জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের বিষয়টি আরও এক ধাপ এগিয়েছে। লন্ডনের একটি আদালত গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার জন্য অ্যাসাঞ্জকে দেশটিতে স্থানান্তরের আদেশ দিয়েছেন। আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ সম্পর্কিত কয়েক হাজার নথি প্রকাশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা। খবর ইন্ডিপেন্ডেন্টের
আটক হওয়ার শুরু থেকেই অ্যাসাঞ্জ আদালতের মাধ্যমে প্রত্যর্পণ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। একজন জেলা বিচারক ২০২১ সালের জানুয়ারিতে হস্তান্তর নিষিদ্ধ করেছিলেন, এই বলে যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গেলে আত্মহত্যার সত্যিকারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং হাইকোর্ট তাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। গত মাসে যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত নিশ্চিত করেছে যে অ্যাসাঞ্জের দল তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে না।
ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেটস কোর্ট এখন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতাকে প্রত্যর্পণের আদেশ জারি করেছে। বুধবার একটি সংক্ষিপ্ত শুনানিতে বিচারক এই আদেশ জারি করেন। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার স্থানান্তর আরও কাছাকাছি এনেছে। এখন স্বরাষ্ট্রসচিব প্রীতি প্যাটেলে অনুমোদন দিলেই অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণে কোনো বাধা থাকবে না।
তবে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে অ্যাসাঞ্জের জন্য সমস্ত আইনি পথ শেষ হয়নি। তার আইনজীবীদের এখন প্রীতি প্যাটেলের কাছে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য চার সপ্তাহ সময় আছে এবং তারা হাইকোর্টে আপিল করতে চাইতে পারেন। অ্যাসাঞ্জ গত মাসে তার বাগদত্তা স্টেলা মরিসকে কারাগারেই বিয়ে করেন।
২০১০ ও ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ গোপন নথি ফাঁস করে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যকে বলা হয়, যদি তারা হস্তান্তরে সম্মত হয়, তবে অ্যাসাঞ্জ তার জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায় যেকোনো মার্কিন কারাগারে সাজা ভোগ করতে পারবেন। এছাড়া তাকে কলোরাডোর উচ্চ নিরাপত্তাবিশিষ্ট এডিএক্স কারাগারে রাখা হবে না। তখন ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা।
জুলিয়ান পল অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক, প্রকাশক, কম্পিউটার প্রোগ্রামার। তিনি বহুল আলোচিত উইকিলিকস এর প্রধান নির্বাহী যা মূলত গোপন নথি প্রকাশের জন্য বিখ্যাত। ১৯ জুন ২০১২ থেকে ১১ এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে অবস্থিত ইকুয়েডর দূতাবাসে রিফিউজি হিসেবে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন। কিন্তু ইকুয়েডর ২৭ জুলাই ২০২১ আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাসাঞ্জের নাগরিকত্ব বাতিল করে। তথ্য গোপন ও জালিয়াতির অভিযোগে তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের একটি মামলার আসামী হিসেবে তিন বছর ধরে বেলমার্শ কারাগারে বন্দি রয়েছেন।