বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের টাকা- বিরোধীদলের সংসদ সদস্যদের এমন অভিযোগের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাদের নাম জানতে চেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারে কারা জড়িত, নাম তাঁর কাছে নেই।
সোমবার (৭ জুন) সংসদে সম্পূরক বাজেটের উপর আলোচনায় বিরোধীদলীয় সদস্যরা অর্থ পাচারের প্রসংগ টানার পর অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'নামগুলো আমাদের দেন। কাজটি করলে আমাদের জন্য সহজ হবে। এখনো অনেকেই জেলে আছে। বিচার হচ্ছে। আগে যেমন ঢালাওভাবে চলে যেতো, এখন তেমন নেই। কারা টাকা নিয়ে যায়, লিস্ট আমার কাছে নেই।'
এর আগে বিএনপি'র সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, 'যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, শেয়ারবাজার শুয়ে পড়ে। ৯৬ সালে, ২০০৯ সালে শুয়ে পড়লো। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বললেন, তিনি শেয়ারবাজার বোঝেন না। শেয়ার বাজার ফটকা বাজার। সেই অর্থমন্ত্রী স্পষ্ট কথা বলতেন, দলের বিপক্ষে গেলেও বলতেন। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিবারের হাতে ব্যাংক তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনগণের টাকার হরিলুট হচ্ছে। সংসদে ঋণ খেলাপির তালিকা দেওয়া হলো। ৩০০ জন। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো? বিদেশে ১ লাখ কোটি টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। ওভার আর আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যাচ্ছে। এর বাইরে হুন্ডির পরিমাণ ধরলে আল্লাহ মাবুদ জানেন কতো টাকা বিদেশে গেছে!'
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, 'আর্থিক খাতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্ব সঠিক। কর্তৃত্ব দুর্বল। ব্যাংকে কর্তৃত্ব নেই। কর্তৃত্ব না থাকলে অবাধে এসব হবে। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংকের টাকা নিচ্ছেন। টাকা নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ পাঠাচ্ছেন।'
তিনি বলেন, 'দুদকের একটি অফিস কানাডায়, মালয়েশিয়ায়, অস্ট্রেলিয়ায় করুন। তাহলে দেখা যাবে কে কতো টাকা নিয়েছেন।'
জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, 'ব্যাংকিং খাত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্যাতিত এতিমদের মতো। দেখার কেউ নেই। লুটপাট হচ্ছে। দুর্নীতি হচ্ছে। কিছুই হয় না। শাস্তি হয় না।'
এসব সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, '১২ বছরে ঋণের সুদহার ১২.১ ভাগ থেকে কমে ৭.৩ ভাগ হয়েছে। এখন ব্যাংকের শাখা দ্বিগুণ হয়েছে। চাহিদা বেড়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে ব্রাঞ্চ হয়েছে। দেশের মানুষ সেবা পাচ্ছেন। ২০০৬ সালে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১৩.৬ শতাংশ। এখন আট শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৬ সালে টোটাল লোন আউটস্ট্যাডিং ছিলো ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। যা এখন আটগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।'
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, 'দেশের মানুষের কষ্টে অর্জিত টাকা বিদেশে চলে যাবে, আপনাদের যেমন লাগে, আমারও লাগে। আমি অনিয়ম, বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। আমরা সবাই চাই, এগুলো বন্ধ করতে হবে। বন্ধ হচ্ছে। আগের মতো অবস্থা নেই। আগে সিমেন্টের নাম করে বালি আসতো। একটার নাম করে আরেকটা আসতো। আন্ডারইনভয়েসিং, ওভারইনভয়েসিং আগের মতো হয় না। একদম বন্ধ হয়ে গেছে বলবো না। পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই না।'
মুস্তফা কামাল বলেন, 'আগামী ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে ১৫টি আইন দেখতে পারবেন। এগুলো বন্ধ করার জন্য। আমি নিজে জানি কীভাবে এগুলো হয়। কারা করে জানি না। অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, ইনএফেকটিভ ম্যানেজমেন্টের জন্য এগুলো হয়। আমরা সংস্কারমুখী কাজ করবো। নতুন নতুন আইন করবো। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে দায় নিয়ে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দেব। কোনো টলারেন্স নেই এখানে। টাকা এখন দেশে আসে।'