কসমেটিকস প্রস্তুতকারক
প্রতিষ্ঠান হ্যানোলাক্স কোম্পানি এক কোটি ২৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করায় মানসিক হতাশাগ্রস্ত
থেকে গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গাজী আনিস। আজ সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যাডমিন্টন
মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
পরে আশপাশের লোকজন
এসে আগুন নেভায় এবং পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত তাঁকে শেখ হাসিনা জাতীয়
বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা
জানান, হঠাৎ করেই গাজী আনিস নিজের গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন।
জানা গেছে, তিনি হ্যানোলাক্স কোম্পানির কাছে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পান। এই টাকা না পাওয়ায়
তিনি নিজের গায়ে নিজে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
শাহবাগ থানার
উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম হোসেন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে
আমরা জানতে পারছি এই আত্মহত্যা চেষ্টাকারীর নাম গাজী আনিস। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া
জেলার কুমারখালী এলাকায়। হ্যানোলাক্স কোম্পানির কাছে তিনি এক কোটি ২৬ লাখ টাকা পান।
দীর্ঘদিন ধরে এই টাকা না দেওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।’
গাজী আনিসের ভাই
গাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণ আগে শুনছি।’ তাঁর ভাই হ্যানোলাক্স কোম্পানির কাছে
এক কোটি ২৬ লাখ টাকা পাবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আমার ভাই
হ্যানোলাক্স কোম্পানির কাছে টাকা পাবে এটা সত্যি। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি টাকা ওঠানোর জন্য
চেষ্টা করছেন।’
এদিকে গত ৩১ মে
হ্যানোলাক্স কোম্পানির কাছ থেকে টাকা আদায়ে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন গাজী আনিস।
সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং
তাঁর স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাঁদের সঙ্গে আনিসের সখ্য
এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। কুষ্টিয়া থেকে প্রতিমাসে নিজের প্রয়োজনে ঢাকা এলে তাঁদের সঙ্গে
তাঁর সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হতো এবং উপহার বিনিময় ও ভালো রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া
করতেন। বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতেও যেতেন। তিনি হ্যানোলাক্স গ্রুপের মালিক মো. নুরুল আমিন
এবং ফাতেমা আমিনের সঙ্গে নিজ খরচে দেশের বাইরেও একাধিকবার বেড়াতে গেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে কলকাতার হোটেল বালাজীতে একই সঙ্গে অবস্থানকালে হ্যানোলাক্স
গ্রুপের মালিক বিনিয়োগ এবং যথেষ্ট লাভবান হওয়ার সুযোগ আছে এমন প্রস্তাব দেন। প্রথমে
রাজি না হলেও পরবর্তীতে তিনি রাজি হন এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন।
পরবর্তীতে তাঁদের পীড়াপীড়িতে আরও ছাব্বিশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন (অধিকাংশ টাকা ঋণ হিসেবে
আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে নেওয়া)। বিনিয়োগের সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান
এবং বিশ্বাসের কারণে এবং তাদের অনুরোধে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তি করা হয়নি। তবে প্রাথমিক
চুক্তি করা হয়েছে। বিনিয়োগ পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য
বারবার অনুরোধ করলেও তারা গড়িমসি করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা প্রতিমাসে যে লভ্যাংশ
প্রদান করতেন সেটাও বন্ধ করে দেন এবং কয়েকবার হ্যানোলাক্স গ্রুপের মালিক তাদের লোকজন
দ্বারা হেনস্তা ও ব্ল্যাকমেল করেন। বর্তমানে লভ্যাংশসহ ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকার
অধিক। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া আমলি আদালতে দুইটি মামলা দায়ের করেছেন, যা বিচারাধীন রয়েছে
বলে উল্লেখ করেছিলেন এই ছাত্রলীগ নেতা।