পদত্যাগ করতে পারেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। সম্প্রতি দেশটিতে আবারও জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা সংকটে জর্জরিত দেশটিতে অনেকদিন ধরেই বিক্ষোভ চলছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগের অনুরোধ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তবে প্রেসিডেন্ট নিজেও পদত্যাগের চাপে রয়েছেন। কারণ শুরু থেকেই প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করছে সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, প্রেসিডেন্টের অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। কলম্বো পেজের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোতাবায়া রাজাপাকসের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্ট হাউজে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে মাহিন্দা রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভাকে জানানো হয়েছে যে, দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থতার কারণে মাহিন্দা রাজাপাকসে তার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি হয়েছেন। এদিকে দেশটিতে গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জানান, জনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে জরুরি আইন জারি করা হয়েছে। এর আগে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেই শুরু হয় বিক্ষোভ ও ধর্মঘট। বন্ধ থাকে স্কুল-কলেজ, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া ধর্মঘটের কারণে পরিবহন ব্যবস্থাও অচল হয়ে পড়ে। চলতি সপ্তাহে দেশটির অর্থমন্ত্রী জানান, গোতাবায়ে রাজাপাকসে সরকারের কাছে পাঁচ কোটি ডলারের মতো বৈদেশিক রিজার্ভ অবশিষ্ট রয়েছে। মূলত করোনা মহামারি ও তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশটির অর্থনীতিতে ধস নামে।
দেশটির ট্রেড ইউনিয়ন নেতা রবি কুমুদেশ বলেন, প্রেসিডেন্টের ভুল নীতি ও পদক্ষেপের ফলেই এমন দুঃখজনক অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই তাকে পদত্যাগ করতে হবে। শ্রীলঙ্কায় সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। নির্বাচনকে সামনে রেখে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। এটাকে তখনকার সরকার নির্বাচনী কৌশল হিসেবেই ধরে নিয়েছিল।
সে সময়ে অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারাবিরা মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮ শতাংশ করা ও অন্যান্য শুল্ক বাতিল করার বিপজ্জনক প্রতিশ্রুতির বিষয়ে একটি ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছিলেন। অর্থনৈতিক সংকটে এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রাজাপাকসের পরিবার। হিমশিম খাচ্ছেন মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসের চাহিদা মেটাতে। ঋণের জন্য শরণাপন্ন হচ্ছেন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, চীন ও ভারতসহ অন্যান্য দাতাদের কাছে। এরই মধ্যে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে দেশটি। যা ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম ঘটনা। দেশের শেয়ারবাজারও শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে।
গত ২০ বছরের মধ্যে ১২ বছরই শ্রীলঙ্কার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেছেন রাজাপাকসে পরিবারের সদস্যরা। এসময় তারা স্বৈরতন্ত্রের তকমা পেয়েছেন। এর আগে তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া তার অন্য দুই ভাই দেশটির বন্দর ও কৃষি ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করছেন। এভাবে পাকসে পরিবারের কয়েক ডজন সদস্য সরকারের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, রাজাপাকসে ক্ষমতা গ্রহণের আগেও শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক সংকটে ছিল। তারপরও নতুন সরকার বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে ঋণ নেয়। সব মিলিয়ে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দেশটির বৈদেশিক ঋণ দ্বিগুণ হয়ে যায়।