুল ফিতরে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়।  তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়।  চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন  সর্বসাধারণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। আর নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং বাংলা নববর্ষে সরকারি কর্মচারীদের ছুটি শুরু হয়েছে ১০ এপ্রিল। অফিস খুলবে ১৫ এপ্রিল। তবে অনেকেই ৮ ও ৯ এপ্রিল দুদিনের ছুটি নিয়ে ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন টানা ১০ দিন। লম্বা ছুটির কারণে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি হয়েছে কম। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ সময় নিয়ে নিজের শেকড়ে ফিরতে পেরেছেন।

কর্মব্যস্ত এই নগরীর সবাই যখন ঈদ উদযাপনে ঢাকা ছেড়েছেন তখন এই ঢাকা হয়ে উঠেছে এক অন্য শহর। বদলে গেছে রাজধানীর চিত্র, নেই চিরচেনা রূপ। এখন আর ঢাকার সড়কে ঘণ্টা পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় না। মুহূর্তেই চলে যাওয়া যাচ্ছে শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

এদিকে দেশের সবার জন্য সুখী, আনন্দময় ও নিরাপদ ঈদুল ফিতরের কামনা করে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একমাস সিয়াম সাধনার পর আবার আমাদের মধ্যে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এসেছে। ঈদ মানে আনন্দ। আসুন আমরা আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করি।

রাজনৈতিক নেতাদের অধিকাংশই নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করবেন এবার। কেউ কেউ ঢাকায় ঈদ করবেন, আবার কেউ নামাজ শেষে যাবেন এলাকায়। সব মিলিয়ে  নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন তারা, যোগ দেবেন সামাজিক অনুষ্ঠানেও।


আরও খবর



জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | ৭৪৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদ জামাত শুরু হয়।

ঈদের প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও বয়সের লাখো মুসল্লি।

ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি উপস্থিত সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

সিটি কর্পোরেশন থেকে জানানো হয়, এবার জাতীয় ঈদগাহের ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মুসল্লি ঈদের জামাত আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। ছিল ঈদগাহে নারীদের জন্যও আলাদা নামাজের ব্যবস্থা।

এদিকে জাতীয় ঈদগাহ ছাড়াও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মোট পাঁচটি জামাত আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে।  ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বায়তুল মোকাররমে সকাল ৭, ৮, ৯ ও ১০ ও ১০টা ৪৫ মিনিটে ঈদের জামাত হবে।


আরও খবর



বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১১ এপ্রিল ২০২৪ | ৭৪০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৭টায় এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় নামে।

প্রথম জামায়াতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির হিসেবে ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক।

জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রথম জামাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লিরা আসতে শুরু করেন। নামাজের সময়ে মুসল্লিদের ঢল নামে। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। নামাজের পর একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।

জাতীয় মসজিদে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ মো. আতাউর রহমান।

তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন আজিমপুর কবরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ইমরান বিন নূরউদ্দীন। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. আব্দুল হাদী।

চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. জসিম উদ্দিন।

পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল পৌনে ১১টায়। ইমামতি করবেন মিরপুর জামেয়া আরাবিয়া আশরাফিয়া ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুজ্জামান। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন।

৫টি জামাতে কোন ইমাম অনুপস্থিত থাকলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাষা শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীন বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।


আরও খবর