Logo
শিরোনাম

প্রস্তুত হচ্ছে গাবতলীর পশুর হাট

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২৮ জুন ২০২২ | হালনাগাদ:রবিবার ১৯ নভেম্বর ২০২৩ | ৮৮৫জন দেখেছেন
নিউজ পোস্ট ডেস্ক

Image

সিলেট-সুনামগঞ্জ আর উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এমন অবস্থায় দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের বড় এ ধর্মীয় উৎসব ঘিরে তাই কোরবানির পশুর হাট সাজাতে ব্যস্ত সময় কাটছে ইজারাদারদের। গত রোজার ঈদের পর থেকে গরুর মাংসের দাম, পশুখাদ্যের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সবমিলিয়ে এবারও শেষপর্যায়ে পশুর হাট জমার আশা করছেন বিক্রেতা ও ইজারাদাররা। ঈদ উপলক্ষে রাজধানীতে এবার ১৯টি পশুর হাট বসছে। ঈদের বাকি এখনো দুই সপ্তাহের বেশি। হাটে কোরবানির পশু না এলেও সাজগোজের প্রস্তুতি চলছে।

গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলছে হাটের বর্ধিতাংশে প্যান্ডেলের বাঁশ লাগানোর কাজ। কোথাও কোথাও লাইট লাগানোর কাজ চলছে। নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। বাঁশ তৈরি হচ্ছে গরু রাখার শেড। তবে শেডের ওপরে এখনো ত্রিপল বসানোর কাজ শুরু হয়নি। অনেক জায়গা থেকে অপ্রয়োজনীয় কাদামাটি অপসারণ করা হচ্ছে। চলছে ওয়াচটাওয়ার, মোবাইল ব্যাংকিং বুথ নির্মাণের কাজও। ব্যাপারীদের কাছে এখনো জায়গা ভাড়া দিতে পারেননি ইট, বালুর দোকানের মালিকরা। বন্যা ও নির্মাণসামগ্রীর বাড়তি দামের কারণে এখনো অবিক্রিত রয়েছে তাদের অনেক পণ্য। এ কারণে সেখানে পশু রাখার শেড তৈরি করা যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাটের নির্মাণকাজ শেষ হতে আরও তিন-চারদিন সময় লাগবে।

সেখানে রসুল নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কাজ মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে বলা যায়। এখনো অনেকে জায়গা হাটের জন্য ছাড়েননি। তাই প্যান্ডেল-শেড নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে হাটের ভেতরে বাইরে ভাঙাচোরা রাস্তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে বৃষ্টি হলে এবারও হাঁটু কাদায় নেমে কেনাকাটা করতে হবে ক্রেতাদের। করোনার সংক্রমণ বাড়লেও জ্বর মাপা, সাবান কিংবা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা দায়সারা উত্তর দিয়েছেন।

ঈদের ১০ থেকে ১৫ দিন আগে থেকে অস্থায়ী পশুর হাট সাজানোর প্রস্তুতি নেন ইজারাদাররা। গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটের আশপাশে রয়েছে ৫০০টিরও বেশি ইট ও বালুর দোকান। স্থানীয়ভাবে সেগুলোকে বলা হয় গদি। কোরবানির হাট বসলে এসব গদি পশু ব্যাপারীদের কাছে ভাড়া দেন মালিকরা। জানা গেছে, স্থায়ী হাট সংলগ্ন জায়গা বেশিরভাগ গদির মালিক ভাড়া দিয়ে ফেলেছেন। বেশিরভাগ গদি বন্ধ থাকলেও তাদের নির্মাণসামগ্রী এখনো পড়ে আছে। তবে স্থায়ী হাট থেকে ৫০০ গজ দূরে গদির মালিকরা এখনো ব্যাপারীর দেখা পাননি বলে জানিয়েছেন।

নাহিয়ান ট্রেডার্সের কর্মচারী আক্কাস  বলেন, এখনো ব্যাপারীরা আসেননি। আমাদের অনেক নির্মাণসামগ্রী পড়েও আছে। ব্যাপারীরা এলেও জায়গা ছাড়তে পারবো না। ইট আছে এগুলো বিক্রি করে তারপর জায়গা ভাড়া দিতে হবে। ঈদের আগে চারদিন, আর ঈদের দিনের জন্য জায়গা ভাড়া দিই। তবে জায়গা পরিষ্কার করতে ঈদের পর আরও তিন চারদিন লাগে। সব মিলিয়ে সাত থেকে আটদিন কিছু রাখা যায় না। এ গদির সামনে হাসিল ঘর বসে। সামান্য একটু জায়গা থাকে সেটা ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া হয় তিন/চারদিনের জন্য। তবে নির্মাণসামগ্রী স্থানান্তর ও ঈদের পর পরিষ্কার-পরিচ্ছনতায় অনেক টাকা চলে যায়। সামনের দিকে যাদের গদি তারা আরও বেশি টাকায় ভাড়া দেন।

একাধিক গদির মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থায়ী হাট থেকে দূরে থাকা দোকানগুলোর জায়গা এখনো ভাড়া হয়নি। ব্যাপারীরা কথা বললেও ভাড়া নিচ্ছেন না। এখনো অনেক নির্মাণসামগ্রী অবিক্রিত পড়ে আছে।

স্থায়ী হাট সংলগ্ন আনোয়ার ট্রেডার্সের ম্যানেজার নাসির জানান, তাদের জায়গা তিনদিন আগে ভাড়া হয়ে গেছে। আগামী সপ্তাহের পর থেকে পশু আশা শুরু করবে। হাটের কাছাকাছি গদির জায়গাগুলো স্থানভেদে ৮০ হাজার থেকে লাখ টাকার ওপরে ভাড়া হয় বলেও জানান তিনি। গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সানোয়ার হোসেন বলেন, শেড নির্মাণের কাজ চলছে। ভেতরে রাস্তা, হাসিল কাউন্টার তৈরির কাজ করছি। এবার ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের জন্য ৫০টি হাসিল ঘর তৈরি করা হবে, হাটে দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবেন। জাল টাকা শনাক্তের যন্ত্র বসানো হবে। পশু চিকিৎসক ও ব্যবসায়ীদের দেখতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও রাখা হবে। হাটের সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে গাফিলতির সুযোগ নেই। এবারও ঈদের আগে পরের পাঁচদিন পাঁচ শতাংশ হারে হাসিল আদায় করা হবে।

শেষ সময়ে জমবে হাট, চাহিদা থাকবে মাঝারি গরুর:

বন্যা ও পশু খাদ্যের চড়া দামের কারণে এবার পশুর দাম একটু বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে গতবারের মতো এবারও বড় গরু কম বিক্রি হওয়ার আশা করছেন তারা। তবে কোরবানির বাজারকে খুব জটিল উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাটের গতি-প্রকৃতি খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়।

ফরিদপুরের ব্যাপারী শাহিন আহমেদ। দীর্ঘদিন ধরেই গাবতলী হাটে কোরবানির পশু আনেন।  তিনি বলেন, কোরবানির বেচাকেনা নিয়ে কোনো কিছুই আগে বলা যায় না। কেমন পশু উঠবে তা আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। কোনো পশু কাস্টমাররা ধরলে তার দাম বেড়ে যায় কয়েক হাজার টাকা আর কেউ দাম না বললে, পশুর দাম কমে যায়। গরুর খাবার দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। ভূষির দাম গত বছর ছিল ৪০ টাকা এবছর সেটা ৬০ টাকা। এরকম খড়, ঘাস সবকিছুর দাম বেড়েছে। সে হিসাবে পশুর দাম বাড়বে, ক্রেতারা অনেক দেখে শুনে পশু কিনবে। সেক্ষেত্রে এবারও শেষ সময়ে পশুর হাট জমবে।

ভোলার থেকে আসা ব্যাপারী বাদশা বলেন, এবার পশুখাদ্যের দাম চড়া। জ্বালানি তেলের দামও বাড়তি অন্যবারের তুলনায় এবার পশুর দাম বেশি হবে। তিনি বলেন, হাটের জায়গা ভাড়া-যাতায়াত কর্মচারীদের বেতন আছে। এখন তিন মণের গরুর কিনতে হচ্ছে এক লাখ টাকায়। কসাইদের কাছে বিক্রি করছি এক লাখ ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। ঈদের সময় এমন বা এর চেয়ে সামান্য বেশি হবে দাম। বড় গরু পালনে বেশি খরচ লাগে। ঢাকায় আনতে খরচ বেশি। এজন্য এবারও বড় গরু কম বিক্রি হতে পারে। ঢাকায় তিন-চারজন মিলে একটা গরু দেয়। তাদের বাজেট থাকে ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখের আশপাশে। এ টাকায় মাঝারি গরু পাওয়া যায়, এবারও এমন গরুর চাহিদা বেশি থাকবে।


আরও খবর