কয়েক দশক ধরে আফ্রিকার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করে তুলতে প্রচেষ্টা চলছে। তবু কৃষি, খনন ও প্রাকৃতিক সম্পদ রফতানি নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি অঞ্চলটি। এ অবস্থায় জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, আফ্রিকার দেশগুলোকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য পণ্য রফতানির নির্ভরতা ভাঙতে হবে। বরং দেশগুলোকে উচ্চমূল্যের পরিষেবার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
অনেকগুলো মূল পণ্যের মূল্য এক বছর ধরে আকাশচুম্বী। এটি আফ্রিকার রফতানিনির্ভর অর্থনীতিতে সুবিধা নিয়ে এসেছে। তবে এরই মধ্যে পণ্যমূল্য কমতে শুরু করেছে। ফলে দেশগুলোর অর্থনীতিও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ইন আফ্রিকা রিপোর্ট ২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক জাতিসংঘ সম্মেলন (আঙ্কটাড) এ তথ্য জানিয়েছে। অন্য খাতের পাশাপাশি প্রযুক্তি ও আর্থিক পরিষেবাগুলোয় বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য মহাদেশজুড়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আঙ্কটাড। মহাদেশের ৫৪টি দেশের মধ্যে ৪৫টি তাদের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে কয়েক দশক ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এখনো দেশগুলো পণ্য রফতানিনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্বালানি তেল, গ্যাস, খনিজ, খাদ্য ও কৃষি কাঁচামালের মতো পণ্য রফতানির ওপর নির্ভরশীলতা নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এ রাজস্ব অনেক বেশি অস্থিরতার মধ্যে থাকে। বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও প্রকৃতির সীমাবদ্ধতার কারণে এমনটা হয়। এজন্য প্রতিবেদনে ‘সম্পদ অভিশাপ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে রফতানি আয়ে অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা তুলে ধরা হয়েছে। আঙ্কটাড জানিয়েছে, এ ধরনের দুর্বলতা ভূরাজনৈতিক, কভিড-১৯ মহামারী ও ২০০৮-০৯ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের মতো ঘটনাগুলোর মাধ্যমে ত্বরান্বিত হয়।
যদিও বেশ কয়েকটি আফ্রিকার দেশ তাদের পরিষেবা খাতগুলোকে বিস্তৃত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, দেশগুলো মূলত পরিবহন ও পর্যটনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এ খাত মহাদেশটির পরিষেবা রফতানির দুই-তৃতীয়াংশ। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি ও আর্থিক পরিষেবাগুলো অঞ্চলটির পরিষেবা রফতানির মাত্র ২০ শতাংশ। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোকে মূল ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আফ্রিকার দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা এবং ইউক্রেন সংঘাতের কারণে সৃষ্ট খাদ্য সংকটের মতো অর্থনৈতিক ধাক্কাগুলো আরো ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারে।
আঙ্কটাডের স্বল্পোন্নত দেশ ও বিশেষ কর্মসূচির আফ্রিকা বিভাগের পরিচালক পল আকিওমি বলেন, আমাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনটি পরিষেবা খাতের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছে। বিশেষ করে উচ্চদক্ষ এবং উচ্চজ্ঞানসম্পন্ন উদ্যোগ যেমন ফিনটেক, স্বাস্থ্যসেবা প্রযুক্তি ও লজিস্টিকসের পাশাপাশি কৃষি ও জ্বালানিতে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। নতুন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোয় বিনিয়োগ দেশগুলোর বিদ্যমান পণ্য রফতানি খাতের উন্নতিতেও অবদান রাখবে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি অনেক দেশের উন্নয়নের গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারে। পাশাপাশি দেশগুলোকে পণ্য নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করে তুলতে পারে।
মরিশাসের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, এটি কৃষিনির্ভর একটি অর্থনীতি ছিল। দেশটির প্রধান রফতানি পণ্য ছিল আখ। তবে ২০ বছরে ভারত মহাসাগরের দ্বীপটি অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে। সম্প্রতি আর্থিক পরিষেবা ও ফিনটেক খাতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ পেয়েছে। পল আকিওমি উল্লেখ করেছেন কীভাবে নাইজেরিয়া ও কেনিয়া যথাক্রমে ফিনটেক ও হেলথ টেক স্টার্টআপের প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।