ঈদুল আজহা উপলক্ষে পরাণ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে ১০ জুলাই। ঢালিউডের সমসাময়িক সিনেমাগুলো সাধারণত এ সময়ের মধ্যে প্রেক্ষাগৃহ থেকে নেমে যায়। কিন্তু পরাণ ছুটছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। তিন সপ্তাহ পেরিয়ে এখনো দর্শকের হূদয় জয় করে যাচ্ছে। এখনো হাওয়ায় ভাসছে। সাফল্যের এ পথচলা আরো বেগবান হলো। হল সংখ্যা বেড়েছে সিনেমাটির। গতকাল থেকে ৬০টি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে তরুণ নির্মাতা রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমা। ঈদের সিনেমা হিসেবে মাত্র ১১টি হলে মুক্তি পায় পরাণ। দর্শকের দারুণ আগ্রহের সুবাদে কয়েকদিন পরই এর হলসংখ্যা বাড়ে। এরপর দ্বিতীয় সপ্তাহে সিনেমাটি পৌঁছে যায় দেশের ৫৫টি প্রেক্ষাগৃহে। বহু প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটির হাউজফুল শো গেছে। এখনো সিনেমাটির টিকিট নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি।
রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের পাঁচটি শাখায় এখনো প্রতিদিন ১৬টি প্রদর্শনী চলছে এ সিনেমার। নিকট অতীতে কোনো বাংলা সিনেমা এমন দর্শকপ্রিয়তা পায়নি বলেই মনে করছেন সিনেপ্লেক্স সংশ্লিষ্টরা। পরাণ মুক্তির এক সপ্তাহের মাথায় দৈনিক ১৮টি করে শো পেয়ে দেশীয় সিনেমার ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়ে। পরাণ নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন বলেন, এ ছবির শো বাড়ছে। এর আগে ‘দেবী’, ‘আয়নাবাজি’র ক্ষেত্রে এমন হয়েছিল। শুধু সিনেপ্লেক্সে এভাবে চললে এখান থেকে ছবির বাজেট তুলে আনা সম্ভব।
যদিও ঈদের আগেই মেজবাউর রহমান সুমনের হাওয়া সিনেমার একটি গান জনপ্রিয়তা পায়। ঈদের আমেজ শেষ হলে তুমুল হাইপ তোলে হাওয়া। ধারণা করা হচ্ছিল হাওয়া মুক্তির ফলে ভাটা পড়বে পরাণের নাম-ডাক। আপাতত তা হয়নি। বরং হাওয়া মুক্তির দিনে হল আরো বাড়ল। পরাণ যেমন প্রশংসিত হচ্ছে, হল বাড়ছে, তেমনি আলোচনায় এনেছে বিদ্যা সিনহা মিম ও শরিফুল রাজকে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী মিম যেন পরাণ দিয়ে নতুন করে সৌরভ ছড়াচ্ছেন। সব জায়গা থেকে আসছে প্রশংসা।
পরাণের সাফল্য নিয়ে মিম বলেন, মহামারীর ফলে লম্বা একটা গ্যাপ গেছে। দুই বছর খুবই মন খারাপ ছিল। আমার কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। দুই বছর পর একটা সিনেমা এল এবং দর্শক সাদরে গ্রহণ করে নিল, নিঃসন্দেহে বিষয়টা ভালো লাগার। অনেকে মনে করছে, পরাণ মিমের ক্যারিয়ারটাই ঘুরিয়ে দেবে। মিম বললেন, যে যেভাবে ভাবে। আমার শুধু ভালো লাগছে। আজকেও অনেকে ফোন দিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন টিকিট পাচ্ছেন না। আগে থেকে টিকিট কাটতে হচ্ছে সেটা জানেন না। এমন অভিযোগ শুনলে কেমন যেন লাগে। একবার মনে হয় আমি তো টিকিট কাউন্টারের কেউ না। আবার মনে হয়, তারা সিনেমা দেখতে যাচ্ছে এবং টিকিট না পেয়ে আহত মনে আমাকে অভিযোগ জানাচ্ছে, এটাও সিনেমার জন্য বড় প্রাপ্তি। বিষয়টা মজা লাগে, আবার টিকিট না পেয়ে ফিরে যাওয়াদের জন্য মায়াও লাগে।
একই সঙ্গে সহশিল্পী শরিফুল রাজকে নিয়ে মিম বলেন, পরাণ সিনেমার রোমানকে নিয়ে কিছু বলতে চাই, যার আসল নাম শরিফুল রাজ। সিনেমা করার আগে রাজের সঙ্গে সেভাবে পরিচয় ছিল না। রিহার্সেলের সময় ফার্স্ট দেখা। অল্প সময়েই এমন মনে হচ্ছিল যেন তার সঙ্গে অনেক দিনের পরিচয়। হাসি, ঠাট্টার সঙ্গে রিহার্সেল হয়ে উঠেছিল আনন্দময়। রাজ খুব সাদাসিধে একটা ছেলে, তবে ভেতরে ভেতরে বেশ চঞ্চল। রাজের মনটা অনেক ভালো। রাজ অনেক স্ট্রাগল করে আজকের এ অবস্থানে এসেছে। রাজ যখন আরো বড় কিছু হবে, তখনো তার মধ্যে সেই সিমপ্লিসিটিটা থাকবে বলে আমি আশা করি, যা কিনা এখন আছে। কাজের সময় রাজ খুবই সিরিয়াস, মাথায় নিজের ক্যারেক্টার ছাড়া আর কিছুই থাকে না। অন্য সবকিছু ভুলে যায়। নতুনদের মধ্যে এটা খুব কম দেখা যায়। কাজের সময় একবারও মনে হয়নি, পরাণ রাজের তিন নম্বর সিনেমা। সবসময়ই মনে হয়েছে, একজন এক্সপেরিয়েন্সড অভিনেতার সঙ্গে কাজ করছি।
পরাণের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ, বিদ্যা সিনহা মিম ও ইয়াশ রোহান। এছাড়া আছেন শহীদুজ্জামান সেলিম, শিল্পী সরকার অপু, রোজি সিদ্দিকী, রাশেদ মামুন অপু প্রমুখ।