Logo
শিরোনাম

অবৈধ সুদকারবারি, দখলদার কে এই খুইশ্যা ওরফে খোরশেদ ?

প্রকাশিত:শনিবার ২৩ জুলাই ২০২২ | হালনাগাদ:সোমবার ২০ নভেম্বর ২০23 | ৮৮০জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

চাঁদপুর প্রতিনিধি : পড়েন লুঙ্গি, আর সেই লুঙ্গির ভাঁজে ভাঁজে গুঁজে রাখেন লাখ টাকা। কখন যে কাকে চড়া সুদে ধার দিবেন এসব টাকা সে অপেক্ষায় প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ান পথে-ঘাটে , হাটে-বাজারে। এভাবেই দেশের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন সুদের অবৈধ ব্যবসা। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দক্ষিণ লুধুয়া গ্রামের হাওলাদার বাড়ির খোরশেদ হাওলাদারের এমন অবৈধ সুদ ব্যবসায় চক্ষু চরক গাছে স্থানীয়দের। কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কিংবা রাষ্ট্রিয় বৈধতা ছাড়াই ব্যক্তিগত মর্জিতে এমন কর্মকান্ডে জড়িয়ে আছেন বছরের পর বছর ধরে।

সুদের টাকা লেনদেনে নিজেই তৈরি করছেন দলিল সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। স্থানীয় কিছু অসাধু সিন্ডিকেটের  ছত্রছায়ায় অবৈধ এই কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন খুইশ্যা ওরফে খোরশেদ । চড়া মূল্যের সুদ আদায় না হলে নিজস্ব সিন্ডিকেটের সদস্যদের নিয়ে তৈরি করেন ব্যাক্তিগত বলয়। নানা মুখি চাপ সৃষ্টি করে ভয়ভিতি প্রদর্শন করে সুদ গ্রহিতা থেকে আদায় করেন মোটা অঙ্কের টাকা। এমন ঘটনা এ এলাকার ঘরে ঘরে।দীর্ঘ সময় ধরে এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ে আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন ।

এমন ঘটনায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও পরিবারে আত্মহত্যার মত মারাত্মক ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অবৈধ সুদকারবারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন ব্যারিষ্টার সায়েদুল হক সুমন।

এরপর একই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর অবৈধ সুদকারবারিদের তালিকা প্রণয়ণ ও অবৈধ প্রতিষ্ঠান সমুহ বন্ধ করার বিষয়ে আদেশ প্রদান করেন উচ্চ আদালত। এ আদেশের পর রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অবৈধ সুদকারবারিদের আটক শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোঁখ ফাঁকি দিয়ে সুদকারবারি খুইশ্যা ওরফে খোরশেদ হাওলাদার কিভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন সুদের লেনদেন! এমন প্রশ্ন এখন জনমনে।

সরকারি খাল দখল

শুধুমাত্র সুদকারবারিই নন, একাধারে রাষ্ট্রিয় সম্পদ দখলদার হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে তার। ইট দিয়ে দেয়াল টেনে সরকারি খালের জায়গা দখল করে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। এসব কাজেও সহযোগী হিসেবে রয়েছেন তার সিন্ডিকেটের অন্নান্য সদস্যরা। মতলব উত্তরের দক্ষিণ লুধুয়া গ্রামের নয়াকান্দি বাজার সংলগ্ন খালের একটি অংশে দেয়াল টেনে নিজস্ব সম্পদ বানিয়ে রেখেছেন তিনি।

তবে অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে খালের জায়গা পুনঃউদ্ধার করা হবে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার।

সন্তান আত্মহত্যা ও আরেক সন্তান নিখোঁজ

পারিবারিক কলহ ও নানা ঘটনায় আত্মহত্যা করেন খোরশেদ হাওলাদার ওরফে খুইশ্যার এক ছেলে। বেশ কয়েক বছর আগে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পর তার আরেক সন্তান সোহাগ হাওলাদার নিখোঁজ হন। তবে নিখোঁজের পর থেকে কয়েক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আইনী সহযোগীতা নেননি তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজাহান কামাল।

জানা যায়, রাজধানী ঢাকার উত্তরার হাউজ বিল্ডিং সহ আশে পাশের এলাকায় চলাচলকারী লেগুনায় হেলপার ও ড্রাইভারের কাজ করতেন খোরশেদ হাওলাদার ওরফে খুইশ্যার ছেলে সোহাগ। এক সময় সে গাড়ি চোর সিন্ডিকেটের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। মাঝে মধ্যে নিজ এলাকা চাঁদপুরের মতলব উত্তরের দক্ষিণ লুধুয়া গ্রামে আসলেও হঠাৎ করেই আসা বন্ধ হয়ে যায়।

দীর্ঘদিন নিজ এলাকায় সোহাগের দেখা না মেলায় তার পরিচিত জনদের কাছ থেকে জানা যায় কারোর সঙ্গেই যোগাযোগ নেই সোহাগের। এমনকি খোরশেদ হাওলাদার নিজের ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে মুখ খোলেননি কখনো। এমনকি স্থানীয় থানা কিংবা দেশের কোথাও কোন প্রকার আইনি সহযোগিতার জন্য ব্যবস্থা নেননি।বাবা হয়ে সন্তানের নিখোঁজের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা না নেয়ায় নানা প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। সাধারণ দৃষ্টিতে এটিকে পারিবারিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হলেও এর পেছনের তথ্য লুকানো কিংবা নিজেরাই ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে আইনী ব্যবস্থা থেকে দূরে থাকছেন বলে মনে করছেন অনেকেই।

ধারণা করা হচ্ছে গাড়ি চোর সিন্ডিকেটের সদস্যদের দ্বারা সোহাগ নিখোঁজ হয়েছেন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কোন প্রকার আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় এবং দীর্ঘ কয়েক বছরে খোঁজ না মেলায় রহস্য যেন থেকেই যাচ্ছে।

এসব বিষয়ে মুঠফোনে খোরশেদ হাওলাদার এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী ফোন ধরেন। নিজেকে তিনি খোরশেদ এর স্ত্রী পরিচয়ে দিলেও খোরশেদ নিজেকে খোরশেদ বলে অস্বীকার করেন।


আরও খবর