‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অনুমোদন দিতে যাচ্ছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইতোমধ্যে চারবার পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার পঞ্চমবারের মতো এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়তে যাচ্ছে। তবে এবার মেয়াদ বাড়লেও বাড়ছে না ব্যয়।
সোমবার (২২ মার্চ) এ বিষয়ে আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেন, কদিনের মধ্যে মেয়াদ বাড়িয়ে দেব। আমরা মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে। কিন্তু কতটুকু মেয়াদ বাড়াবো, সেটা এনালাইসিস করে জানিয়ে দেব। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় নাই।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মূলসেতু ও নদীশাসন কাজসহ অবশিষ্ট কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১ বছর এবং দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ কাজ ও ঠিকাদারদের দেনাপাওনা মিটিয়ে দেয়ার জন্য আরো ১ বছরসহ সুপারিশ ও মতামত প্রতিপালন সাপেক্ষে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ (তৃতীয়বার) ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে আইএমডি মত দিয়েছে।
আইএমডি সুপারিশ করেছে, বিভিন্ন অঙ্গভিত্তিক কাজ নির্ধারিত মেয়াদে সমাপ্ত করার লক্ষ্যে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং নিয়মিত ফলোআপ সভা করে বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় গৃহীত আয়বর্ধকমূলক কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাসহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ যাতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারে সে লক্ষ্যে জব প্লেসমেন্টের বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করা যেতে পারে। প্রকল্পের কারিগরি ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার বর্তমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। এসব বিষয়ের আলোকে গৃহীত ব্যবস্থার তথ্যাদি আগামী ১ মাসের মধ্যে আইএমইডিকে অবহিত করতে হবে।
২০০৭ সালের জুলাইয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালের জুনে। প্রথম সংশোধনী এনে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ আরো ৩ বছর বাড়িয়ে করা হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
তারপর ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে পদ্মা সেতুর মেয়াদ দুইবার বাড়ানো হয়েছে। প্রথমবার বাড়িয়ে করা হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। দ্বিতীয়বার করা হয়, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। এবার ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হচ্ছে, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে তিনবার। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১০ লাখ ১৬ হাজার ১৭৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় দ্বিগুণ বাড়িয়ে করা হয় ২০ লাখ ৫০ হাজার ৭২০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আর তৃতীয়বার মেয়াদ বৃদ্ধি করে করা হয় ৩০ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
এই প্রকল্পের প্রধান প্রধান কাজগুলো হলো ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতু, ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন, ১২ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়া নির্মাণ এবং ২ হাজার ৬৯৩ দশমিক ২১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা।
২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি ২৪ হাজার ৫৩২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা শতাংশের হিসাবে ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ। আর বাস্তব অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ।
পদ্মা সেতুর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি সেতু বিভাগ আবেদনে বলেছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। বর্তমানে এই প্রকল্পের বাস্তব কাজ ৮৩ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট বাস্তব কাজ সমাপ্ত করতে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে এবং ১ বছর ডিফেক্ট নটিফিকেশন পিরিয়ডসহ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ অবস্থায় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালকের প্রস্তাব অনুযায়ী ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাবটি পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হলো।