পাম অয়েল রফতানিতে ইন্দোনেশিয়ার বেশকিছু পলিসি মালয়েশিয়ার জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। অপ্রত্যাশিত এসব পলিসির সুবাদে মালয়েশিয়া বিশ্বের শীর্ষ ভোজ্যতেল ক্রেতা দেশ ভারতের বাজারে আধিপত্য বাড়াতে সক্ষম হচ্ছে। শিল্পসংশ্লিষ্টরা এ কথা জানিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক দেশ। কিন্তু ২২ এপ্রিল দেশটি পাম অয়েল রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। এমন আরো বেশ কয়েকটি ধারণাতীত পলিসি হাতে নিয়েছে দেশটি। ফলে ভারতের ভোক্তারা বিকল্প উৎস হিসেবে মালয়েশিয়ার ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছেন। মালয়েশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্দোনেশিয়ার তুলনায় দেশটিতে অর্ধেকেরও কম পাম অয়েল উৎপাদন হয়।
মালয়েশিয়ার পণ্যবাজারবিষয়ক মন্ত্রী জুরাইদা কামারুদ্দিন বলেন, ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রফতানি বন্ধ ঘোষণার পুরোপুরি সুবিধা নিতে উপযুক্ত অবস্থান তৈরি করছে মালয়েশিয়া। এরই অংশ হিসেবে দেশটি পাম অয়েল রফতানি শুল্ক অর্ধেকেরও নিচে নামিয়ে আনতে যাচ্ছে।
তথ্য বলছে, ৩১ অক্টোবর চলতি বিপণন মৌসুম শেষ হবে। ভোজ্যতেল বাণিজ্য সংস্থা সলভেন্ট এক্সট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রাক্কলন অনুযায়ী, এ মৌসুমে ইন্দোনেশিয়ার ভারতে পাম অয়েল রফতানির হিস্যা কমে ৩৫ শতাংশে নেমে যেতে পারে। এর মূল কারণ কমতির দিকে থাকা ট্যাক্স ও ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞা। অথচ এক দশক আগেও বাজার হিস্যা ছিল ৭৫ শতাংশ।
মুম্বাইভিত্তিক সলভেন্ট এক্সট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (এসইএ) নির্বাহী পরিচালক ভি বি মেহতা বলেন, ইন্দোনেশিয়ার অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তের কারণে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে মালয়েশিয়া। ইন্দোনেশিয়া বাজারে না থাকায় মালয়েশিয়া পাম অয়েল বিক্রি বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, রেকর্ড সর্বোচ্চ দামেই দেশটি পাম অয়েল বিক্রি করছে।
এসইএর দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমের প্রথম পাঁচ মাসে ভারত সব মিলিয়ে ১৪ লাখ ৭০ হাজার টন মালয়েশিয়ান পাম অয়েল ক্রয় করেছে। বিপরীতে ইন্দোনেশিয়া থেকে কেনা হয়েছে ৯ লাখ ৮২ হাজার টন। ব্যবসায়ীদের চলতি মাসের জন্য করা প্রাক্কলন অনুযায়ী, ভারত প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার টন পাম অয়েল ক্রয় করেছে। এর মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টন এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার টন আমদানি করা হয়। যদি ইন্দোনেশিয়ার পাম অয়েল রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত আরো দুই মাস কার্যকর থাকে তবে আগামী জুনে ভারতের পাম অয়েল আমদানি কমে সাড়ে তিন লাখ টনে নামতে পারে। এর মধ্যে আবার বেশির ভাগই আমদানি করা হবে মালয়েশিয়া থেকে। ভারতের আমদানির উৎসেএমন পরিবর্তন ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আধিপত্যকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতীয় এক ক্রেতা জানান, ইন্দোনেশিয়া হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই রফতানি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দিতে পারে। কিন্তু আবারো দেশটি নিষেধাজ্ঞা দেবে না, এমন নিশ্চয়তা নেই। তবে মালয়েশিয়ার রফতানি নীতিমালা ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে অনেক স্থিতিশীল। ব্যবসায়ীরা এ স্থিতিশীলতাই চান।